প্রেমের গল্প - এক্স গার্লফ্রেন্ড ইজ বেষ্ট গার্লফ্রেন্ড
আমি শান্ত, না না আমি শান্ত মানে আমার
নাম শান্ত, কিন্তু আমার নামের সাথে আমার চরিত্রের কোন মিল হয় না, আমি একেবারেই
অশান্ত একটি ছেলে। সারাদিন দুষ্টামি করেই আমার দিন কাটে, বন্দুদের সাথে হইচই করেই
কাটিয়ে দেই সময়।
কলেজ পড়ুয়া ছাত্র আমি, এবার ইন্টার ২য়
বর্ষের ব্যানিজিক শাখার। পড়ালেখায় অনেক ভাল বলেই আমার দুষ্টামি গুলো সবাই মেনে
নেয়। তখন আমি সিলেট সরকারী কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউট এ অধ্যয়ন করছি। বাসা থেকে
সাইকেলে করেই কলেজ যেতাম, আমাদের পরিবার ছিল মধ্যবিত্ত পরিবার, বাবা একমাত্র ব্যাক্তি
ছিল যিনি আয় করতেন, বাবা সরকারী কর্মকর্তা ছিলেন, তাই আমরা সরকারী কোয়াটার এ
থাকতাম। আমার পাশের বাসার একটি মেয়েছিল নাম সুলতানা। আমাদের কলেজেই পড়ত, বলা
বাহুল্য আমার ক্লাসেই পড়ত সে, আমার রোল ছিল ০৯০৮০৩, আর তার রোল ছিল ০৯০৮০৬। ০৯
বলতে ২০০৯ সালের ব্যাচ কে বোঝানো হত, আর ০৮ ছিল কক্ষ নম্বর, এবং ০৩ হচ্ছে রোল,
মানে ক্লাসে আমি ৩য় ছিলাম, সে ছিল ৬ষ্ঠ।
সুলতানার সাথে আমার তেমন কথা হয়না, মানে
আমরা কেউ এখন পর্যন্ত্য কারও সাথে কথাই বলিনি, আমি সবসময় একটু ফ্যাশন প্রিয় ছিলাম,
কলেজের অনেকেই শার্ট আর জিন্স পড়েযেত, আবার অনেকেই টিশার্ট, গেঞ্জী আর জিন্স পড়ে
যেতে পছন্দ করত, আমি সবসময় টিশার্ট এর উপরে শার্ট পড়তাম এবং বোতাম গুলো খুলে
রাখতাম, এভাবে সাইকেলে করে যেতে ভালই লাগে। দুইমাস পড়েই আব্বুর থেকে বায়না করে
বাইক কিনলাম। বাইক নিয়ে যেদিন কলেজে প্রথম যাই মনটা অনেক ফুরফুরা ছিল, কি যে খুশি
ছিল বলে বুঝাতে পারবনা।
আমাদের প্রতিদিন কম্পিউটার প্রাকটিক্যাল
ক্লাস হত, আমাদের উপরের যারা সিনিয়র ছাত্র-ছাত্রী ছিল মানে যারা ২য়বর্ষে এক্সামে
খারাপ করেছিল তারাই আবার আমাদের সাথে নতুন করে ক্লাস করছে। তারা সারাদিন কম্পিউটার
ক্লাসে বসে থাকত আর আমরা যারা ১ম বর্ষ থেকে ২য় বর্ষে উঠেছি, তারা আমাদের কে
কম্পিউটার ক্লাসে বস্তেই দিত্না, সবার সময় ছিল ২৫মিনিট, কিন্তু তারা ১ঘন্টা করে
ক্লাস করত, স্যার বা মেডাম কিছুই বলতনা, আমাদের যাদের বাসায় কম্পিউটার আছে তারা
বাসাতেই স্যার বা মেডামদের থেকে নোট নিয়ে গিয়ে শিখতাম। কিন্তু সুলতানার কম্পিউটার
ছিল না বাসায়, তার বাবাও আমার বাবার মত একই ডিপার্টমেন্ট এ জব করত কিন্তু আমার
আব্বুর থেকে বেতন কম ছিল, ওভাবে ছিল ঠিক তা নয়। কিন্তু সুলতানা আবার বাড়তি খরচ করা
পছন্দ করত না, কলেজে সে টাউন বাসে করেই আসত, যেহেতু কলেজে কম্পিউটার আছে তাই সে কিনে
নি আর, অনেকক্ষণ লাইনে দাড়িয়ে থেকে চান্স পেলেই সে কম্পিউটার এ কাজ করার সুযোগ
পায়, সেদিন আমি আমার বন্দুদের নিয়ে কম্পিউটার ক্লাসের সামনে দিয়ে যাচ্চিলাম, ভিতরে
কারও ঝগড়ার আওয়াজ শুনেই ভিতরে গেলাম, দেখি সুলতানা আর একটি মেয়ে দাড়িয়ে তর্ক করছে,
মেয়েটি আমাদের সিনিয়র হয়, আগের বছরের ছাত্রী, এক্সাম খারাপ করায় এবারও আমাদের সাথে
পড়ছে, সুলতানা আমার পাশের বাসার তাই দাঁড়িয়ে দেখছিলাম সে কি করে, সিনিয়র মেয়েটির
নাম ছিল সাবিহা, একপর্যায়ে তাদের ভিতরে ঝগড়া শুরু হয়ে যায়, সবাই খুব মজা পাচ্ছে এ
নিয়ে, কলেজে কোন মেয়ে এভাবে ঝগড়া করছে সবার কাছেই হাসির মনে হচ্ছে বেপারটা।১ম
বর্ষের এক মেয়ে কে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে, সে বলল, ভাইয়াঃ সুলতানা আপু আগে
রুমে ঢুকে পাশের কম্পিউটার খালে দেখে সেখানে বসেন, তার নোট করা প্রায়ই শেষ, তখনি
তিনি প্রিন্ট করার কাগজ আনতে টেবিলের পাশে গেলে, সাবিহা আপু এসে সেখানে বসে তার
ডকুমেন্ট ডিলেট করে সে তার নোট তৈরি করতে বসে, এনিয়েই সুলতানা আপুর সাথে তার
কথাকাটাকাটি শুরু হয়, মেয়েতি আপুকে একটা থাপ্পড়ও দিয়েছে, কিন্তু আপু এখন পর্যন্ত্য
তাকে কোন খারাপ ভাষায় কিছু বলেনি, শুধু বলেছে তাকে ৫মিনিট সময় দিতে সে পুনরায় আবার
ডকুমেন্ট টি রিসাইকেল বিন থেকে রিস্টোর করে প্রিন্ট করেই চলে যাবে, কিন্তু সাবিহা
আপু রিসাইকেল বিন থেকেও টা রিমোভ করে দিয়েছে।
আমি বুঝলাম এটা ইচ্ছা কৃত ভাবেই করেছে,
আসলে সিনিয়র হওয়াতে এরা জুনিয়র দের সাথে র্যাগিং করে, সুলতানাকে সহজ সরল পেয়ে আজ
ওকে টার্গেট করেছে।
সাবিহার বয়ফ্রেন্ড রাসেল এলো একটু পরে
আমাদের সাথেই পড়ে, সেও আমাদের সিনিয়র।
আমি আবার সবাইকে তুই করেই বলি আমাদের
ক্লাসের সে সিনিয়র আর জুনিয়র যেই হওক, সবাইকে বন্দু ভাবি, তবে সবার সাথে কথা
বলিনা, বেশির ভাগ সিনিয়র দের সাথে।
রাসেল এসে সুলতানাকে বকাবকি করতে শুরু করেদিল,
একপর্যায়ে গায়ে হাত দিয়ে ধাক্কা দিল, সবাই মজাপেলেও আমি ঠিক থাকতে পারলাম না, আমার
প্রতিবেশি তারউপর সহপাঠী ছিল, আমি দুপা সামনে গিয়েই রাসেল এর গালে অনেক জোড়ে একটা
থাপ্পড় বসিয়ে দিলাম, আর সাবিহাকে বললাম, সুলতানার কাছে মাফ চাইতে, ইতিমধ্যো আমার
বন্দুরাও আমার পাশে এসে দাড়িয়েছে তাই সাবিহা ভয় পেয়ে সুলতানার কাছে মাফ চেয়ে রাসেল
কে টানতে টানতে রুমের বাহিরে চলে যায়।
সুলতানা কে বললাম, বাসায় গিয়ে আমার থেকে
একটা কপি নিয়ে নিও তুমি, এই প্রথম ওর সাথে কথা বলা আমার, সে মাথা ঝাকিয়ে সম্মতি
জানাল শুধু।
এরপরে আমি বাহিরে চলে আসলাম, আরেকটা
ক্লাস বাকি ছিল আমাদের তাই সবাই ক্লাসে গিয়ে বসলাম, সুলতানা এল একটু পড়ে। ক্লাসে
স্যার লেকচার দিচ্ছিলেন আমি শুনছিলাম, হঠাৎ আমার বন্দু উৎস আমাকে কনুই দিয়ে ধাক্কা
দিল, আমি বললাম কি ?
সে আমাকে চোখ দিয়ে ইশারা করে সুলতানার
দিকে তাকাতে বলল, আমি তাকাতেই দেখি সুলতানা আমার দিকে তাকিয়ে আছে, আমি তাকাতেই
অন্য দিকে চোখ ফেরাল সে, আরও কয়েকবার আমি তার দিকে তাকালাম, প্রতিবারই আমি তার
দিকে তাকিয়ে আছি আর সে আমার তাকানো দেখলেই অন্যদিকে তাকিয়ে থাকে।
ক্লাসে শেষে সবাই যার যার বাসায় রওনা
দিল, আমিও আমার বাইকে চাবি দিয়ে স্টার্ট দিয়ে গেটের কাছে আসতেই দেখি, সাবিহা আর
তার বয়ফ্রেন্ড দাড়িয়ে আছে পাশের ক্যান্টিনে, সুলতানাও আছে তবে তাদের থেকে একটু
দূরে, সাবিহাদের সাথে আরও ৩টি ছেলে মানে সিনিয়র আদু ভাইয়েরা, বুঝতে পারছিলাম কি
ঘটবে।
সুলতানার দৃষ্টি আকষর্ন করার জন্য বাইকের
হর্ন দিলাম, আমাকে দেখে যেন সুলতানা খুশি হল, ঠোটের কোনায় হাসি দেখতে পেয়েছিলাম
তার, বাইক নিয়ে তার সামনে ব্রেক করে বললাম, লিফট লাগবে নাকি ?
২য় পর্বঃ
সুলতানাঃ না লিফট লাগবেনা, আপনি শুধু
আমাকে একটা রিক্সা ডেকে দেন, আর আমার সাথে একটু থাকেন।
আমিঃ কেন ওদেরকে ভয় হচ্ছে বুঝি?
সুলতানাঃ আরেহ না, ওদের নিয়ে মাথা
ঘামাইনা, সমস্যা হল বাসায় জানতে পারলে আমাকে বকা সুনতে হবে তাই।
আমিঃ ওকে ঠিক আছে, আমার বাইকে উঠে বস, আর
এখন কোন রিক্সা পাবেনা।
সুলতানাঃ আপনার কাজ থাকলে চলে যেতে
পারেন, নয়ত ২মিনিট দাড়িয়ে থাকেন ?
আমিঃ দাড়িয়ে থেকে কি কোন লাভ আছে নাকি ?
সুলতানাঃ কিসের লাভ আবার, আমি আপনার
ক্লাসমিট আর প্রতিবেশি তাইনা, আমাকে নাহয় আরেকটা উপকার করলেন।
আমি দেখলাম সাবিহা আর রাসেল এদিকেই
তাকিয়ে আছে, একটু পরে ওরা এদিকে আসতেই আমি সুলতানাকে বললাম দেরি করনা উঠেবস,
প্লিজ।
সুলতানাও তাদের দেখে বাইকে উঠে বসে, বাইক
স্টাট দিয়েই রাসেল এর সামনে ব্রেক করলাম আমি, রাসেল এভাবে আমাকে আসতে দেখে একটু
বিচলিত হল, ভয় বলাযায়, কারন ক্লাসে আমার বন্দুর সংখ্যা কম নয়, আর আমার গায়ে হাত
তোলা বা মাকে কেউ কিছু বললে সেটার রিয়েক্ট অনেক ভয়াবহ হয়, এটা সবাই যানে।
রাসেল কে বললাম, এটা মেয়েদের বেপার,
ওদেরকেই সমাধান করতে দেয়া ভাল, আর সাবিহা ওকে আঘাত করেছে ও নয়, আজকের পরে যদি
এধরনের কোন কাজ করিস, আর কলেজ শেষে যদি মনে করিস একা রাস্তায় দাড় করিয়ে কিছু করবি,
তো সেটা আমি আমার ব্যাক্তিগত সমস্যা হিসেবেই মনে করব, তো বুঝছিস তো কি করাতে হবে
এখন তোর। সাবিহাকে বললাম, পড়াশুনায় মন দেন, জীবনে উন্নতি করতে পারবেন, আপনার বড়
ভাই আবার আমার এলাকায় আসা যাওয়া করে, আপনার এই নোংরা আচরনের কথা তার কানে পৌছে
দিতে আমার ১মিনিটও লাগবেনা।
এরপর বাইক নিয়ে চলে আসলাম, কোয়াটার এর
কাছে আসতেই সুলতানা বাইক থেকে নেমে গেল,
আমিঃ কি ব্যাপার বাসা তো আরও দূরে এখানে
নামলে যে ?
সুলতানাঃ যে কেউ দেখে ফেলবে, তাই।
আমিঃ কেউ দেখলে তো আমার সমস্যা হবে তোমার
তো হবার কথা নয়।
সুলতানাঃ মানে, আপনার আবার কি হবে,
আপনিতো ছেলে।
আমিঃ সেটাই এত সুন্দর একটা ছেলে, যদি এমন
মেয়েকে বাইকের পিছনে বসিয়ে বাসায় পৌছে দেয়, লোকে কি ভাববে বল।
সুলতানাঃ এমন মেয়ে মানে কি ? আমি কেমন
মেয়ে ?
আমিঃ এই গেঁয়ো টাইপের আরকি।
সুলতানা আমার কথা শুনে ব্যাগ দিয়েই আমাকে
একটা বাড়ি মারে।
বাইক স্টার্ট দেয়াই ছিল ব্যাগের আঘাত
পাওয়ার আগেই বাইক ছু্টিয়ে চলে গেলাম।
বাসায় এসে রুমে ঢুকেই কম্পিউটার নোট টা
নিয়ে আবার নিচে নামলাম, দেখি সুলতানা মাত্র তাদের ফ্ল্যাটের সিঁড়িতে উঠতেছে, ওর
হাতে নোট টা দরিয়ে দিয়ে দৌড়ে আবার বাসায় চলে আসলাম। ও আমাদের ফ্ল্যাটের অপজিট
ফ্লাটেই থাকে।
ওর বারান্দা আর আমার বারান্দা মুখোমুখি।
ফ্রেশ হয়ে খাওয়া-দাওয়া করে বিছানায় বসে
কমিক্স বই পড়ছিলাম, আম্মু এল চা নিয়ে। আমি আবার দুপুরে চা খেতে পছন্দ করি।
আম্মুঃ শান্ত কেমন আছিস বাবা ?
আমাকে আম্মু যদি কন বেপারে জিজ্ঞেস করে,
তার আগে সবসময় বলে আমি কেমন আছি, তাই বুঝতে পারলাম কিছু বলবে আম্মু।
আমিঃ ভাল আছি, আসল কথা বলে ফেল আম্মু।
আম্মুঃ পাশের ফ্ল্যাটের নজরুল ভাই ইয়ের
মেয়েকে দেখলাম তোর সাথে আজ বাইকে, কিছু একটা চলছে নাকি তোদের মধ্য।
আমিঃ কি যে আবোল তাবোল বল না আম্মু তুমি,
আর ওই মেয়েকে আমার বাইকে কবে দেখলে তুমি, ওর দিকে তো আমি ফিরেও তাকাই না, ক্ষেত
মেয়ে একটা।
আম্মুঃ আমি না তোর ছোট মামা দেখেছেন
আজকে, কলেজ থেকে আসার পথে, তোরা দুজন নাকি.......
আমিঃ আম্মুকে থামিয়ে দিয়ে, ব্যস আর বলতে
হবে না, বুঝার বাকি নেই আমার, আম্মু তুমি বুঝতে চাইছনা কেন, ছোট মামা বিয়ে করতে
চায়, কতবার তো বললাম তোমাকে, আবার তার সাথে একটি মেয়ের প্রেম আছে তোমাকে গতবার ছবি
তুলে দেখালাম না, ভূলে গেলে, ওই যে পার্কে গিয়ে মামাকে দেখলাম মেয়েটির হাত ধরে কথা
বলছে, তারপর ছবি তুলে তোমাকে দেখালাম, আসলে মামা নিজের বিয়ের কথা তোমাদের বলতে
চায়, তাই নানা রকম ফন্দি করে, এবার আমাকে নিয়ে মিথ্যা বানিয়ে বলছে আম্মু।
আম্মুঃ হুম্ম, ঠিক বলেছিস, তোর আব্বুও
বাজার থেকে আসার সময় দেখেছে একটি মেয়ের সাথে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফুচকা খাচ্ছে, আমাকে
বলছে বাসায় এসে, কিন্তু আমি মনে করেছি বন্দু হবে হয়ত, আজ আসুক ওর একদিন কি আমার,
নিজের ভাগিনার নামে কেউ বানিয়ে বানিয়ে একথা বলে।
আমার ছোট মামা, প্রেম করছে ৪বছর হল,
কিন্তু বিয়ের কথা উঠলেই আব্বু আপত্তি করেন, আব্বুর কথা আগে নিজে একটা জব কর তারপর
বিয়ে, কিন্তু এই যুগে ভাল জব কি আর পাওয়া যায় নাকি, জব খুঁজতে খুঁজতে বেচারা
বিরক্ত, ২মাস আগেই একটা জবে জয়েন করেছে, আর এখনি বিয়ে, আব্বু বলছে একবছর পরে বিয়ে
দিবে, সেটা নিয়ে বেচারা মন খারাপ, আর বান্দবী তো তাকে প্রতিদিন বকার উপরেই রাখে।
তাই মামার কথা মিথ্যা বানিয়ে বললাম যেন আম্মু বিশ্বাস করে আমার কথা।
আম্মু আমার কথা শুনে আর কিছু বলল না,
আম্মু চলে যেতেই, খুশিতে লাফ দিতেই চায়ের
কাপটা হাত থেকে পরে ভেঙে গেল, আম্মু হয়ত শুনতে পারেনি, তাই ভাঙা কাপের টুকরা
বারান্দা দিয়ে ফেলে দিলাম।
পড়বি তো পর, গিয়ে পড়েছে সুলতানার সখের
বাগানের গাছের উপর,
৩য় পর্ব
এমনিতেই নরম ফুলের ডাল, ব্যস ভেঙে গেছে
কিছু গাছ। সেদিন দেখেছিলাম তার ছোট বোন একটি ফুল ছিড়েছিল, তাই বলে তাকে একটা
থাপ্পড় বসিয়েদিল, আর এখনতো গাছ ভেঙে গেছে, আমাকে তো আস্ত......... আর ভাবতে পারছিলাম
না। বারান্দার দরজা বন্দ করে দিয়ে বিছানায় বসে রইলাম। কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম মনে
নেই, কারও চিৎকারে ঘুম ভাঙল, উঠে জানালা দিয়ে দেখি সুলতানা হাতে সেই ভাঙা ফুলের
ডাল হাতে চেঁচাচ্ছে। আমি বারান্দার দরজা খুলে বলল্লাম, এইযে এখানে কি কন সভা হচ্ছে
নাকি, এত চিৎকার করছেন কেন ?
আমাকে দেখেতো সুলতানার রাগ যেন আরও বেড়ে
গেল, আমাকে বলল এই ফুলের গাছ কে ভেঙেছে?
আমিঃ ভাঙা কাপ ফেলতে গিয়েই তা ভেঙেছে,
এটা তো ইচ্ছাকৃত নয় তাই না।
সুলতানা আমার কথা শেষ হতেই নিচ থেকে ইটের
টুকরা দিয়ে ঢিল মারা শুরু করল।
কি মেয়েরে বাবা, দেখতে চুপচাপ কিন্তু রেগে
গেলে হিংস্র বাঘিনীর মত হয়ে যায়।
রাতে খেয়ে ঘুমতে গেলাম রুমে , ঘুম
আসছিলনা, তাই উঠে বারান্দায় চেয়ারে বসে রইলাম, সুলতানার রুমের দিকে চোখ পরতেই দেখি
সে পরছে এত রাতেও।
বসে বসে সুলতানা কে দেখছি আর ভাবছি
মেয়েটা কিন্তু অসম্ভব সুন্দর, স্মার্ট আছে, কিন্তু বেশি স্টাইল করেনা, জাঁকজমক
পছন্দ করে না একেবারেই, কলেজে যখন যায়, চোখে শুধু কাজল দেয়, আর তেমন কোন মেকাপ দেয়
না, দিলেও অনেক হাল্কা করে। চুল খোলা রাখে সবসময়, বাতাসে যখন ওর চুল গুলো উড়ে
দেখতে ভালোই লাগে, হঠাৎ খুব জোড়েই হেসে উঠলাম ওর কথা ভাবতে ভাবতে, হাসি বন্দ হওয়ার
আগেই দেখি সুলতানা এ দিকেই তাকিয়ে আছে, টেবিল থেকে উঠে এসে জানালা বন্দ করে দিল।
আমি কিছুক্ষন বসে তারপর ঘুমতে গেলাম। সকালে নাস্তা করে কলেজ গেলাম, আজ ক্লাসে মন
বসসে না, স্যার-মেডামদের লেকচার যেন সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে, সুলতানার কথাই
ভাবছি, আসলে এতদিন তাকে সে ভাবে খেয়াল করিনি, অথচ আমার পাশের বাসাতেই থাকে সে,
একটা প্রবাদ আছে “ গরু কখনও নিজের আশেপাশের ঘাসে মুখ দেয় না” আমারও তাই, নিজের এত
কাছেই স্বর্গের পরী কিন্তু তার দিকেই খেয়াল ছিল না আমার। সুলতানার দিকে তাকিয়ে
ভাবছি এসব, হঠাৎ মেডাম আমাকে ডাকল, শান্ত, এতক্ষন কি বলছিলাম আমি বলত ?
আমিঃ মেডাম, ইয়ে মানে........
মেডামঃ ঠিক আছে, কোন সাবজেক্ট এর উপর
লেকচার দিচ্ছিলাম সেটা বল ?
আমিঃ চুপ করে আছি।
মেডাম, ক্লাসে যদি অমনোযোগী থাক তাহলে ক্লাসের
বাহিরে চলে গেলেই পার।
আমি এরপর ব্যাগ হাতে করে চলে এলাম, কলেজ
এর ভিতরেই বেঞ্চে বসে পড়লাম, হঠাৎ দেখি সুলতানা আসছে, আমি ওর পাশে গিয়ে দাড়ালাম,
সুলতানা কিছু কথা ছিল আমার তোমার সাথে ?
সুলতানাঃ বলে ফেল, কি বলতে চাও।
আমিঃ আমি কিছুদিন দরে ঘুমাতে পারছিনা, কোঙ্কিছুই
চিন্তা করেতা পারছিনা , একটা বেপার ছাড়া।
সুলতানাঃ ডাক্তারের কাছে যাও, আমাকে বলার
কি আছে?
আমিঃ এ রোগের মেডিসিন তোমার কাছে আছে,
কোন ডাক্তারের কাছে নেই।
সুলতানাঃ অবাক হয়ে , আমার কাছে কিসের
মেডিসিন আছে আবার?
আমিঃ সুলতানা, আমি তোমাকে ভালবাসি,
সুলতানা কিছু না বলে চলে এল, তবে যাওয়ার
আগে তার ঠোটে একচিলতে হাসি দেখলাম, তাতেই যা বুঝার তা বুঝে গেলাম।
বাইক নিয়ে সুলতানার পিছনে পিছনে গেলাম,
সামনে গিয়ে দাড়ালাম আজ আর কিছুবলতে হয়নি, সুলতানা বাইকে উঠে বসতেই বাইক ছুটিয়ে
দিলাম কোন গন্তব্য নেই, চোখ যে দিকে যাবে আজ সেদিকে যাব। ইচ্ছে করেই ব্রেক মারলাম,
যতবার ব্রেক করেছে, ততবার সুলতানা আমার শরিরে এসে ধাক্কা খেত, ভালোই লাগছিল,
সুলতানা পিঠে থাপ্পড় দিয়ে বলল কি করছ, হুম্ম, ভালোকরে বাইক না চালালে নেমে যাব,
তাই আর রেক করার ইচ্ছা থাকলেও করিনি। অনেকক্ষণ ঘুরাঘুরি করে বাসায় আসলাম, আজ আর
কোথায় থামিনি, সোজা বাসার সামনেই বাইক থেকে দুজনে নামলাম। বায় বলে দুজনে যার যার
বাসায় চলে আসলাম। প্রতিদিন এভাবেই আমাদের মধ্য ঘনিষ্ঠতা বেড়ে যাচ্ছিল, বুঝতে
পারছিলাম সুলতানা আমার জীবনে কতটা প্রয়োজনীয়, রাতে মোবাইলে কথা বলতাম অনেক্ষন,
অনেক সময় ওদের বাসার ছাদে চলে যেতাম সুলতানার সাথে দেখা করতে। এভাবেই চলছিল আমাদের
দিনগুলো।
এক্সাম চলে আসল, দুজনেই ভাল রেজাল্ট
করলাম, একই ভার্সিটিতে দুজনেই এডমিশন নিলাম। এর মধ্য চলে আসল ১৪ই ফ্রেব্রুয়ারি,
সুলতানার জন্য একটা গিফট কিনে রাতে ওদের বাসার ছাদে গেলাম, কিছুক্ষন পরে ও আসল,
আমি সোজা একে জড়িয়ে ধরলাম, সুলতানা আকস্মিক জড়িয়ে ধরাতে কেঁপে উঠল, সেও আমাকে
জড়িয়ে ধরল, এই প্রথম একে অপরকে জড়িয়ে ধরলাম, গিফটা হাতে দরিয়ে দিতে খুব খুশি হল
সে, আমাকে একটা গিফট দিল, একটা ঘড়ি, আমি হাতে ঘড়ি পড়তাম না, সুলতানা নিজে আমাকে
ঘড়িটা পরিয়ে দিল, ২০মিনিট ছিলাম ছাদে দুজনে। এরপর বিদায় নিয়ে চলে আসলাম যে যার
বাসায়। ভার্সিটিতে এরই মধ্য অনেক বন্দু জুটে গেল আমার এর মধ্য মেয়ে বন্দুও ছিল,
তারা সবাই যানে আমার আর সুলতানার রিলেশন এর কথা, কিন্তু একটি মেয়েছিল যে আমার
প্রতি দূর্বল ছিল, সে আমাকে নানা ভাবেই বুঝাত সে আমাকে ভালবাসে, আমি দেখেও না
দেখার ভান করতাম, তাকে পাত্তা দিতাম না, একদিন ভার্সিটির গেটের সামনে
দাঁড়িয়েছিলাম, মেয়েটি হেটে আসছিল, আমার সামনে এসেই আমার শরিরে পড়ে গেল, আমিও
দুহাতে তাকে জড়িয়ে দরলাম। সে মুচকি হেসে সর্যি বলে চলে যায়, সুলতানা তখন
ক্যান্টিন থেকে বের হয়ে আমাদের কে এভাবে দেখতে পায়।
সুলতানা কাছে আসতেই বললাম, কি হল আমার
রুপসীর মুখে আজ কালো মেঘ দেখা যাচ্ছে যে?
সুলতানাঃ কে ওই মেয়েটি, যাকে জড়িয়ে ধরলে?
আমিঃ ওহ আমাদের ক্লাসের, কেন তুমি দেখনি
ওকে, ওর নাম রিমি, পড়েযাচ্ছিল তাই আমি ধরলাম।
সুলতানা অনেক রেগে গেছিল , কিন্তু তখন এ
নিয়ে আর কিছু বলেনি।
ক্লাসে গেলাম, স্যার এর লেকচার শুনছিলাম
আমি, কিন্তু ভাবছিলাম সুলতানা কে নিয়েই আর মাঝে মাঝে ওর দিকেই তাকাচ্ছিলাম, যতবারি
ওর দিকে তাকাই দেখি ও অন্য দিকে তাকিয়ে আছে, খেয়াল করতেই দেখি রিমি আমার দিকে
একপলকে তাকিয়ে আছে, আমি তাকাতেই হেসে দিল সে, তা দেখে সুলতানা রেগে গেল, হাতদিয়ে কলম
খুব জোড়ে চেপে ধরেছে, হাত লাল হতেই বুঝতে পারলাম।
৪থ পর্ব
আমি আর রিমির দিকে তাকালাম না। স্যার এর
লেকচার শেষ হতেই সবাই ক্লাস থেকে বের হয়ে এলাম, আমার আগেই সুলতানা বের হয়ে
হয়েগেছে, অন্য সময় একসাথেই বের হই। আমি দৌড়ে সুলতানার কাছে আসতেই পিছন থেকে রিমি
আমাকে ডেকে বলল, শান্ত তোমার কাছে গত ক্লাসের নোট আছে,
আমি সরল মনেই বললাম আছে, তবে আমার সাথে
নেই।
রিমিঃ ঠিকয়াছে আজ বিকালে আমি তোমাদের
বাসায় গিয়ে নিয়ে আসলে তোমার আপত্তি আছে?
আমিঃ না আপত্তি নেই, তবে তোমাকে কষ্ট
করতে হবে না, আমি আগামীকাল নিয়ে আসব ক্লাসে নিয়ে নিও তুমি।
রিমি কে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে
সুলতানার সাথে পাশাপাশি হাটতেছিলাম,
সুলতানার বা হাত চেপে ধরলাম, সে ঝাকিদিয়ে
হাত সরিয়ে দিল আমার, এরপর রিক্সা নিয়ে চলে গেল বাসায়।
আমি অবাক হয়ে গেলাম, বুঝতে পারছিলাম,
রিমি আমার দিকে তখন তাকিয়ে ছিল তাই, আমিও ভেবে পাচ্ছিনা রিমি এমন করছে কেন।
যাই হওক বাসায় এলাম একা একা, বাসায় এসে
আর খেতে ভাললাগছিল না, বারান্দায় দাঁড়িয়ে সুলতানাকে দেখা যায় কিনা তাই উকি
দিচ্ছিলাম ওর রুমের দিকে, কিন্তু দেখতে পাইনি। কল দিলাম তাও রিসিভ করে নি, খারাপ
লাগছিল অনেক, আমার কি করার আছে, আর রিমি এমনি করছে কেন আমার সাথে।
বিকালে রিমি হঠাৎ বাসায় এসে উপস্থিত,
রিমি কে দেখেই আমার হাত-পা কাঁপতে শুরু করে দিল, এখন যদি সুলতানা ওকে আমার বাসা
থেকে বের হতে বা ঢুকতে দেখে থাকে তাহলে কি হবে ভাওবতেই আমার গায়ে কাঁপুনি শুরু হয়ে
গেল, কারন সুলতানা যেমন সুন্দরি, আর লক্ষি মেয়ে তেমনি অনেক জেদি মেয়ে।
রিমিকে নোট দিয়ে বাসার নিচে পর্যন্ত্য
এগিয়ে দিলাম, যদিও ইচ্ছা ছিলনা, রিমি নিচে নেমেই আমার হাত দরে আমাকে ধন্যবাদ দিল,
আমি হাত ছাড়তে চাইলেও ও দরে রাখল, কি আর হবে, যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই রাত হয়।
সুলতানা বাসাথেকে বের হল সেই সময়, ব্যস গরম তেলে পানি পড়লে যা হয় তেমন করে ফুলে
উঠল, দূর থেকেই বুঝতে পেরেছি রাগে তার শরির কাঁপছিল। রিমি চলে গেলে, আমি সুলতানার
পাশে গিয়ে দাড়ালাম, বললাম ও নোট নিতে এসেছিল, আমি না করেছিলাম বাসায় আসতে , কিন্তু
তবুও কেন যে এল!
সুলতানাঃ বাসায় আসতে না করেছিলা, কেন কোন
রেস্টুরেন্ট এ বসার কথা ছিল নাকি?
আমিঃ তুমি অযথাই রাগ করছ, ওর সাথে আমার
কয়দিনি বা পরিচয় বল।
সুলতানাঃ তাই, সে জন্যইতো আরও পরিচিত হতে
চাইছ, তোমার যা ইচ্ছা তাই কর আমি আর তোমার সাথে নেই।
সুলতানা চলেগেল ওদের বাসায়, কি করব
বুঝছিনা, রিমির সাথে কথা বলতেই হবে।
পরেরদিন ভার্সিটিতে গিয়ে রিমিকে বেঞ্চে
পেয়ে ওর কাছে গেলাম,
আমিঃ রিমি কিছু কথা ছিল তোমার সাথে ?
রিমিঃ আরে তোমার কি পারমিশন লাগবে নাকি
আমার সাথে কথা বলতে, আমিতো তোমার কথা শোনার জন্যই ব্যাকূল হয়ে আছি।
আমিঃ তুমি আমার সাথে এমন করছ কেন, তুমি
জানো যে আমি আর সুলতানা একে অপরকে ভালবাসি, তুমি আমাদের দুজনার মাঝখানে দেয়াল
সৃষ্টি করতে চাইছ কেন।
রিমিঃ শান্ত আমি তোমাকে ভালবাসি, আর আমার
ভালবাসা আমি জোড় করে কেড়ে নিতে চাই না, আমি আমার ভালবাসা দিয়ে তোমাকে জয় করতে চাই।
আমিঃ কিসের ভালবাসা তোমাকে আমি ভালবাসা
তো দূরে থাক, পছন্দই করিনা।
হঠাৎ রিমি আমাকে জড়িয়ে দরে আমি ধাক্কা
দিয়ে দূরে ঠেলে দিতে চাইলে আমাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে দরে সে, আমি তার এ আকস্মিক
আচরের কারন বুঝতে পারিনি, হঠাৎ পিছনে তাকিয়ে দেখি সুলতানা এদিকেই আসছে, কিছু বুঝার
আর বাকি রইল না, রিমি সুলতানাকে দেখেই আমাকে জড়িয়ে দরেছে।
সুলতানা কাছে এসেই আমার গালে একটা থাপ্পড়
বসিয়ে দিল, ছি শান্ত আমি তোমাকে অন্যরকম ছেলে ভেবেছিলাম কিন্তু তুমি অন্যছেলেদের
মত নোংরা। প্রচন্ড ঘৃণা নিয়ে সুলতানা ভেজা চোখে ভার্সিটি থেকে চলে গেল।
আমি রিমিকে ওর বাঁধন থেকে মুক্ত হয়ে ওর
গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলাম, রিমিকে বললাম, ভালবাসার মানে কি তুই জানিস, জানিস
না, জানলে এমন নোংরা কাজ করতে পারতিনা, নষ্টা মে্যে, বলে চলে আসলাম।
বাইকটা নিয়ে সোজা চলে এলাম বাসায়,
সুলতানা দের বাসায় গেলাম বাসায় পেলাম না, ছাদে গিয়ে দেখি সে এককোনায় বসে কাঁদছে।
আমি তার পাশে যেতেই সে উঠে চলে যেতে চাইল,
আমি তার হাত দরলাম, সে হাত ঝাকিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে চলে যেতে চাইল, এবার তার সামনে গিয়ে
পথ আটকালাম।
তুমি আমার কথা শোন প্লিজ, তুমি যা ভাবছ
তা সত্য নয়, রিমির সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই, ও এগুলা কেন করছে তাও আমি জানিনা।
সুলতানাঃ আমি যা নিজের চোখ দিয়ে দেখেছি,
তা কি মিথ্যা নাকি। তুমি ওকে সুযোগ না দিলে ওই মেয়ে কেন তোমার সাথে এমন করবে,
তোমাকে কেন জড়িয়ে ধরবে সে।
আমিঃ আমি এর কিছুই জানিনা, কেন করছে
সেটাও জানিনা, আমি তোমাকেই ভালবাসি শুধু। বিশ্বাস কর সুলতানা।
সুলতানাঃ নিজের চোখে দেখেও বলছ তোমাকে
বিশ্বাস করতে ? ঠক, প্রতারক।
আর সহ্য করতে পারিনি, সুলতানার গালে একটা
চড় বসিয়ে দিলাম।
কেমন প্রেমিকা তুমি নিজের ভালবাসার
মানুষের প্রতি তোমার কোন বিশ্বাস নেই।
সুলতানা কিছু না বলে চলে গেল, কি করব, কি
করেইবা তার ভূল ভাঙ্গাব আমি।
সেদিন রাতে আর ঘুমাতে পারিনি, সুলতানা কে
অনেকবার কল দিয়েছি রিসিভ করে নাই, আর মেসেজ এর রিপ্লাইও দেয়নি।
5m part
শেষ পর্ব
পরেরদিন সকালে ভার্সিটিতে সুলতানা কে
হন্য হয়ে খুঁজলাম, কোথাও পেলাম না, শেষে তাকে পেলাম খেলার মাঠের পিছনে বসে থাকতে,
সেখানে আরও অনেক বন্দু-বান্দবী ছিল। সুলতানা কে বললাম একটু সামনে চল কথা আছে,
কিন্তু সে আমাকে পাত্তাই দিল না, আমি রেগে গিয়ে তার হাত দরে টান দিলাম, সে হাতটি
ছাড়িয়ে নিয়ে সবার সামনেই আমার গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিল,
রাগে তার সারা শরীর কাঁপছিল, সে বললঃ এত
বড় আস্পর্দা তোর, তুই আমার গায়ে হাত দিস, ধোঁকাবাজ, মিথ্যাবাদী, এর পরেও যদি আর
কোনদিন আমার আশেপাশে দেখি, অথবা আমাকে বিরক্ত করেছিস কোনদিন তাহলে তোর নামে
প্রিন্সিপ্যাল স্যার আর পুলিশে অভিযোগ করতে বাধ্য হব আমি।
সবার সামনে এভাবে অপমান করাতেও আমি কষ্ট
পাইনি, অশ্রু ভেজা নয়নে শুধু বলেছি, তুমি ভূল করছ, আর এই ভূলের মাশুল তোমাকেই দিতে
হবে।
সেখান থেকে চলে আসলাম বাসায়, বাসায় এসে
বিছানায় বসে কাঁদতে লাগলাম, এতটুকু পরিমান বিশ্বাস করলনা আমাকে, এই ছিল তার
ভালবাসা। রাতে আর ঘুম হলনা, ইচ্ছে করছিল সুলতানাকে কল দেই, কিন্তু সাহস করে দিতে
পারিনি, বারান্দায় যাওয়ার সাহস হয়নি, একসময় ওর প্রতি ঘৃণা জন্ম নিল, ঘৃণা নয়
অভীমান হল তার উপর, কিন্তু যাকে সত্যিকারের ভালবাসা যায় তার প্রতি ঘৃণা জন্মানো
ঠিকও নয়, কিন্তু কিবা করার আছে আমার।
আজ ৪দিন ভার্সিটিতে যাই না, অনেক বন্দু
কল দেয় আমি সুস্থ আছি কিনা জানতে চায়, কেন ভার্সিটিতে যাইনা সেটাও অনেকে জিজ্ঞেস
করে, আমি অনেক সময় বিরক্ত হয়ে কল কেটে দেই। সুলতানাকে
দেখতে মন চাইছে অনেক, ভার্সিটিতে গেলেই তাকে দেখতে পাব, তাই পরেরদিন ভার্সিটিতে গেলাম,
আমাকে দেখেই সব বন্দুরা আমার কাছে এসে জড়িয়ে দরল, এতদিন তাদের ছেড়ে কিভাবে থেকেছি
এইসব প্রশ্ন করতে লাগল সবাই। সবাইকে বললাম দেখ আমার ভাল লাগছেনা এখন তোরা আমাকে
বিরক্ত করিস না,
কে শোনে কার কথা, সবাই টেনে নিয়ে গেল
ক্যান্টিনে, সবাই আমোদফূর্তীতে ব্যস্ত কিন্তু আমার ভিতরে যে কষ্টের আগুন জ্বলছে তা
অন্যকাওকে দেখাতে পারছি না বলতে পারছি।
রিমি কে দেখলাম পাশের টেবিলে বসে আছে,
আমার দিকে চোখ পরতেই মেয়েটির চোখে আমি কষ্টের মেঘ দেখতে পেলাম, কেমন মেয়ে, আমার
জীবন থেকে সুলতানাকে সরিয়ে দিয়ে যার আনন্দ পাওয়ার কথা, আজ তার মুখেই কষ্টের ছায়া
দেখতে পারছি। বন্দুরা নেক্সট ক্লাস শুরু হবে তাই চলে গেল, আমাকেও নিতে চেয়েছিল
কিন্তু আমি পড়ে আসব বলে ওদেরকে পাঠিয়ে দিলাম। বন্দুরা চলে যাওয়ার পর রিমি এসে আমার পাশে
দাঁড়িয়ে থাকল, আমি তার দিকে না তাকিয়েই বললামঃ কি বলতে এসেছ আবার, আর কি নোংরা
খেলা খেলতে চাও আমাকে নিয়ে ? সুলতানাকে আমার জীবন থেকে সরিয়ে দিয়ে কি সুখ পাওনি?
রিমিঃ আমাকে ক্ষমা করে দাও শান্ত, আমার
ভূল হয়ে গেছে, আমি আসলেই ইচ্ছে করে তোমার উপর অপমানের প্রতিশোধ নিতে এমন করেছি ?
আমিঃ অপমানের প্রতিশোধ নিয়েছ আমার উপর!!
মানে কি ?
রিমিঃ আমি রাসেল এর বোন, ভাইয়ার সাথে
তোমার সুলতানাকে নিয়ে ঝগড়ার সময় আমি সেখানেই ছিলাম, তুমি যখন ভাইয়াকে থাপ্পড় দিলে
তখন তোমার প্রতি আমার একটা ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল, সেই থেকেই আমি এমনটা করেছি, কিন্তু
বিশ্বাস কর, তোমাদের দুজনের প্রতি দুজনার গভির ভালবাসা দেখে আমি নিজেই কষ্ট পাচ্ছি
এখন। তাছাড়া তোমাকেও আমি পছন্দ করি, তাই তোমার নিজেকে এভাবে কষ্ট দেওয়াটা, আমি
মানতে পারছিনা।
আমিঃ “ইচ্ছে হচ্ছিল গলাটা টিপে দরি
রিমির” নিযেকে সংযত করে বললাম, “তোমার কষ্ট পাওয়া বা নাপাওয়া দিয়ে এখন আর কিছু যায়
আসেনা”। আমাদের সম্পর্ক বলতে গেলে শেষ হয়েই গেছে।
বলেই সেখান থেকে উঠে চলে আসলাম বাইকের
কাছে, বাইক নিয়ে বাসায় এসে রুমে লাইট অফ করে বসে রইলাম, সন্ধ্যা হয়ে এলে, আম্মু
আমার রুমে এসে লাইট জ্বালিয়ে দিল,
আম্মুঃ কিরে কি হয়েছে তোর, এই সন্ধ্যায়
লাইট অফ করে রেখেছিস কেন ?
আমিঃ কিছু না আম্মু, ভাল লাগছিলনা উঠে
গিয়ে লাইট অন করতে, তাই আর লাইট অন করিনি।
আম্মুঃ কেন শরির কি বেশি খারাপ নাকি, এক
গ্লাস দুধ দিয়ে যাই, খেলে ভাল লাগবে।
আমিঃ না আম্মু এখন কিছু খাব না। তুমি যাও
আমি ঘুমাব।
আম্মু চলে গেলে আমি শুয়ে রইলাম, চোখ দিয়ে
শুধু জল পড়ছে, ভাল লাগছেনা তাই উঠে ছাদে চলে গেলাম,
রাতের প্রকৃতির এই নীরব, নিস্তব্দ
পরিবেশে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না, বুক ফেটে কান্না চলে আসছিল, নিজের পায়ে যেন
শক্তি পাচ্ছিলাম না দাঁড়িয়ে থাকবার, রেলিং এ ভর দিয়ে আকাশের পানে তাকিয়ে নীরবে
সৃষ্টিকর্তার নিকট অভিযোগ করছিলাম কেন আমার সাথে এমনটি হল।
হঠাৎ পিছন থেকে দুটি হাত আমাকে শক্ত করে
জড়িয়ে ধরল, তার শরীরের ঘ্রাণ পেয়েই বুঝতে পেরেছিলাম কে আমাকে জড়িয়ে ধরেছে, ঘুরে
তার দিকে তাকাতেই, তার চোখে পানি দেখতে পেলাম আর চোখের নিচে কালো হয়ে গিয়েছিল,
কয়েকদিন না ঘুমালে নাকি এমন হয়, রোগাও লাগছিল তাকে।
বুঝতে পেরেছিলাম যে কষ্ট আমি পাচ্ছিলাম
সেও একই কষ্ট পাচ্ছিল।
আমার সেই সুন্দরী পরীর চেহারাটা মলিন হয়ে
গিয়েছে এ কদিনে।
তাকে বললাম তুমি কাঁদছ কেন?
সুলতানাঃ আমার বাবুটা কে আমি কষ্ট দিয়ে
ফেলেছি অনেক, আমি তোমার প্রতি অন্যায় করেছি শান্ত।
আমি আসলেই বুঝিনি যে রিমি তোমার সাথে
মিথ্যা অভিনয় করেছে, আজ কে রিমি আমার বাসায় এসে তার কৃতকর্মের জন্য আমার কাছে
ক্ষমা চেয়েছে।
শান্ত তুমি কি আমাকে ক্ষমা করবে, আমাকে
বুকে জড়িয়ে ধরবে সেই আগের মত।
আমি, সুলতানাকে জড়িয়ে দরলাম, দুজনেই
কান্না করছিলাম তখন, কিন্তু এ কান্না সুখের কান্না ছিল।
সুলতানার মুখটা রাতের আলোয় দেখতে অনেক
সুন্দর লাগছিল, ওর গোলাপি ঠোটে আমার ঠোট স্পর্শ করা মাত্র আমার পরীটা কেঁপে উঠল
বার কয়েক। আরও শক্ত করে জড়িয়ে দরল সে আমাকে, আমি তাকে।
<3 ;) J
<3
জ্যাক রিচার্ডঃ প্রতিটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে
শুধুমাত্র বিশ্বাস এর উপর, তাই যারা সম্পর্ক করছেন বা করবেন তাদের মধ্য তার
প্রেমিক/প্রেমিকাকে বিশ্বাস করার মন-মানসিকতা থাকতে হবে, টাকা পয়সা তো রাস্তার
ভিক্ষুক/ভিক্ষারিনির ও থাকে, বিশ্বাস থাকে কয়জনের।
আর বিশ্বাস করবেন ঠিক আছে, কিন্তু অন্ধ
বিশ্বাস ও ভাল নয়। ;) আধুনিক যুগ বলে কথা।
Comments