গল্প - ছোট্ট বেলার বউ
আমি সালমান, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এবার অনার্স ২য় বর্ষের
ছাত্র। গ্রামের বাড়ি বরিশালের পটুয়াখালী। গ্রামে তেমন একটা যাওয়া হয়ে উঠেনা আমার,
বিভিন্ন ছুটিরে দিনেও আমি সাধারনত মেসেই থাকি, তবে ঈদের ছুটি হলে বাড়ি যাওয়া মিস
করিনা, যেভাবেই হওক না কেন বাড়ি যাবই।
গত বছরে অনেক কষ্ট হয়েছিল বাড়ি যেতে লঞ্চে করে যেতে হয়, তাই ঈদের
২দিন আগেই সদরঘাট আসলাম, এসে তো আমার চক্ষু চড়ক গাছ হয়ে গেল, এত মানুষ গ্রামের
বাড়ি যাবে, লঞ্চে কোন জাগাই পেলাম না, উপায় নে দেখে ছাদের এক কোনায় উঠে বসলাম, ছাদ
সবসময় খোলা থাকে তাই ঠান্ডা বেশি আর যদি বৃষ্টি হয় তাহলে ভিজে যেতে হবে, কিছু করার
নেই, তাই বাধ্য হয়ে ছাদে এসে বসলাম।
লঞ্চ ছেড়ে দিল সন্ধ্যা ৭টায়। লঞ্চে যাওয়ার মজা এটাই যে ঘুমিয়ে যাওয়া
যায়, আবার এখানে হাটাহাটি করা যায়, এককথায় বরিশাল বিভাগ এর বেশির ভাগ
মানুষ লঞ্চে করেই যাতায়াত করতে বেশি পছন্দ করে।
অনেকক্ষণ বসে ছিলাম ভাল লাগছিল না তাই একটু ক্যান্টিনে এলাম চা খেতে।
ক্যান্টিনটা একদম নিচে তাই সিড়ি বেয়ে নামতে হল, চা খেয়ে লঞ্চের কেবিন বয় ছিল তাদের
একজন কে দেখতে পেয়ে তার কাছে গেলাম যদি কোন কেবিন পাওয়া যায় কিনা।
ভাগ্য ভাল ছিল বলতে হবে, ছেলেটির কাছে একটামাত্র কেবিন খালি আছে,
কিন্তু ভাড়া ২৫০টাকা বাড়তি দিতে হবে, অনেক বলে কয়ে পড়ে ১৫০টাকা বেশি দিয়ে কেবিনের
চাবিটা হস্তক্ষেপ করলাম।
কেবিনটা দেখিয়ে দিয়ে ছেলেটি চলে গেল। আমি কেবিনটা খুলে সব কিছু দেখে
নিয়ে আবার বাহিরে এসে তালা দিয়ে ছাদে গেলাম আমার ব্যাগ নিয়ে আসার জন্য। ছাদে এসে
ব্যাগটা কাধে নিয়ে আবার নিচে নেমে কেবিনে যাওয়ার সিড়ির দিকে পা বাড়ালাম, সিড়িতে
এসেই একটি মেয়ের সাথে ধাক্কা খেলাম, আমি কিছু বলার আগেই সে আমার কাছে ক্ষমা
চেয়েনিল। আমি প্রথমে ভড়কে গেছিলাম এই বুঝি আমাকে বকাবকি করে দেয়, কিন্তু মেয়েটি সর্যি
বলছে দেখে আমিও তাকে সর্যি বলে উপরে সিড়ি বেয়ে চলে আসলাম কেবিনে। কেবিনে ঢুকে
বিছানায় বসে পড়লাম, কেবিনের ভিতরে ১টি বিছানা কিন্তু ডাবল বেড। আর সাথে টয়লেট আছে
আর একটা টিভিও আছে, রুমে আয়েস করে বসে টিভি দেখছিলাম, এমন সময় দরজায় কেউ টোকা দিল,
দরজা খোলার আগে জিজ্ঞাসা করে নিলাম কে, কেবিন বয় সেই লোকটি বলল সে।
আমি খুলে দিতেই লোকটি ভিতরে ঢুকল সাথে একটি মেয়ে, আমি দেখেই চিনলাম
সেই মেয়েটি যার সাথে আমার কিছুক্ষন আগে ধাক্কা লাগল। আমি কেবিন বয় কে জিজ্ঞাসা
করলাম কি হয়েছে?
সে বলল, কোন কেবিন খালি নেই, এই আপামনি ডেকেও জায়গা পাচ্ছেন না, আর
উনি ডেকে যাওয়ার অভ্যাস নেই, তারউপর একা একটি মেয়ে, তাই আমার কাছে নিয়ে আসা।
আমি তো অবাক হয়ে গেলাম, আমি বললাম তা আমার কাছে কেন নিয়ে আসলেন, আমি
কি এই লঞ্চের মালিক নাকি?
কেবিন বয় বলল, তা নয় আপনাকে দেখে আমার খুব ভাল মানুষ মনে হয়েছে তাই
ভাবলাম আপনি কোন হেল্প করতে পারবেন ওনাকে।
আমি আরও আশ্চর্য হয়ে বললাম, আমার ভাল মানুষ এর সাথে অনার কি সম্পক,
কি বলতে চান খুলে বলুন।
তখন মেয়েটিই বলল, দেখুন ভাইয়া আমি আসলে সত্যি বিপদে পড়েছি, আমি সাথে
আমার কাপড় ছাড়া কোন কিছু আনিনি, যে বাহিরে এই শীতে তা জড়িয়ে থাকব, আর ডেকে যেতে
আমার অপছন্দ, তাও যদি ছাদে না হত, তাহলে কষ্ট করে হলেও যেতাম, আপনি যদি আজ রাতে
আমাকে এই রুমে থাকতে দেন তাহলে আমি অনেক উপকৃত হব আপনার কাছে,
আমার তো মাথা খারাপ হওয়ার কথা, আমি বললাম সর্যি আমাকে আপনি ক্ষমা
করুন, আমার পক্ষে আপনাকে সাহায্য করা সম্ভব নয়, আপনি প্লিজ আসুন, আমার কথায় মেয়েটি
খুব কষ্ট পেল কিন্তু মুখে কিছু বললনা, সে বাহিরে চলে গেল কেবিন বয় চলে যেতেই তাকে
কষে একটা ঝাড়ি দিলাম এমন আহাম্মকের মত কাজ করার জন্য। কেবিনের দরজা লাগিয়ে আবার
টিভি দেখতে লাগলাম, কিন্তু টিভি দেখে আনন্দ পাচ্ছিনা, মেয়েটির জন্য খারাপ লাগছিল,
কিন্তু আমিও বা কি করতে পারি, একটা রুমে দুজনে অপরিচিত কিভাবে থাকা যায়, যতই সে
আমার দেশি মানুষ হউক না কেন,। এ সব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, আসলে অনেক
ক্লান্তি লাগছিল লোকাল বাসে করে এসেছি সদরঘাট তাই একটু আরাম পেয়ে ঘুমেয়ে পড়েছিলাম।
ঘড়ি দেখে বুঝলাম ৩ঘন্টা ঘুমিয়েছি, রাত তখন ১০.৩০ মিনিট। চা খাওয়ার জন্য বের হতেই
কেবিনের দরজা খুলে বাহিরে পা রাখতেই কারও পায়ে পারা দিয়ে ফেললাম, ঘুমে থাকায় সে
বুঝতে পারলনা, আমি আস্তে করে রুমের দরজা লাগিয়ে সিড়ি বেয়ে নিচে চলে আসলাম, চা খেয়ে
কিছুক্ষন হাটাহাটি করে আবার চলে আসলাম রুমে , এসে দেখি যার পায়ে আমি পারা দিয়েছি,
সে অন্য কেউ নয় সেই মেয়েটি, গায়ে কোন খাতা বা চাদর নেই, ওড়না দিয়ে মুখ ঢাকা ছিল
তখন তাই আগে দেখতে পাইনি, বাতাসে মুখের ওড়না সরে যাওয়াতে চিনতে পারলাম, শিতে
কাপছিল সে ঘুমের মধ্য তার কাপুনি দেখেই বুঝতে পারছিলাম তার অনেক ঠান্ডা লাগছিল,
মায়া হয়ে গেল তার প্রতি, তাই আর কোন কিছু না ভেবেই, তাকে ডাক দিলাম সে একবার শুধু
চোখ মেলে তাকাল মাত্র, বুঝলাম অতিরিক্ত শিতে এই অবস্থা, রুমের দরজা খুলে তার
ব্যাগটা ছুড়ে মারলাম আমার রুমের ভিতরে, তারপর তাকে কোলে করে রুমে ঢুকব তখনি কেবিন
বয় এসে হাজির, মেয়েটিকে নিয়ে ঢুকে গেলাম আমার রুমে কেবিন বয় পিছনে তার স্যান্ডেল
জোড়া নিয়ে ঢুকল। আমি কেবিন বয় কে বললাম, তোমার মোবাইল নাম্বারটা দাও আমাকে, আর আমি
বললে আমাদের দুজনার জন্য রাতের খাবার নিয়ে আসবে, কেবিন বয় অনেক খুশি হল ওর মুখ
দেখেই বুঝতে পারলাম, কারন এই মেয়েটিকে সাহায্য করছি এ জন্য, আসলেই নিজের এলাকার
লোকদের প্রতি আলাদা একটা টান বা মায়া থাকে সবার। কেবিন বয় চলে যেতেই মেয়েটির গায়ে
লেপ দিয়ে দিলাম। ২০ মিনিট পরে একটু আরাম লাগায় মেয়েটি চোখ খুলল, বিছানার পাশে
আমাকে দেখতে পেয়ে এক লাফে বিছানা থেকে নেমে গেল সে, আমি তার এরকম আচরনে চমকে
গেলাম। সে বলল আমি এখানে কীভাবে আসলাম, আমি বললাম আমি নিয়ে এসেছি আপনাকে কোলে করে।
মেয়েটি আমার উপরে রেগে গেল, আপনার সাহস কি করে হল আমাকে এভাবে রুমে
নিয়ে আসার, যখন সাহায্য চেয়েছি তখন তো না করে দিলেন এখন কেন আমাকে নিয়ে এসেছেন,
তাকে তখন বললাম আপনি ঠান্ডায় কাপছিলেন তাই মানবতার খাতিরে নিয়ে এসেছি, তবে আমি এক
নই কেবিন বয়ও ছিল আমার সাথে, মেয়েটি তখন আর কিছু বললনা , তাকে ফ্রেশ হতে বললাম
টয়লেট এ গিয়ে, এদিকে কেবিন বয়কে কল দিয়ে বললাম আমাদের জন্য খাবার দিয়ে যেতে, কেবিন
বয় খাবার নিয়ে রুমে ঢুকতেই মেয়েটিও বের হল ফ্রেশ হয়ে, দুজনে একসাথে খাবার খেয়ে
নিলাম, ইলিশ মাছ, চিংড়ি মাছ আর ডাল দিয়ে খেলাম দুজনে।
খাওয়ার পর কেবিন বয় আবার এসে আমাদের কে ২কাপ কফি দিয়ে গেল, আর খাবার
টেবিলটা পরিষ্কার করে প্লেট গুলো নিয়ে গেল। দুজনে কফিতে চুমুক দিচ্ছি আর টিভি
দেখছিলাম।
আমি প্রথম মেয়েটিকে বললামঃ হাই আমি সালমান।
মেয়েটি বললঃ আনিকা।
আমি তখন তাকে বললাম আমি জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যাল এ পড়ি।
সে বলল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে , এই বলে সে তার আইডি কার্ড তা আমাকে
দেখাল, আমিও দেখলাম নাম আনিকা রহমান, অনার্স ২ম বর্ষ।
এরপরে দুজনেই গ্রামের বাড়ি কোথায় এইসব বলতে লাগলাম। দেখা গেল সে আর
আমি একই গ্রামে থাকি। পরিচয় পর্ব শেষে আমার খুব ঘুম পেল আমি বিছানার একপাশে শুয়ে
পড়লাম আর আমাদের দুজনের মাঝখানে একটা বালিশ দিয়ে দিলাম, সে টিভি দেখতে লাগল লেপের
ভিতরে বসে। কিছুক্ষন পরে সে ও ঘুমিয়ে পড়ল। ঘুম ভেঙে গেল কারও হাত আমার গায়ে উপরে
রাখার জন্য। হঠাৎ করে তার এরকম আচরনে আমি ভয় পেয়ে গেলাম, এই মেয়ের কি কোন বদ মতলব
আছে নাকি। পাশফিরে তাকিয়ে দেখি সে ঘুমাচ্ছে অঘোরে, মাঝখানের বালিশ হাওয়া, মানে তার
পায়ের আঘাতে নিচে পরে গেছে হয়ত, ভাবছি কি রকম মেয়েরে বাবা, এভাবে কেউ ঘুমায় নাকি।
যাই হউক হাতটি সরিয়ে আবার অন্যপাশ হয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম আমি। সকালে ঘুম ভাঙল আমার প্রথমেই। আবার সেই
একই কান্ড তার হাত আমার গলার কাছে, হাত সরিয়ে দিব সে তখন আমাকে টেনে ধরল তার কাছে,
আমি তার গালে কষে একটা চড় দিলাম, ব্যাথায় তার ঘুম উড়ে গেল, আমি জানি যে সে ঘুমের
ঘোরে করছিল এরকম, কিন্তু চড়টা একটু জোড়েই দিয়ে ফেলেছি, সে কিছু বললনা, গালে হাত
দিয়ে চোখের পানি ফেলতে লাগল, আমি বাহিরে চলে গেলাম ততক্ষনে আমাদের বারির কাছেই
লঞ্চ এসে পড়েছিল আর মাত্র ২০মিনিট এর মত ছিল বাকি, আমি বাহিরে থেকে হেটে এসে আমার
ব্যাগ কাধে নিয়ে কেবিন থেকে বের হয়ে নিচে চলে আসলাম। কেবিনের ভাড়া ও আমাদের দুজনার
টিকেট আমি কেবিন বয় কে আগেই দিয়ে দিয়েছি। লঞ্চ আমাদের ঘাটে আসতেই আমি নেমে পরলাম,
পিছনে তাকিয়ে দেখলাম আনিকাও নামছে। আমি একটা অটো নিয়ে বাড়ি চলে আসলাম।
বারি এসেই সবার সাথে কুশল বিনিময় করলাম আগে, তারপর দাদু ভাই আর দাদু
আপাকে সালাম করে , বাবা-মাকেও সালাম করলাম, ছোট বোনটা আমার কাছে এসে বলল তার জন্য
কি নিয়ে এসেছি, আমি মিথ্য করে বললাম কিছুই আনি নি, সে তখন মন খারাপ করে একটু দূরে
সরে গেল আমি তার কপালে একটু আদর করে ব্যাগ থেকে তার প্র্যি মিমি চকলেট আর একটা
টেডি বিয়ার এর খেলনা দিলাম সে তো অনেক খুসি, তা নিয়ে এক দৌড়ে চলে গেল অন্যদের
দেখাতে, আম্মু আমাকে পুকুরে গিয়ে হাত মুখ ধুতে বললেন, আমি হাত মুখ ধুয়ে নাস্তা করে
নিলাম, এরপর আমার রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। বিকেলে উঠে খাবার খেয়ে হাটতে বের হলাম
গ্রামটা ঘুরে দেখার জন্য, ঘুরতে ঘুরতে আমি আনিকাদের বাসার কাছে এসে পড়লাম আমার
খেয়াল ছিল না এটা আনিকাদের বাড়ি, আনিকা কে ওদের পেয়ারা বাগানে দেখতে পেয়ে সেদিকে
এগিয়ে গেলাম ক্ষমা চাওয়ার জন্য, আনিকা আমাকে দেখতে সেখান থেকে চলে যেতে চাইল, আমি
তার হাতটি ধরলাম, সে সেখানেই থেমে দাড়াল, তার হাতটি তখনো আমি ছাড়ি নি, আনিকা বলল,
হাতটি কি ছাড়া যায় এখন,
আমি তার হাত ছেড়ে দিয়ে বললাম কথা ছিল আপনার সাথে ?
আনিকাঃ কি বলবেন আপনি?
আমিঃ লঞ্চের ওই ঘটনার জন্য আমি সত্যি দুঃখিত!!
আনিকাঃ আপনার এখানে ক্ষমা চাওয়ার কিছু নাই, আমি ঘুমের ভিতর অনেক
কিছুই করি, এবং ঘুম থেকে জেগে উঠলে আমার তা মনে থাকেনা, কিন্তু তখন আপনি আমাকে
ওভাবে আঘাত না করলেও পারতেন?
আমিঃ আসলে আমি বুঝতেই পারিনি একটু জোড়েই লেগেছে, প্লিজ আমাকে ক্ষমা
করে দাও।
আনিকাঃ ক্ষমা তো আপনি এমনি প্যেগেছেন, কারন আপানর সাহায্য না পেলে
বাড়িতে কীভাবে আসতাম কে জানে।
বুঝলাম আনিকার রাগ কমেনি, আমি আগে থেকেই বুঝেছি আনিকা আমাকে পছন্দ
করে ফেলেছে, আর সত্যি বলতে আমিও। তাই আনিকা কে বললাম আপনার রাগ বাঙ্গানোর উপায় আছে
আমার কাছে ?
আনিকাঃ তাই নাকি, তা কি উপায়!!
আমি আনিকার হাতটি দরে আমার দিকে টান দিলাম, সে আমার বুকে এসে ধাক্কা
খেল, আমি আমার দুহাত দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলাম, ঠোটে একটা কিস করলাম তখন।
আনিকার সমস্ত শরিরে যেন কাঁপুনি দিয়ে গেল, আমি বললাম আমার সেই ছোট্ট
বউটা আজ অনেক বর হয়ে গেছে,
আনিকাও আমাকে দুহাতে জড়িয়ে ধরল, আনিকার চোখ দিয়ে দুফোটা পানি গড়িয়ে
পড়ল আমার বুকে।
আনিকার মুখ তুলে জিজ্ঞেস করলাম তুমি কান্না করছ কেন, আমি তোমাকে কাল
রাতেই চিনতে পেরেছি, যখন তোমার আইডি কার্ড দেখালে তোমার বাবার নাম দেখেই বুঝতে
পেরেছিলাম এই আমার সেই ছোটবেলার খেলার সাথী, যার সাথে আমি বউ বউ খেলতাম।
আনিকা আর আমার চাচার বাড়ি একসাথেই ছিল একই গ্রামে, কিন্তু আমরা
থাকতাম অন্য গ্রামে, আমি প্রায় এই গ্রামে চলে আসতাম চাচার বাড়ি, চাচতো বোন্দের
সাথে ছোট বেলায় খেলাধুলা করতাম অনেক, ভালো লাগত তাই প্রায় চলে আসতাম , আর ভাল
লাগার কারন হল, আনিকাও আমাদের সাথে খেলত, আমরা অনেক ধরনের খেলাধুলা করতাম, তার
মধ্য বেশি মজা হত, জামাই-বউ খেলা, আনিকা বউ হত আর আমি হতাম জামাই। আনিকা আমার জন্য
রান্না করত মাটির পাত্রে, কলা গাছের পাতা, মাটির গুড়ো দিয়ে ভাত, আরও অনেক কিছু,
আমি মাটির কাজ করে বাসায় আসতাম সে আমার মুখ মুছিয়ে দিত, কাবার বেড়ে দিত আর আমি তা
খেতাম, সে পাখা দিয়ে বাতাস করত, কি উদ্ভোট রকমের ছিল খেলাটা, আমরা কলাপাতা আর
ছোটছোট লাকড়ি দিয়ে ঘর বানাতাম, আর ধানের খড় দিয়ে বিছানা বানাতাম, আমার চাচাতো বোন
একজন ছিল আনিকার মা, আরেকজন আনিকার বাবা এরকম ভাবে খেলতাম, সে খেলায় কোন নোংরা
কিছু ছিল না, সেটা ছিল গ্রামের শহজ সরল গ্রাম্য বধুর নিত্য নৈমেত্তিক জীবন, তারা
সকাল ভোরে উঠেই পরিবারের কাজ করতে শুরু করেদেয়, উঠোন ঝাড়ু দেওয়া, সবার জন্য রান্না
করা, স্বামী কাজে থেকে ফিরলে তাকে খাবার বেড়ে দেওয়া, পাখা দিয়ে বাতাস করা, স্বামীর
সাথে গল্প করা।
আর এখনকার শহরে স্ত্রীরা কাজের বুয়া দিয়েই সব করিয়ে নেয়, তারা
ব্যাস্ত হিন্দি সিরিয়াল গুলো দেখার জন্য।
একটু বড় হয়ে আর চাচার বাসায় তেমন যাওয়া হত না, আর ২বার গিয়েছিলাম
কিন্তু আনিকা তখন ছিল ওর মামার বাড়ি, বেড়াতে গিয়েছিল, এরপর আমি চলে আসলাম ঢাকা
আমার ফুফুর বারি এখানে থেকে আমি এইচ এস সি পাশ করে চলে যাই জাহাঙ্গীর নগর
বিশ্ববিদ্যালয়ে, সেখানেই কাছের একটা মেসে থাকা শুরুকরি, বাড়িতে আসলেও চাচার বাসায়
যাওয়া হত না, কিন্তু আনিকা কে মনে পরত মাঝে মাঝে, ছোট বেলার সেই বউ-জামাই খেলাটি
ভুলতে চাইলেও কয়জন ভূলতে পারে, আমি পারিনি আজও।
আনিকা কে ছেড়ে দিয়ে ওকে নিয়ে ওদের বাসায় গেলাম ওর বাবার কাছে,
ওইদিনের পরের দিন ঈদ ছিল, ঈদের ২ দিন পরে আমাদের বিয়ে হয়ে গেল। আনিকা
যেমন খুশি আমি অনেক খুশি যে মেয়েটা আমাকে বিয়ের আগেই এত ভালবাসা দিয়েছে বিয়ের পরে
তো আরও অনেক ভালবাসবে।
বাসর ঘরে বসে আছি আমি আর আনিকা, আমার সেই চাচাতো বোনেরা এল ঘরে কিরে
মা-বাবা কে রেখেই কি আজ বিয়ে করে ফেললি। আমাদের ছেলে-মেয়েরা বড় হয়ে গেছে, এই বলেই
সবাই হাসতে লাগলাম।
Comments