গল্প - অবশেষে ফিরে পাওয়া
২০০৮ এর কথা,
আমি তখন ১০ম শ্রেনীতে পড়ি। তখন কোচিং ব্যবসার তেমন রমরমা বানিজ্য ছিল না বললেই
চলে, হাতে গোনা কয়েকটা কোচিং ছিল, তবে তারা পড়াশুনার প্রতি অনেক কেয়ার ছিল,
ছাত্র-ছাত্রীদের কে যথাযথ শিক্ষা দিত তারা।
এমনি একটি
কোচিং এ ভর্তী হলাম আমি। কোচিং করতে ভালই লাগত, কারন নতুন পরিবেশ, নতুন সহপাঠি, সব
কিছু মিলিয়ে ভালোই লাগত।
সেই
ভাললাগাটাকে আরও মধুর করে দিতেই একদিন আমাদের কোচিং এ আমাদের ক্লাসে একটি মেয়ে
এডমিশন নিল। যেমন সুন্দর দেখতে তেমনি মিষ্টি চেহারা, নামটাও ছিল ভারী মিষ্টি, ইতি।
ইতি বাক্য টা আমরা সবাই চিঠির শেষে লিখে থাকি, এর মানে হচ্ছে সমাপ্তি,বা শেষ,
আসলেই কি ইতি মানে শেষ। আমার কাছে মনে হয় ইতি মানে শুরু, আর এই ইতিকে দেখে আমার
মনে হল, আমার নতুন জীবনের শুরু হল।
ইতি ক্লাসে
আসার পর থেকেই আমাদের ব্যাচের অনেকেই নিয়মিত ক্লাসে আসা শুরু করল, যারা প্রায়
ক্লাসে অনিয়মিত ছিল।
এটাই
স্বাভাবিক, যেখানে মধু আছে সেখানে মৌমাছি তো থাকবেই।
তবে এই মধু
তো আর সবার ভাগ্য জোটেনা।
আমার নাম
নাইম, দেখতে একটু স্বাস্থবান ছিলাম, তাই অনেক মেয়েদের সাথে যেচে কথা বলতাম না, কারন
মেয়েরা এমনিতেই ছেলেদের কে এড়িয়ে চলে, আর আমি যেহেতু একটু অন্য রকম স্বভাবের তাই
আমাকে তো পাত্তাই দিবেনা।
কিন্তু আমার
অনুমান ভূল ছিল, তা কয়েকদিন পরেই বুজলাম আমি।
ক্লাসের
ব্রেক টাইমে সবাই খোশ গল্প করত, ইতি ও তাদের সাথে খোশ গল্পে মেতে থাকত। আমি সবার
থেকে একটু দূরে বসে লুকিয়ে লুকিয়ে ইতিকে দেখতাম, আমার কাছে ওকে দেখতেই ভাল লাগত,
চুল গুলো ঘাড় পর্যন্ত ছোট করা, শ্বারিরীক গড়ন স্লিম ছিল কিন্তু চোখ গুলো ছিল বড়
বড়, সে কারনে আমার কাছে বেশি ভালো লেগে যায়। আর ফর্সা ছিল গায়ের রঙ। সব মিলিয়ে
প্রেমে পড়ার মতই একটি মেয়ে ছিল। প্রথম দেখাতেই আমার ইতিকে ভাল লেগে যায়। তার সাথে কথা
বলে ইচ্ছে হত, কিন্তু ভয়ে বলিনি, কারন যদি কথা বলতে না চায়, সুন্দরী মেয়েরা নাকি
একটু অহংকারী হয়, বন্দুরা বলে। তাই আর যেচে কথা বলতে যাইনি।
আমাদের
ফ্ল্যাটের উপর তলায় নীলিমা নামে একটা মেয়ে থাকত, আমার জুনিয়র ছিল একই কোচিং এ
পড়তাম আমরা, আমি ১০ম শ্রেনিতে আর ও ৯ম শ্রেনিতে।ও আমাকে তুমি করেই বলত, আর আমিও
তাকে তুমি করে বলতাম। খুব কাছের বন্দুত্ব ছিল।
দুজনে বন্দুর
মতই ছিলাম বলতে গেলে, নীলিমা আমার বয়সে ছোট হলে কি হবে লম্বায় আমার মতই ছিল, একই
বিল্ডিং এ থাকার ফলে আমাদের প্রতিদিন আড্ডা ও কথা হয়। কোচিং এও আমরা নিয়মিত গল্প
করি।
ইতির দিকে
এভাবে তাকাতে দেখে নীলিমা আমাকে বলল, কি নাইম ভাই পছন্দ হয়েছে নাকি ?
নাইমঃ যাহ,
কিযে বল, ওরকম সুন্দরী মেয়েকে তো সবার পছন্দ হবে।
নীলিমাঃ তা
হলে একটা চিঠি লিখে ফেলো, প্রেম পত্র।
নাইমঃ কি যে
বল না তুমি, ওর মত সুন্দরী মেয়ে আমাকে কি পাত্তা দিবে নাকি ?
নীলিমাঃ
(রেগে গিয়ে) এত সুন্দরী বলার কি আছে, হুম্ম, চোখ দেখেছো ওর তুমি, এত বড় চোখ গরুর
হয়, আর চুল গুলো কত ছোট, মনে হয় মেয়ে না, ছেলে। বেটা মার্কা মেয়ে একটা।
কথাগুলো বলেই
রাগে গজ-গজ করতে করতে নীলিমা চলে গেল। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি তার গমন পথের দিকে,
কি হল হঠাৎ করে, পরক্ষনে মনে হল, কোন মেয়ে তার সামনে অন্য মেয়ের প্রশংসা শুনতে
পারেনা। কিন্তু এখানে নীলিমা এমন রিয়েক্ট করল কেন।
আর কিছু না
ভেবে আমিও আমার ক্লাসে চলে আসি।
কোচিং এ নিয়ম
ছিল যে আগে আসবে সে তার ইচ্ছা মত স্থানে বসবে।
তাই অনেকেই
আগে এসে নিজে বসে, সাথের যায়গা টা ইতির জন্য রেখে দেয়, ইতি সবসময় সামনেই বসত,
কিন্তু কি মনে করে সেদিন আমার পাশে এসে বসে।
ইতিকে ক্লাসে
ঢুকতে দেখেই সবার মত আমিও একটু সোজা হয়ে বসলাম, পিছনের বেঞ্চে বসা মাহিন মনে মনে
জপছে,
“আল্লাহ ইতি
আমার পাশে বসে যেন, আমার পাশে বসে যেন আল্লাহ, আল্লাহ আমার পাশে বসিয়ে দেও”,
আমি ঘুরে ওর
দিকে তাকাতেই ও আমাকে চোখ টিপ দিয়ে বলল,
মাহিনঃ মামা,
এ তোমার মামী হবে, দেখে নিও।
আমি মাথা
ঝাকিয়ে সম্মতি জানিয়ে সামনের দিকে ফিরলাম।
ইতি সোজা
আমার বেঞ্চের সামনে এসে আমার পাশে বসে পড়ল।
সবাই হতাশ
হল, কেউ কেউ আড়চোখে আমার দিকে তাকালো, অনেকেই চোখ টিপল আমাকে।
ইতি পাশে
বসার পর থেকেই আমার শরিরের রক্ত গুলো যেন বিদ্যুৎ বেগে প্রবাহিত হচ্চিল। হাতগুলো
কাঁপছিল আমার, সাথে মুখ ও হাত ঘামছিল। একটু দূরে সরে বসলাম, আড়চোখে ইতির দিকে
তাকিয়ে দেখি সেও আমার দিকে তাকিয়ে আছে, চোখে চোখ পড়তেই সে একটু হাসল, আমিও হাসলাম
তবে সেটা হাসি ছিল কিনা কে যানে।
মেডাম ক্লাসে
ঢুকতেই সবাই দাঁড়িয়ে সালাম দিলাম। এরপর বই বের করে পূর্বের দেয়া হোমও্যার্ক নিয়ে
মেডাম এর টেবিলে দিয়ে আসলাম।
মেডাম সব
দেখে আমাদের খাতায় নম্বর দিয়ে দিলেন, আমি প্রথম আর ইতি ২য়, মাহিন ৩য়।
আমাদের কোচিং
এ প্রায় মডেল টেস্ট হয়। আমাদের ক্লাসে আমি সবসময় প্রথম হই, ইতি আসার পর থেকে
অনান্য ছাত্ররাও ভাল রেজাল্ট করতে লাগল। কোচিং এর সকল শ্রেনীর মাঝে আমাদের ব্যাচের
সবাই ভাল রেজাল্ট পেয়েছে, স্যার, মেডাম সবাই খুশি।
ক্লাস শেষে
সবাই বের হলাম কোচিং থেকে, আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম নীলিমার জন্য। ইতি আমার পাশ দিয়ে
যাওয়ার সময় ওর হাতটা আমার পিঠে স্পর্শ করে, ইতিকে আসতে দেখেছিলাম আমি, তাই ওর হাতের
স্পর্শ আমার পিঠে পরতেই আমার শরিরে যেন বিদ্যুৎ এর শক লাগল। আমি ওর দিকে ফিরে
দেখি, সে সামনে তাকিয়ে একমনেই হেঁটে যাচ্ছে। হয়ত বেখেয়ালে আমার পিঠে তার হাতের স্পর্শ
লেগেছে হয়ত।
নীলিমা এলে
ওর সাথে বাড়ি ফিরলাম, কিন্তু নীলিমা এখনও মুখ ভার করে আছে, আমিও আর কিছু বলল্লাম
না, দুজনে নিশ্চুপ ভাবেই হেঁটে বাসায় পৌছালাম।
আমি কোচিং এ
যতটা শান্ত ছেলে, তার থেকে বাসায় অনেক দুরন্ত। বাসায় আসা মাত্র ফ্রেশ হয়ে, হাল্কা
নাস্তা করে কম্পিউটারে গেইম খেলতে বসলাম, গেইমের শব্দে আম্মু এসে বকা শুরু করে
দিল।
আম্মুঃ এই
নাইম, কি শুরু করলি, মাত্র কোচিং থেকে এলি, বই গুলো নিয়ে একটু পড়, তা না, এসেই
গেইম নিয়ে বসে আসিছ।
নাইমঃ আম্মু,
কোচিং এ তো ২ঘন্টা পড়েছি, এখন একটু বিশ্রাম নিতে দাও, প্লিজ।
আম্মুঃ তা এই
বুজি তোর বিশ্রাম নেয়া, একটু বিছানায় ঘুমাতেও পারিস।
নাইমঃ গেইম
খেলাটাই আমার কাছে বিশ্রাম নেয়ার মত, আম্মু। তুমি এখন যাও।
আম্মুঃ ঠিক
আছে, কিন্তু এত জোরে শব্দ করে খেলিস কেন, পাশের বাসায় নতুন ভাড়াটিয়া এসেছে, তারা
কি ভাববে বল বাবা।
নাইমঃ ঠিক
আছে তুমি দরজাটা লাগিদেও, আমি শব্দ কমিয়েই খেলছি।
আম্মু চলে
যাওয়ার পরে আরও কিছুক্ষন গেইম টা নিয়ে সময় কাটালাম।
এরপর সন্ধ্যা
হয়ে গেলে, একটু বই নিয়ে পড়তে বসলাম, কিন্তু পড়ায় আর মন বসলনা, ইতির কথা ভাবছি,
পড়তে বসলেই এই এক সমস্যা, হাজার চিন্তা মাথায় ভর করে। তাও আম্মুর বকুনি শোনার ভয়ে
বই নিয়ে বসে থাকলাম, বই সরিয়ে নোট খাতা নিয়ে কিছু গনিত করে রাখলাম।
এরপর আম্মু
রাতের খাবার খেতে ডাকলে, ডাইনিং রুমে গিয়ে বসে খাওয়া-দাওয়া করে রুমে চলে আসলাম।
খানিকক্ষণ
রেস্ট নিয়ে আমার পছন্দের গিটার নিয়ে ছাদে গেলাম, গিটার বাজানোর খুব সখ আছে আমার,
গানের গলা তেমন ভালো নয়, কিন্তু সবাই বলে আমি নাকি অনেক ভাল গান গাই।
ছাদে হাল্কা
অন্ধকার একটা স্থানে বসে রাতের নিস্তব্দ পরিবেশ উপভোগ করতে লাগলাম।
গিটার টা
হাতে নিয়ে তার প্রতিটা তারে হাতের স্পর্শ করতে লাগলাম, সুন্দর একটা টুন টুন শব্দ
হতে লাগল, কি গান গাইব ভাবছি, ইতিকে দেখার পরে মনের ভিতরটা কেমন যেন উলোট পালোট
হয়ে গেছে।
তারপরেও একটা
গান দরলাম আমার খুব প্রিয় গান এটা।
“এভাবে আয়
ঘুমের ঘোরে, আরও কিছু গল্প বলে যা
এইভাবে আয় তুই এ বাসরে, কথা কিছু অল্প বলে যা
আসমান জানে কোন পিছু টানে, তোর কাছে যাওয়া, পাওয়া
চাওয়া সব আমার, এলে চুপি চুপি ছেলেমানুষী
আজ এই দিন ভালোবাসার, যাই তিলে তিলে গভীর জলে
থাকে পথ আর কি করার”।
এইভাবে আয় তুই এ বাসরে, কথা কিছু অল্প বলে যা
আসমান জানে কোন পিছু টানে, তোর কাছে যাওয়া, পাওয়া
চাওয়া সব আমার, এলে চুপি চুপি ছেলেমানুষী
আজ এই দিন ভালোবাসার, যাই তিলে তিলে গভীর জলে
থাকে পথ আর কি করার”।
গানটা শেষ
হতেই ঘুরে দেখি নীলিমা দাঁড়িয়ে আছে।
কিরে কখন এলে
তুমি?
নীলিমাঃ অনেক
আগেই এসেছি, পা টিপে টিপে এসেছি তো তাই বুজনি।
নাইমঃ তা পা
টিপে আসার দরকার পর কেন ? আর এত রাতে ছাদে আসা ঠিক হয়নি তোমার ।
নীলিমাঃ কেন,
রাতে ছাদে আসলে কি হয়, আর আম্মুকে বলেই এসেছি।
নাইমঃ হুম্ম,
তা ছাদে আসার কারন কি, ঘুম হচ্ছেনা ?
নীলিমাঃ
তোমার গিটার এর শব্দ সুনে আসলাম, সিঁড়ি তে আসতেই গান শুনতে পেলাম।
নাইমঃ ওহ,
তাহলে তো ডিস্টার্ব করে ফেললাম তোমাকে।
নীলিমাঃ আরেহ
না ভালোই লাগে তোমার গান।
নীলিমা আর
আমি আরোকিছুক্ষন কথা বলেই সেখান থেকে চলে আসলাম।
পরেরদিন
স্কুল থেকে ফিরে বাসায় এসে ফ্রেস হয়ে খাওয়া দাওয়া করে একটু ঘুমালাম, দুপুরে ঘুমাতে
আমার মোটেও ভাল লাগেনা, কিন্তু আম্মুর জন্য ঘুমাতে হয়, একদিন না ঘুমালেই হয়েছে,
আব্বুকে বলে আমাকে বকা শোনায়, তাই ভয়ে ভয়ে ঘুমাই, ঘুম আসে না, তাই কানে হেডফোন
লাগিয়ে গান শুনে শুনে, চোখ বন্দ করে রাখি, আর আম্মু মনে করেন আমি ঘুমাচ্ছি। ১ঘন্টা
পরে বিছানা থেকে উঠে ছাদে গিয়ে দোলনায় বসে মোবাইলে গেইমস খেলি। মোবাইলের প্রতি
আমার মন নির্বিষ্ট ছিল এমন সময় নূপুর এর শব্দ কানে এল, অবাক হলাম এ বাসায় আছি আজ
প্রায় ১০ বছর হল, আজ পর্যন্ত কোনদিন নূপুরের শব্দ শুনতে পেলাম না, পিছনে তাকিয়ে
দেখি ইতি সিঁড়ি দিয়ে উপড়ে আসছে, ওকে দেখে একটা ৪৪০ভোল্ট এর ধাক্কা খেলাম মনে হল,
বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেছি, এই মেয়ে এখানে এল কিভাবে, আর ওর পায়ের নূপুরের শব্দই আমার
কানে এসেছে।
ইতিও আমাকে
দেখে থমকে দাড়িয়েছে।
ইতিঃ হাই,
তুমি এখানে?
নাইমঃ
প্রশ্নটা তো আমার করার কথা, তুমি এখানে কি করে এলে ?
ইতিঃ আমরা এই
ফ্লাট ভাড়া নিয়েছি, ২য় তলার B এইটা।
নাইমঃ ওহ
ভাল।
ইতিঃ
বাড়িয়ালার ছেলের সাথে তোমার পরিচয় আছে নাকি ?
নাইমঃ তা
আছে, কিন্তু কেন একথা বলছ ?
ইতিঃ আর
বলনা, গতকাল আমি কোচিং থেকে এসে ঘুমচ্ছিলাম দুপুরে, তখন খুব জোড়ে গেইম খেলার শব্দ
পাই আমি, শব্দ শুনে বুঝতে পারি পাশের ফ্ল্যাট থেকে আওয়াজ আসছে, আর পাশের ফ্ল্যাটে
নাকি বাড়িয়ালা থাকে, আম্মু বলেছে আমাকে।
নাইমঃ ওহ,
আচ্ছা আমি বলে দিব সে যেন আর শব্দ না করে।
ইতিঃ ওহ,
ধন্যবাদ তোমাকে, যাক তোমাকে পেয়েই ভাল হল, একসাথে কোচিং এ যাওয়া যাবে, আর পড়াশোনার
ব্যাপারেও হেল্প পাওয়া যাবে, তুমি তো অনেক ব্রিলিয়ান্ট ছাত্র।
নাইমঃ আরেহ
না, তুমি তো আমার থেকে অনেক মেধাবী।
আমরা কথা
বলছিলাম এমন সময় নীলিমা এল ছাদে, আমাদের কে দেখে ওর চোখগুলো যেন জ্বলে উঠল, আমাদের
কে না ইতিকে আমার সাথে দেখে।
সিড়িতেই
দাড়িয়ে থাকল ও, আমি বললাম নীলিমা এদিকে আয়, ইতি আমরা একই কোচিং এ পড়ি, তুই তো
দেখেসিছ, জানিস ও আমাদের এই বিল্ডিং এ থাকে।
নীলিমাঃ ওহ
ভালোতো। তা তোমরা গল্প কর আমি পরে আসব।
কথা বলার
সুযোগ না দিয়েই নীলিমা সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেল। আমি আর ইতি ওর এমন ব্যবহারে অবাক
হলাম। যাই হোক, ইতিও একটু পরে চলে গেলে আমি একাই বসে রইলাম ছাদে।
ইতির কথা
ভেবে হেসে উঠলাম, বাড়িয়ালার ছেলেতো আমি, এতক্ষন আমার কাছেই আমার গুঙ্গান করছে সে,
যাক বাবা, জানে না যে আমি সেই ছেলে, যে তার দুপুরের ঘুমে বারোটা বাজিয়েছে। এখন
থেকে আর শব্দ করা যাবেনা, সাউন্ড কমিয়েই গেইম খেলতে হবে। বাসায় এসে নীলিমা কে কল
দিলাম, কোচিং এ যাওয়ার জন্য তৈরি হতে বলে আমি নিজে তৈরি হয়ে নিচে নেমে দাঁড়ালাম,
সীড়ি দিয়ে ইতিকে বের হতেই আমি একপাশে সরে দাঁড়ালাম।
ইতিঃ কি
কোচিং এ যাবেনা ?
নাইমঃ হ্যা,
সেজন্যই তো ব্যাগ নিয়ে বের হয়েছি।
ইতিঃ তাহলে
চল একসাথে যাওয়া যাক, হাটতে হাটতে গল্প করে যাওয়া যাবে।
নাইমঃ একটু
দাড়াতে পারবে, আমাদের উপরের তলার ফ্ল্যাটের একটা মেয়ে থাকে সেও একই কোচিং এ পড়ে,
একসাথেই যাই আমরা।
ইতিঃ ওহ,
আমাদের ক্লাসের নাকি সে?
নাইমঃ না,
আমাদের জুনিয়র, নীলিমা, ছাদে যাকে দেখেছ।
নীলিমা আসতেই
ওর মুখ আবার সেই বাংলার ৫এর মত হয়ে গেল, যাই হওক, আমরা তিন জন তখন কোচিং এর
উদ্দেশ্য হাঁটা দিলাম, পথে আমি আর ইতি কথা বলছিলাম, আর নীলিমা মাঝে মাঝে আমাদের
সাথে হু, হুম করে যাচ্ছে।
কোচিং এ এসে নীলিমা
ওর ক্লাসে চলে গেল, আমি আর ইতি আমাদের ক্লাসে ঢুকে গেলাম।
আমাদের কে
একসাথে দেখে ক্লাসের সবার চোখ চড়ক গাছ, বিশেষ করে বন্দু মাহিনের তো অবস্থা অনেক
খারাও, বিস্ময় আর হতাশার ছাপ বেচারার চোখে মুখে।
আমি আর ইতি
একসাথেই বসলাম, স্যার এলে আমাদের গনিত বুঝিয়ে দিয়ে, আমাদের কে বললেন করে দেখানোর
জন্য। আমি গনিত করে বসে আছি, এমন সময় মাহিন আমাকে বলছিল, বন্দু ইতিকে তোর কি পছন্দ
হয় ?
নাইমঃ না
বন্দু কেন ? (মিথ্যে করে বললাম)
মাহিনঃ যাক
বন্দু বাঁচালি। ও নাকি তোদের বাড়িতেই ভাড়া থাকে ?
নাইমঃ হুম,
কিন্তু কিভাবে জানলি ?
মাহিনঃ কাল
কোচিং শেষে ওর পিছু পিছু গিয়েছিলাম, তখন দেখতে পাই তোদের বাসার গেটের ভিতরে যেতে।
নাইমঃ ওহ,
ভাল। তা তোকে দেখিনিতো আবার।
মাহিনঃ না
আমাকে দেখতে পায়নি।
নাইমঃ হুম,
দেখে ফেললে খারাপ ভাবত অনেক।
স্যার ক্লাসে
ডুকতেই চুপ করে গেলাম আমরা। কোচিং ক্লাস শেষেই ক্লাসরুম থেকে বের হয়ে দেখি নীলিমা
দাঁড়িয়ে আছে।
নাইমঃ কিরে
দাঁড়িয়ে আসিছ কেন এখানে ?
নীলিমাঃ
তোমার জন্যই দাঁড়িয়ে ছিলাম এতক্ষন, তা এট লেট হল কেন ?
নাইমঃ নাহ,
ক্লাসের সবা মিলে বলছে পিকনিক এ যাবে, তো ইতি রাজি হচ্ছিল না যেতে, পরে আমরা সবাই
রিকোয়েস্ট করতেই রাজি হয়েছে।
নীলিমাঃ তা
তোমার রিকোয়েস্টেই রাজি হয়েছে, তাইনা।
নাইমঃ হ্যা,
কিন্তু তুই কিভাবে বুঝলি।
নীলিমাঃ
অনুমান করেছিলাম, আচ্ছা চল এখন ক্ষুদা লেগেছে সামনের ফাস্টফুড এ যাই।
নাইমঃ হ্যা,
চল আমারও তেহারি খেতে ইচ্ছে হচ্ছে।
আমি আর নীলিমা
কোচিন থেকে বের হতেই ইতি পিছন থেকে ডাক দিল,
এই নাইম,
দাড়াও, আমাকে নিয়ে যাও।
ইতিকে আসতে
দেখে নীলিমার মুখ শক্ত হয়ে গেল, আমি নীলিমার দিকে তাকিয়ে আছি ভয়ে ভয়ে, কিছু আবার
না বলে বসে।
নীলিমা আমার
দিকে তাকিয়ে বলল, আস্ত বেহায়া একটা মেয়ে, যেচে যেচে এসে ভাব জমাতে চায়, এমন মেয়ে
আমি জীবনেও দেখিনি।
নাইমঃ নীলিমা
এমনটা বলা ঠিক না তোর, আমাদের সাথে একই বাড়িতে থাকে, নতুন এসেছে, একই ক্লাসে পড়ে, তাই
বন্দুত্ব করতে চায়, এতে দোষের কি আছে বল।
নীলিমাঃ তুমি
তো ওকে দেখেই গলে গেছ মোমের মত, তোমার কাছে তো ওর সব কিছুই ভাল লাগব।
ইতি কাছে
আসতেই বলল, এই তোমরা বাসায় যাবেনা ?
নীলিমাঃ নাহ,
আমাদের একটু দেরি হবে, তুমি চলে যাও। একা একা চিনবেতো, নাকি পথ ভুলে যাবে।
নাইমঃ ইতি,
আমারা ওই ফাস্টফুড এর দোকানে যাচ্ছি, ওখানে ভাল তেহারি পাওয়া যায়, তুমিও চল আমাদের
সাথে।
ইতিঃ তাই,
আমারও তেহারি অনেক পছন্দ, চল।
নীলিমা আমার
দিকে কটমট করে তাকিয়ে আছে, মনে হয় চিবিয়ে চিবিয়ে খাবে।
ওরা আমার
পিছু পিছু এসে দোকানে ঢুকল। আমরা তিনিটা তেহারির সাথে একটা ১লি স্প্রাইট এর ওডার
দিলাম।
তেহারি খাওয়া
সময় আমি কোন কথাই বলিনি, কারন খাওয়ার সময় কথা বলাটা আমার কেন জানি পছন্দ না,
কিন্তু নীলিমা সেই কখন থেকেই ইতিকে খুচিয়ে খুচিয়ে কথা বলছে,
ইতি সব কথার
উত্তর দিচ্ছে হাসি মুখে, আর বার বার আমার দিকে তাকাচ্ছে।
ইতিকে হাসি
মুখে কথার উত্তর দিতে দেখে নীলিমা যেন আরও ক্ষেপে গেল।
আমার খাওয়া
শেষ হলে, একটুকরো লেবু চিপে রসটা স্প্রাইটের গ্লাস এ মিশিয়ে ধীরে ধীরে চুমুক
দিচ্ছিলাম আর ইতির দিকে তাকাচ্ছিলাম।
হঠাৎ মাথায়
দুষ্টুমি ভর করল, আমার ডানপাশে ইতি বসেছিল আর বা পাশে নীলিমা।
আমি আমার বা
পা দিয়ে ইতির পায়ে স্পর্শ করলাম, আমার ভিতরে সিহরন লাগল, কিন্তু বাহিরে থেকে দেখে
কেউ যেন বুজতে না পারে তাই মাথা নিচু করে স্প্রাইট এর গ্লাসে চুমুক দিয়ে যাচ্ছি,
ওদিকে আচমকা ইতির পায়ের সাথে সে কিছু অনুভব করায় নড়েচড়ে বসল ভয় পেয়ে।
ইতিকে লাফিয়ে
উঠতে দেখে, নীলিমা অবাক হল, কি হল এভাবে লাফিয়ে উঠলে যে ?
ইতিঃ না আসলে
পায়ে কিসের যেন স্পর্শ লাগল।
নাইমঃ হবে
বিড়াল মনে হয়, না হলে তেলাপোকা।
নীলিমাঃ কি
যা তা বলছিস, এখানে বিড়াল, আর তেলাপোকা আসবে কোথাথেকে, অনেকদিন ধরেই এখানে নিয়মিত
আসছি আমি, কই কোনদিন তো কিছু দেখিনাই।
নাইমঃ আমি কি
করে যানব, ইতি তুমি বল তো স্পর্শ টা কেমন লেগেছে ?
নীলিমাঃ এটা
কেমন কথা, স্পর্শ আবার কেমন লাগে।
ইতি আমার
দিকে তাকিয়ে আমার কথা শুনছে, মনে হয় বুঝতে পেরেছে আমি করেছি কাজটা।
খাওয়া শেষে
বিল দিয়ে বাসায় যাব, কিন্তু এখন হাটতেও ভাল লাগছে না, তাই একটা রিক্সা ডাক দিলাম,
রিক্সা কাছে
আসতেই, নীলিমা উঠে বসল আগে, এখন আমি উঠলে ইতি বসবে কোথায়, বা ইতি উঠলে আমি বসব
কোথায়।
তাই আমি নীলিমাকে
বলল্লাম তোরা দুজনে এই রিক্সায় চলে যা, আমি অন্যএকটা নিয়ে চলে আসব।
নীলিমাঃ না,
তুই আর আমি এইটাতে যাই, আর ইতির জন্য অন্য একটা রিক্সা ডেকে দে।
আমি পড়েছি
বিপদে, ইতি বলল, আমরা এক রিক্সাতেই যেতে পারি।
নীলিমাঃ
কিভাবে যাবে, এভাবে তিনজন বসা সম্ভব নয়।
ইতির পদ্বতি
অবলম্বনে ইতি আর নীলিমা সিটে বসেছে, আর আমি রিকশাচালক এর আসনে ওদের মুখোমুখি
বসেছি।
আমার খুব
ভালোই লাগছে, এভাবে বসতে পারায়, কিন্তু নীলিমা রাগে জ্বলে যাচ্ছে বুঝতে পারছি।
নীলিমা এদিক
ওদিক তাকাচ্ছে, আর ইতিও মাঝে মাঝে আমার দিকে তাকাচ্ছে, কিন্তু আমি ইতির দিকেই
তাকিয়ে আছি, ও আমার দিকে তাকালেই আমি অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে ফেলি।
হঠাৎ
রিক্সাচালক কষে ব্রেক করল, আচানক ব্রেক করার কারনে, আমি গিয়ে ইতির গায়ের উপর
পড়লাম, আর ওর ঠোটে আমার ঠোট এর স্পর্শ লাগল।
আমার মুখে
চুইংগাম ছিল, সেটা ইতির ঠোটে লেপ্টে গেছে একেবারেই।
এভাবে হঠাৎ
করে আমাদের একে অন্যর ঠোটের সাথে স্পর্শ লাগায়, আমার এবং ইতির হৃদস্পন্দন বেড়ে
গেল, ইতিকে বারবার নিশ্বাস দেখেই বুজতে পারলাম আমি, ওদিকে নীলিমা চোখ বর করেই আমার
দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি
রিক্সাথেকে নেমেই, ভাড়া দিয়ে ইতিকে সর্যি বলেই বাসায় চলে আসলাম।
বাসায় এসে,
এসি ছেড়ে ফ্যান ও ছেড়ে দিলাম, কিন্তু আমার শরীর ঘামা কিছুতেই বন্দ হচ্ছিল না,
টেবিল থেকে পানির গ্লাসটা হাতে নিতেই তা হাত থেকে ফ্লোরে পড়েই ভেঙে টুকরো টুকরো
হয়ে যায়।
কাঁচ ভাঙ্গার
শব্দে আম্মু আমার রুমে এসে দেখে পানির গ্লাসটা ভেঙে পরে আছে ফ্লোরে,
আম্মুঃ নাইম,
বাবা, কি করে গ্লাস টা ভাঙলি, কেটে যায় নি তো। কিরে এসিও ছাড়া, ফ্যানও চলছে, কি
হয়েছে বাবা।
আম্মুকে শুধু
কিছু হয়নি বলার পড়েই আমি অজ্ঞান হয়ে যাই।
সন্ধ্যায়
আমার জ্ঞান ফিরে। আব্বু তখন আমার পাশে বসা, আম্মুও ছিল।
আব্বুঃ কি
হয়েছে বাবা, ভয় পেয়েছিস কোন কারনে ?
নাইমঃ না
আব্বু আমি ভয় পাইনি তো। এমনি হঠাৎ মাথাটা ঘুরতে শুরু করে দিল তাই।
আম্মুঃ মাথা
ঘুরবেনা, বাহিরে কি রোদ, আর ধুলাবালি, তোমাকে কত করে বললাম, বাসার গাড়িটা ঠিক করে
দিতে, তা করলে না, এখন দেখ নিজের ছেলেই অসুস্থ হয়ে গেল। আমার এক মাত্র ছেলে।
আব্বুঃ হুম,
আমি আজকেই ওটা গ্যারেজে পাঠাচ্ছি। আচ্ছা ওকে এখন কিছু খেতে দাও।
আম্মুঃ হ্যা,
গাড়িটা তাড়াতাড়ি ঠিক করতে বল ওদের। নাইম বাবা, কি খাবি বল বাবা?
নাইমঃ আম্মু
আমি এখন কিছুই খাবনা। একটু ছাদে গিয়ে হাটি।
আম্মুঃ না না
বাবা, ডাক্তার বলেছে তোমার শরীর দূর্বল অনেক, তাই মাথা ঘুরে পরে গেছ।
মনে মনে
বলছিলাম “শালার ডাক্তার, কোন ডাক্তারি পারে না, বলে শরীর দূর্বল, শালা তোর এমন হলে
বুঝতে পারতি, কেমন লাগে”
আম্মুঃ কি
বলছিস বাবা, জোড়ে বল।
নাইমঃ আম্মু,
আমি কিছুই খাবনা এখন, শুধু এক গ্লাস দুধ দাও।
আম্মুঃ আচ্ছা
বাবা, এখন দুধ খেয়ে নে, একটু পরে স্যুপ করে দিব।
আম্মু আর
আব্বু চলে গেলে আমি বিছানায় উঠে বসলাম। মোবাইলটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষন গেইম খেললাম,
কিন্তু ভাল লাগছেনা তাই, মেক্সপ্লেয়ারে ভিডিও দেখতে বসলাম, অ্যালেক্স গুট এর ২টা
ভিডিও ডাউনলোড করেছিলাম গতকাল, গান দুটো দেখা শেষে, আবার মন যেন কেমন হয়ে গেল,
আসলে রিক্সার ঘটনাটা সাময়িক ভাবে আনন্দের হলেও, এখন ভয় করছে, যে ইতি না আবার আমার
সাথে কথা বলা বন্দ করে দেয়।
দূর কি ভাবছি
আমি, আমি কি ইচ্ছে করে চুমু দিয়েছি নাকি, যা কিছু হয়েছে সব দোষ রিক্সাচালকের।
রাতের আম্মুর
দেয়া স্যুপ খেয়ে, গিটার টা হাতে নিয়ে ছাদে চলে আসলাম, দোলনায় বসে দুল খাচ্ছি, আর
ভাবছি, ঠোটের স্পর্শ পেতেই আমার ভিতরে কেমন শিহরন যেগে উঠল, আর ওর ঠোট গুলো অনেক
ঠান্ডা, স্প্রাইট খাওয়ার কারনে হয়ত ঠাণ্ডা লেগেছে তখন।
সব কিছু মাথা
থেকে ঝেড়ে ফেলে গিটার এ টিউন তুলছিলাম তখন, কোন গান মনেই পরছে না আজকে, তাই আর গান
গাইলাম না, আবার গান গাইলে বিপদও আছে নীলিমা শুনে ফেলবে, আর ইতি কে যখন চুমুটা
দিয়ে ফেলেছি তখন তার মুখটা দেখতে কেমন ছিল তা আমার চোখে এখনও ভাসে।
আরও কিছুক্ষন
বসে চলে আসলাম বাসায়, রুমে এসে বসতে না বসতেই আবার সেই ঘটনার কথা মনে পড়ে গেল, ভাল
লাগছে খুব, বারান্দায় গিয়ে রকিং চেয়ারে বসে আছি এমন সময় পাশের বারান্দায় চোখ গেল
আমার, দেখি ইতি দাঁড়িয়ে আছে, ওর রুমের লাইটের আলোতে ওকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে,
কিন্তু আমার রুমে লাইট অফ তাই ও বুজতে পারেনি ওপাশের বারান্দায় কেউ আছে। ইতির
মুখটা কেমন যানি উজ্জ্বল আর চিন্তিত দেখাচ্ছে, কি নিয়ে ভাবছে কে জানে, তবে রিক্সার
ওই ঘটনাটা নিয়েও ভাবতে পারে,
যা কি ভাবছি
আমি, ওই ঘটনা নিয়ে ভাবার কি আছে, আর যদি ভাবেও তাহলে আমার জন্য বিপদের হতে পারে,
হয়ত আর কথাই বলবে না, আর খারাপ তো ভেবেই বসে আছে আমাকে।
পরেরদিন আর
কারও জন্য দাঁড়ালাম না, কোচিং গিয়ে এক কোনার বেঞ্চে বসে মাথা নিচু করে বসে আছি,
ক্লাসের
বন্দুদের সবাই একটু নড়েচড়ে বসল, তা দেখেই বুঝেছি ঝড় আসছে, মাথা উচু না করে উল্টো
মাথাটা আরেকটু নিচু করে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আছি। ইতি এসে মাহিনের পাশে বসল,
স্যার আসলে
সবাই উঠে দাঁড়ালো, আমিও দাঁড়িয়ে সালাম দিয়ে বসে পড়লাম, সবাই বই বের করে গতকালের
পড়া গুলো দেখছে, স্যার ইতি কে সবার আগে ডাকল বোর্ডে গনিত সমাধান করে দেয়ার জন্য,
ইতি উঠে বোর্ডের কাছে যেতেই, মাহিন আমার পিছনে খোচা দিল,
নাইমঃ কি হল,
খোঁচা দিলি ক্যান ?
মাহিনঃ
দেখছত, মামা, আজ পরি এসে আমার পাশে বসছে।
নাইমঃ হুম,
দেখেছি, তো এতে কি হয়েছে ?
মাহিনঃ কি হয়
নাই সেটা বল, এটা সম্ভব হয়েছে একমাত্র গাছ বাবার দয়ায়।
নাইমঃ গাছ
বাবা, সে আবার কে ?
মাহিনঃ আরেহ
তুই গাছ বাবার নাম জানিস না, বাবা অনেক শক্তিশালী একজন আধ্যাত্মিক মানুষ, বাবা
গাছের ফল,মূল আর পাতা ছাড়া কিছু খায় না, তাই তার নাম হয়েছে গাছ বাবা। উনি কামরূপ
কামাখ্যা থেকে সাধনা করে তন্ত্র-মন্ত্র শিখে এসেছেন।
নাইমঃ তা না
হয় বুঝলাম, তোর সেই গাছ বাবা এত কিছু জানেন, তো ওনার সাথে ইতির আর তোর কি সম্পর্ক
?
মাহিনঃ
সম্পর্ক আছে বন্দু আছে, বাবাকে আমার মনের বাসনা বলতেই উনি আমাকে কিছু গাছের পাতা
দিয়েছেন, যেটা নাকি উনি শিলং পাহাড় থেকে এনেছেন, এই গাছের পাতা প্রতিদিন দুবেলা এক
গ্লাস পানির ভিতরে চুবিয়ে খেতে হয়, আর সাথে চোখ বন্দ করে মনের যে বাসনা আছে তা
জপতে হয় ২০ বার, আমি ওনার দেয়া গাছের পাতা পানিতে ভিজিয়ে খেয়েছি রোজ দু বেলা, আর
২০ বার চোখ বন্দ করে ইতির নাম জপেছি, আর দেখ ১দিন যেতে না যেতেই ইতি আমার পাশে এসে
বসল।
নাইমঃ হ্যা
বন্দু তোর গাছ বাবার দেয়া গাছের পাতা অনেক উপকারী, তা একা একা খাচ্ছিস, নাকি
পরিবারের কাওকে দিয়ে খাচ্ছিস।
মাহিনঃ না না
আমি একাই খাচ্ছি, সবাইকে জানালে তো সবাই আমার মত গাছ বাবার থেকে পাতা নিয়ে এসে
খাবে আর তাদের মনের বাসনা পূরন হবে, তাই কাউকে বলিনি, শুধু তোকে বলল্লাম।
নাইমঃ ভাল
করেছিস, ভূলেও কাউকে বলতে যাসনা আবার, তাহলে সবাই তোকে পাগল ভেবে পাগলা গারদে
ঢুকিয়ে দিবে।
ইতি আসতেই
আমরা কথা বলা থামিয়ে দিলাম, ইতির দিকে ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে দেখি সে আমার দিকে নিরুত্তাপ
দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, চোখ আর মুখ দেখে বোজার উপায় নেই, আকাশের অবস্থা কেমন আজ।
কোচিং শেষ
হতেই সবাই রুম থেকে বের হয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়ালাম, আজ নীলিমাকেও দেখছিনা কোথাও,
রিক্সা ডেকে তাতে উঠতে যাব এমন সময়, ইতি আমার আগেই রিক্সায় উঠে বসে আছে, আমি উঠতে
গিয়েও উঠলামনা, রিক্সা চালক বলল, ভাইজান যাবেন না, আপামনি কি একাই যাইব।
আমি উত্তর
দেয়ার আগেই, ইতি বলল, কি উঠছ না কেন ?
নাইমঃ না
তুমি যাও, আমি না হয়ে অন্য রিক্সা নিয়ে যাচ্ছি। ( কিন্তু আমার মনে তখন খুশির ঢোল
বাজছে)
ইতিঃ আহা উঠো
তো, কথা আছে তোমার সাথে।
এরপর আর কিছু
না বলে রিক্সায় উঠে বসলাম আমি। রিক্সায় বসে চুপ করে আছি দেখে, ইতি কনুই দিয়ে আমাকে খোঁচা দিল।
ইতিঃ কি আজ
এত চুপচাপ, কথা বলছ না যে ?
নাইমঃ কি বলব
?
ইতিঃ কেন
কিছু বলার নেই নাকি ?
নাইমঃ একটু
ভেবে নিয়ে বলল্লাম “গতকালকের ঘটনাটার জন্য আমি অনেক লজ্জিত, আমি আসলে , ইয়ে মানে
......
ইতিঃ ঠিক আছে
আর আমতা আমতা করতে হবে না তোমাকে, আমি কিছু মনে করি নি।
নাইমঃ ইতির
দিকে তাকিয়ে, কিছু মনে করোনি মানে....., তোমার যায়গায় অন্য.....
ইতিঃ থামিয়ে
দিয়ে বলল, আমার জাগায় অন্য কেউ হলেও কিছু মনে করত না কারন যদি সেও ছেলেটিকে
ভালবাসে, আমি যানি তুমি আমাকে পছন্দ কর, ভালবাস, আর আমিও তোমাকে ভালোবাসি, আমি
শুধু তোমার থেকে শুনতে চেয়েছিলাম যে তুমি আমাকে ভালবাস, সব মেয়েরাই চায় ছেলেরা আগে
বলুক তাকে তার ভালবাসার কথা।
নাইমঃ ইতির
কথা শুনে, চলন্ত রিক্সা থেকে আমি লাফিয়ে সাথে সাথে নেমে গেলাম, আমার এমন কর্মকান্ডে ইতি অবাক, রিক্সাও থেমে দাড়িয়েছে
ততক্ষনে, ইতি কে বলল্লাম নিচে নামো,
ইতি নিচে
নামতেই, শাহরুখ খান এর মত দুহাত বাড়িয়ে দিলাম ইতির দিকে তাকিয়ে,
মাঝরাস্তায়
আমাকে এভাবে হাত বাড়াতে দেখে ইতি অনেক লজ্জা পেল, কিন্তু ততক্ষনে যা হবার তাই হয়ে
গেছে, ইতি যখন আমাকে জড়িয়ে দরেছে তখন, নীলিমা আর মাহিন সাথে আরও দুই বন্দু আমাদের
কে দেখে ফেলেছে, আমার সাদিকে কোন খেয়াল ছিলনা। ইতিই আমাকে বলল ছাড় তোমার বন্দুরা
আসছে।
ইতি কে ছেড়ে
দিতেই সে রিক্সায় গিয়ে উঠল, আমিও দেরি না করে রিক্সায় ঘিয়ে উঠলাম।
বাসায় এসে যে
যার বাসার দিকে যেতেই ইতিকে আবার জড়িয়ে দরলাম,
ইতিঃ এই ছাড়ো
ছাড়ো, এতবার দরতে হয় নাকি ?
নাইমঃ কি করব
বল, এই প্রথম প্রেম আমার, তাই মনের খুশিতে বারবার জড়িয়ে দরতে ইচ্ছে করে।
ইতিঃ হ্যা,
ওই পর্যন্তই থাকেন, অন্য কিছু চেয়ে বইসেন না আবার, আর শন কথায় কথায় জড়িয়ে দরবে না,
ভালবাসা দূর থেকেই প্রকাশ করা যায়।
আমি হুম বলেই
আবার জড়িয়ে দরতে গেলে ইতি সিঁড়ি বেয়ে দ্রুত উপরে উঠে যায়, আমি ওর কাছে যেতে যেতেই
ও বাসার ভিতরে ঢুকে যায়। আমার রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসে গীটার হাতে নিয়ে
টিউন করছিলাম এমন সময় আম্মু এল,
আম্মুঃ এই
দেখ, কোচিং থেকে এসেই না খেয়ে এই জিনিষ নিয়ে বসেছিস, চল আগে খেয়ে নিবি, তারপর
গিটার নিয়ে বসবি বাবা।
নাইমঃ আম্মু
আজ আমার তোমার হাত দিয়ে ভাত খেতে ইচ্ছে করছে, তুমি খাইয়ে দাও না প্লিজ আম্মু।
আম্মুঃ ওমা ,
কি বলিস রে, এতদিন আমি হাজার বার বলতাম আয় বাবা, মা তোকে খাইয়ে দেই, কোনদিন আমার
হাতে খেলিনা, আজ হঠাৎ কি হল তোর একেবারে এসেই আমার হাতে খেতে চাইছিস।
নাইমঃ খাইয়ে
দিলে দিবে না দিলে নাই, এত কথা বল কেন?
আম্মুঃ আচ্ছা
বাবা, আমি এখুনি আনছি সব, তুই বস এখানে।
আম্মু চলে
যেতেই বারান্দায় গিয়ে উঁকি দিলাম, নাহ ইতিকে দেখা যায় না।
ফিরে আসব এমন
সময় ইতিকে দেখলাম বারান্দায় কাপড় নিতে এসেছে,
নাইমঃ হাই,
ইতিঃ এই তুমি
এখানে কি কর ?, এটা তো বাড়িয়ালার ছেলের বারান্দা।
নাইমঃ “আমার
বাবা এই বাড়ির মালিক তা ইতি জানেনা” হ্যা, আম্মু বলল ভাড়া দিয়ে আসতে তাই এলাম, আর
বাড়িয়ালার ছেলে আমার ভালো বন্দুও বটে।
ইতিঃ ওহ তাই
বল, সে জন্যইতো তোমাকে বলার পর থেকেই আর গেইমের শব্দ, বা কোন চিৎকার শোনা যায় না।
নাইমঃ আচ্ছা
আজকে ছাদে দেখা করা যাবে, বিকেলে।
ইতিঃ আমি এ
বাড়িতে আসার পর থেকেই ছাদে কোনদিন যাইনি, রাতের বেলা ছাদে থেকে কারও গানের শব্দ
শোনা যায়, তাই ভয়ে যাইনি।
নাইমঃ আরেহ
ওটা তো, পরক্ষনেই চুপ করে গেলাম আমি।
ইতিঃ ওটা তো
কি ? বল, থেমে গেলে কেন ?
নাইমঃ ওটা
আমাদের উপরের ফ্ল্যাটের এক বড় ভাই, তার আবার গানের খুব সখ কিনা, তাই রাতে গিটার
নিয়ে ছাদে গিয়ে একটু গান গায় আরকি, (“মিথ্যা বললাম ইতির কাছে”)।
ইতিঃ ওহ তাই
বল, আচ্ছা আম্মু ডাকছেন পরে কথা বলি।
নাইমঃ
বল্লেনা যে আসবে কিনা ছাদে ?
ইতি কিছু না
বলেই চলে গেল, আমিও রুমে এসে বিছানায় বসে পড়লাম।
আম্মু খাবার
নিয়ে আসতেই বললাম দাও আমাকে, নিজ হাতেই খাব।
আম্মুঃ কেন
রে, এইনা একটু আগে বললি আমাকে আমি জেন তোকে খাইয়ে দেই। এখন আবার নিজ হাতে খেতে
চাইছিস কেন।
নাইমঃ তখন
ভাল লাগছিল না, এখন নিজ হাতেই খাব, দাও তো প্লেট গুলো।
আম্মু রাগ
করে বলল, খাবার টেবিলে আছে, ডাইনিং এ গিয়ে খেয়ে আয়, বলেই আম্মু চলে গেল।
এই রে
আম্মুকে সত্যি ক্ষেপিয়ে দিয়েছি, আম্মুর পিছন পিছন গিয়ে আম্মুকে বলল্লাম আম্মু, আমি
বলতে চাইছিলাম সোফার রুমে বসে বসে খাব, তাতে তোমার সুবিধা বেশি।
আম্মুঃ আমার
সুবিধা কিসের আবার ?
নাইমঃ কেন,
তোমার প্রিয় সিরিয়াল দিবে একটু পরে, ভূলে গেছ নাকি ?
আম্মুঃ ও
হ্যা, আমি তো ভূলেই গিয়েছিলাম, ভালো হয়েছে রে তোর মনে আছে।
নাইমঃ হুম্ম
মনে আছে, একটা মাত্র আম্মু আমার, ভূলতে পারি নাকি?
আম্মুঃ একটা
মাত্র আম্মু মানে, কি বলিস এসব, তোর কি আরও মা চাই নাকি রে ?
নাইমঃ আরেহ
না, মুখ ফস্কে বের হয়ে গেছে, চলত ক্ষুদা লেগেছে অনেক।
সোফায় বসে
আম্মু আমাকে খাইয়ে দিচ্ছিল, এমন সময় কলিংবেল এর শব্দ হল, আম্মু ইয়ঠে গিয়ে দরজা
খুলে দেখেন ইতি দাড়িয়ে আছে, আম্মু ইতিকে ভিতরে আসতে বলল্লেন, ইতিকে দেখেই আমারতো
অবস্থা খারাপ হয়ে গেল, কারন সে জানে না আমিই সেই বাড়িয়ালার ছেলে,
ইতিও আমাকে
দেখে ভিরমি খেল মনে হচ্ছে, আমারতো গলায় ভাত আঁটকে রয়েছ, পানি খেয়ে কেশে নিলাম বার
কয়েক, আম্মু ইতিকে সোফায় বসতে বলল, ইতি এসে আমার উল্টোপাশে এসে বসল, আমার দিকে
অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আমি ওর দিকে তাকিয়ে একটু মুচকি হাসলাম।
আম্মুঃ তা
মা, তুমি তো পাশের ফ্ল্যাটের আরমান ভাই, ইলারা ভাবীর মেয়ে, তাই না ?
ইতিঃ জ্বী
আন্টি, আমি আপনাদের পাশের ফ্লাটেই থাকি।
আম্মুঃ তোমার
নামতো ইতি, অনেক সুন্দর নাম, তা মা কি মনে করে এলে ?
ইতিঃ আন্টি,
গতমাসের ভাড়াটা দিতে এসেছিলাম।
আম্মুঃ ওহ
আচ্ছা। তুমি কি খাবে বল, চা নাকি জুস।
ইতিঃ না
আন্টি আমি কিছুই খাব না।
নাইমঃ আন্টি,
আপনি জুস নিয়ে আসেন আমাদের জন্য। “আম্মুকে আন্টি বলাতে ইতি ও আম্মু দুজনেই
অবাক, তবে আম্মু আমার দিকে চোখ বড় করে তাকিয়ে আছে, দেখে আমারি ভয় করে উঠল”।
নাইমঃ আন্টি
আপনি আমাদের জন্য জুস নিয়ে আসেন, কথাগুলো বলেই আম্মুকে চোখ টিপ দিলাম।
আম্মুঃ কি
বুঝল কে জানে, আমাকে ধমক দিয়ে বলল, ওই হারামী, কি বলিস এসব, মা কে কেউ আন্টি ডাকে।
নাইমঃ আন্টি
তো মায়ের মতই, ঠিক আছে এখন থেকে আপনাকে আমি আম্মু বলেই ডাকব, এবার হল আন্টি।
আম্মুকে আবার চোখ দিয়ে ইসারা করলাম , আমার আম্মু কিছুই বুঝল না।
আম্মু; তোর
মাথা ঠিক আছেরে নাইম, কি বলিস এইসব, সেদিন হঠাৎ বাসায় এসে, রুমে ঢুকেই ফ্যান, এসি
ছেড়ে রুমে বসে আছিলি, আবার পানির গ্লাসটাও ভেঙে ফেললি, এরপর অজ্ঞান হয়ে গেলি, আবার
এখন কিসব বাজে বকসিছ বাবা।
নাইমঃ জুস
খেতে চেয়েছিলাম, প্লিজ নিয়ে আস আগে।
আমাদের
দুজনের কথোপকোথন শুনছিল ইতি, একবার আম্মুর দিকে একবার আমার দিকে তাকিয়ে আছে,
এমনিতেই ইতির চোখ অনেক বড় বড়, তারপর আরও বড় করে তাকালে দেখতে তো ভয়ংকর লাগবেই।
বার কয়েক ঢোক
গিলে বলল্লাম, কেমন আছ ?
ইতিঃ কেন
ঘন্টাখানেক আগেই তো কথা হল আমাদের, এরি মধ্যই ভূলে গেলে।
নাইমঃ ওহ
হ্যা, আম্মু আসাতে চুপ করে গেলাম।
আম্মুঃ এই
নিউ মা জুস টুকু খেয়ে নেও।
ইতিঃ না
আন্টি আমি এখন কিছু খাব না।
আম্মুঃ তা
বলল্লেই কি হয় এই প্রথম তুমি আমাদের বাসায় এসেছ। খালি মুখে গেলে কি ভাল দেখায়,
আচ্ছা মা তু কোন ক্লাসে পড়ালেখা করছ ?
ইতি বলার
আগেই আমি আম্মুকে বললাম, “আম্মু, ও আমার সাথেই পড়ে, আমার কোচিং এ পড়ে।
আম্মু; আমার
দিকে তাকিয়ে, একটু খানি হেসে, বলল্লেন তাহলে তো ভালোই, আচ্ছা তোমরা কথা বল, আমি
একটু কিচেনে যাই।
নাইমঃ চল
আমার রুমে যাবে ?
ইতিঃ কেন
তোমার রুমে যাব কেন, এখানেই বল।
নাইমঃ আরেহ
আমার রুমটা দেখাব তোমাকে, চলতো ?
ইতিকে নিয়ে
আমার রুমে গেলাম, আমার রুমে ঢুকেই ইতি মুগ্ধ্ব হয়ে গেল, বা এত সুন্দর পেইন্টিং
আছে, আর এই বই গুলো আমার অনেক ফেবারিট, তিন গোয়েন্দা, মাসুদ রানা, ওয়েস্ট্রার্ন
আমার কাছেও কিছু কালেকশন আছে। গিটার টা দেখে, ইতি আমার দিকে তাকিয়ে বলল, তাহলে
তুমি প্রতি রাতে ছাদে গিয়ে গান গাও, আর আমাকে বলল্লে উপরতলার ভাই গান গায় রাতে,
তাইনা, বলেই আমার বুকে কয়েকটা কিল দিল।
আমি মিছে
মিছি ব্যাথা পাওয়ার অভিনয় করাতেই, ইতি আমাকে একটা চুমু দিল, সাথে সাথেই আমার অভীনয়ের
মাত্রা বেড়ে গেল, এবার সে আমার কান টেনে দরল, হয়েছে আর মিথ্যা অভিনয় করতে হবেনা।
ইতিকে নিয়ে
আমি বারান্দায় গেলাম, ওতো আরও অবাক, বারান্দায় অনেক সুন্দর ফুলের কয়েকটা টব আছে,
এই জন্যইতো বলি রাতেরবেলা এত কড়া ফুলের ঘ্রাণ কোথা থেকে আসে, এই ফুলগাছ গুলো আমার
বারান্দা থেকে দেখাই যায়না। ইতিকে পিছন থেকে জড়িয়ে দরতে ইচ্ছে হচ্ছিল, দরতে যাব
এমন সময়, নীলিমা আমাকে ডাকল, নাইম ভাই, কোথায় তুমি ?
নীলিমার গলার
কন্ঠ শুনে ইতি আর আমি দুজনেই ভিমরি খেলাম, এখন যদি নীলিমা আমাদের এভাবে একই রুমে
দেখে, তাহলে সবার কাছে বলে বেড়াবে এটা যেমন ঠিক, তেমনি খুব রেগেও যাবে।
নীলিমা আমার
রুমে ঢুকেই দেখে আমি আর ইতি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি।
আমাদের
একসাথে দেখেই সে হোচট খেল মনে হল আমার কাছে,
নীলিমাঃ ওহ,
তোমার সাথে ইতিও আছে দেখছি, আচ্ছা নাইম ভাই কথা আছে তোমার সাথে, একটু বসার রুমে
আসবে।
নাইমঃ তুমি
যাও, আমরা আসছি।
নীলিমাঃ আমি
শুধু তোমাকেই বলেছি আসার জন্য।
নীলিমা ঘুরে
চলে যেতেই, আমি ইতিকে নিয়ে সোফার রুমে গেলাম। আমাদের
একসাথে আসতে দেখে নীলিমা কিছু বলতে চেয়েছিল কিন্তু পরে আর কিছু বললনা।
ইতি বলল,
তোমরা কথা বল আমি আসি এখন,
নাইমঃ না বস
তুমি, আম্মুর সাথে দেখা করে যাবে, আম্মু এখনি আসবে কিচেন থেকে।
নাইমঃ হুম নীলিমা
কি বলবে বল ?
নীলিমাঃ মাহিন
ভাই বলছিল, তুমি কি এবার কোচিং থেকে পিকনিকে যাবে নাকি। ওনারা সবাই প্ল্যান করছে
যে ১০ম-৯ম শ্রেনির সবাই মিলে কোচিং থেকে পিকনিকে যাবে।
নাইমঃ হ্যা,
আমারও অনেক ইচ্ছে আমরা একসাথে কোথাও থেকে ঘুরে আসি, তুমি কি বল ইতি।
ইতিঃ হ্যা,
তাহলে তো ভালো হয়, অনেক মজা করা যাবে সবাই মিলে।
অতঃপর আমাদের পিকনিকে যাওয়ার দিন ঠিক হলো, এবং আমরা
ঠিক করলাম আমরা সবাই মিলে জাফলং যাব, সেখানে আমি এর আগেও অনেক বার গিয়েছিলাম।
স্যার এবং
মেডাম রা মিলে একটি বাস ঠিক করলেন আমাদের জন্য আর ওনাদের জন্য আলাদা একটা মিনি বাস
নিলেন।
দুদিইন পরেই পিকনিকে
যাওয়ার কথা আমাদের, তাই এই দুদিন আমি সামান্য কিছু কেনা কাঁটা করলাম, ব্যস্থ ছিলাম
এই দুদিন তাই ইতি বা নীলিমাকে তেমন সময় দিতে পারিনি, অবশ্য এর মাঝে ইতিকে নিয়ে
একবার মার্কেটে গিয়ে ছিলাম, সে তার কিছু জিনিষ কিনবে তাই আমার সঙ্গে যাওয়া।
এরিই মধ্য
আমাদের যার যার বাসায় বলা হয়েছে আমরা পিকনিকে জাফলং যাব, স্যার মেডাম রা সাথে
যাবেন বলে কেউই আপত্তি করলেন না।
আর ইতি আর নীলিমার
ভার টা আমার উপরেই চাপল, আমি যাচ্ছি বিধায় তাদের বাবা-মা তাদের যেতে দিচ্ছেন আমার
সাথে।
পরেরদিন সকাল
৭টায় সবাই কোচিং এ এসে জড়ো হলাম, সবাই সাথে করে ছোট ছোট ব্যাগ নিয়ে এসেছে, জাফলং
এক মনোমুগ্ধ্ব কর এক পরিবেশে ঘেরা, আছে ভারতের পাহাড় থেকে আসা ঝর্নার পানি থেকে
সৃষ্ট নদী, নদীর পানি এতটাই স্বচ্ছ যে, পানির নিচে থাকা বালু, আর পাথর স্পষ্ট দেখা
যায়, আছে ছোট খাটো আরও ঝর্না, চা বাগান, কমলা বাগান, পানের বাগান এবং উপজাতি
পল্লি।
সবাই বাসে
উঠে বসলাম, মাহিন যানতে পেরেছে যে ইতির
সাথে আমার ভাব হয়ে গেছে তাই সে আর আগের মত ইতির পিছনে ঘুর ঘুর করে না, আমি নীলিমা
আর ইতির পড়েই বাসে উঠে দেখি, নীলিমা আমাকে ইশারা করছে তার পাশে বসার জন্য, ওদিকে
ইতি চাইছে তার পাশে যেন বসি, আমারও ইচ্ছা ইতিত পাশে যেন বসি, এরি মধ্য মাহিন গাড়িতে
উঠল, আমি কিছু বলার আগেই মাহিন গিয়ে নীলিমার সাথে বসে পড়ল, আমিও সুযোগ বুঝে ইতির
পাশে বসলাম।
পিছনে একটা
থাপ্পড় এর আওয়াজ পেলাম, সবাই তাকালেও আমি সে দিকে ফিরেও তাকাইনি, কারন আমি যানি
থাপ্পড় টা কে মেরেছে, আর কার গালে পড়েছে সেটা।
কিছুক্ষন পরে
সবাই স্বাভাবিক হয়ে গেল, অনান্য ছাত্ররা
সবাই মিলে গাড়ির ভিতরেই একটা ছোট খাটো গানের আসর বসিয়ে দিল, আমি সাথে গিটার
নিয়ে এসেছিলাম, আরও কয়েক জনকেও দেখলাম গিটার আর বাশি নিয়ে এসেছে, যেযেইটা ভালো
পারে। বাসে সবাই মিলে একটা খেলা শুরু করলাম, একজন একটা গান গাইবে, তার গানের শেষ
অক্ষর দিয়ে অনুজন অন্য একটা গান গাইবে, চাইলে কেউ ডুয়েট গানও গাইতে পারে, সবাই
একেকটা গান গাওয়া সুরু করল, মাহিনের সময় হলে, সে বলল, আমি এখন গান গাইব না, মাহিন
কে কেউ জোড় করেনি এরপর, নীলিমাও গান গাইতে আপত্তি করল,
আমার ইচ্ছে
ছিল তাই আমি গান গাব এর মাঝে ইতি বলল চল আমরা দুজনে মিলে একটা ডুয়েট গান গাই, আমিও
রাজি হলাম, ইতিই ঠিক করল যে আমরা কোন গান গাইব একসাথে। কুমার শানু ও মিতালী
মূখার্জীর গাওয়া গান। গিটারে টিউন করার ফাকেই অন্য একজন বাশিতে গানের সুর দিল।
আমি আর ইতি
মিলে গানটা গাইলাম একসাথেঃ
“কখনো
দেখিনি আমি, কখনো আঁকিনি আমি
এমন রূপসী কোন ছবি, শিল্পী ছিলাম তোমাকে দেখে
হয়ে গেছি আমি কবি।।
এমন রূপসী কোন ছবি, শিল্পী ছিলাম তোমাকে দেখে
হয়ে গেছি আমি কবি।।
অপ্সরা নই আমি নই উর্বশী, রূপসী
বলনা বারে বার
ভালোবাসা ভরা আছে, তুমি ছাড়া কাউকে যে
সুন্দর দেখি নাতো আর, সুন্দর চোখে দেখছ বলেই, সুন্দর লাগে যে সবই।।
ভালোবাসা ভরা আছে, তুমি ছাড়া কাউকে যে
সুন্দর দেখি নাতো আর, সুন্দর চোখে দেখছ বলেই, সুন্দর লাগে যে সবই।।
এত ভালোবাসা দিয়ে বিনিময়ে তা, জানিনা
কি দেব তোমায়?
মন ছাড়া আর কিছু চাইনা আমি, মন শুধু দিওগো আমায়
মন শুধু নাও নাও এ জীবন, নাও তুমি আছে যা সবি
দেখিনি দেখিনি আমি, এমনি প্রেমিক তুমি
কাছে তুলে নাও হীরা ভেবে, ও শিল্পী ছিলাম তোমাকে ভেবে
হয়ে গেছি আমি কবি, দেখিনি দেখিনি আমি
এমনি প্রেমিক তুমি, কাছে তুলে নাও হীরা ভেবে
ও ও শিল্পী ছিলাম তোমাকে দেখে, হয়ে গেছি আমি কবি”।
মন ছাড়া আর কিছু চাইনা আমি, মন শুধু দিওগো আমায়
মন শুধু নাও নাও এ জীবন, নাও তুমি আছে যা সবি
দেখিনি দেখিনি আমি, এমনি প্রেমিক তুমি
কাছে তুলে নাও হীরা ভেবে, ও শিল্পী ছিলাম তোমাকে ভেবে
হয়ে গেছি আমি কবি, দেখিনি দেখিনি আমি
এমনি প্রেমিক তুমি, কাছে তুলে নাও হীরা ভেবে
ও ও শিল্পী ছিলাম তোমাকে দেখে, হয়ে গেছি আমি কবি”।
গান গাওয়া
শেষ হতেই সবাই হাত তালি দিয়ে আমাদের অভিবাদন জানালো। চলতি পথে আমি একবারও নীলিমার
দিকে তাকাইনি, ইতি আমাকে বলেছিল নীলিমা আমাকে পছন্দ করে, আমিও ভেবে দেখেছি, নীলিমা
আমার প্রতি দূর্বল হয়ে পড়েছে, নীলিমার সাথে এ নিয়ে কথা বলতেই হবে, তবে তার আগে ওকে
কিছুদিন এভোয়েট করলেই আমার প্রতি ওর আবেগ টা আগের মত প্রকাশ পাবেনা, আর ওতি ছোট
বাচ্চা নয়, ও বুঝতেই পারছে ইতিকে আমি ভালোবাসি, এমনকি ইতিও আমাকে ভালবাসে। এইটা
যানার পরে ও ওর ধ্যান থেকে নিশ্চই সরে যাবে।
নাস্তা করার
জন্য গাড়ি জৈন্তিয়ার কাছে থামানো হল, আমরা সবাই একটা চা বাগানের ভিতরে ঢুকে সুন্দর
একটা স্থানে বসে পড়লাম, স্যার মেডাম রা সবাই আমাদের প্রত্যোকের হাতে, নাস্তা তুলে
দিলেন,
শিঙাড়া,
সমুচা আর কলা ছিল। আমি শিঙাড়া খাইনা, এটা নীলিমা জানত, তাই সে আমার প্লেটের শিঙাড়া
টা নিয়ে তার প্লেট থেকে আমাকে একটা সমুচা দিল।
আমি খুব খুশি
হলাম, ওকে হেসে ধন্যবাদ দিলাম, ইতির দিকে তাকিয়ে দেখলাম মুখটা কালো করে ফেলেছে সে।
চুপচাপ খাওয়া শেষ করে একপাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম এমন সময় মাহিন এল আমার পাশে,
মাহিনঃ
বন্দু, ব্যাপার কি তোদের মাঝে ?
নাইমঃ কিসের
কথা বলছিস, আর কাদের মাঝে ?
মাহিনঃ দেখ
ন্যাকামি করবিনা শালা, তোর কারনে আমি আজ সবার সামনেই .........., যাই হোক কেউ
দেখেনি, তবে বুঝতে পেরেছে কিছু হয়েছে। এখন বল তোর ইতির আর নীলিমার ভিতরে কি চলছে ?
নাইমঃ দেখ
বন্দু, আমি ইতিকে ভালোবাসি আর ইতিও আমাকে ভালোবাসে। আর নীলিমাকে আমি আমার একজন
বন্দু বলে যানি, ও তাই ভাবে আমাকে।
মাহিনঃ না
বন্দু, তুই আমাকে সব খুলে বল, তুই আবার দুই নৌকাতে পা দিস না ।
নাইমঃ ওকে,
আমি এনিয়ে নীলিমার সাথে কথা বলব, এখন তুই চলতো, সবাই ওয়েট করছে আমাদের জন্য।
আমরা সবাই
আবার গাড়িতে গিয়ে বসলাম, এইবার আমাদের সবার বসার স্থান ও চেঞ্জ হয়ে গেল, ইতির
পাশের সিটে আমার বসার কথা ছিল কিন্তু ইতি বসার সাথে সাথেই নীলিমা ইতির পাশে গিয়ে
বসল, এখন কেউ যদি বসে ইচ্ছাকৃত ভাবে তাকে তো সেখান থেকে উঠানো সমীচিন নয়, তাই আমি
আর মাহিন একসাথে বসলাম। ইতি তো রাগে ফুলছিল, আর বারবার আমার দিকে পিছন ফিরে
তাকাচ্ছিলো, ওর চোখে রাগের সাথে আমি আকুতিও দেখেছিলাম, ওর চোখ যেন বলছিল, “আমি
তোমার সাথেই বসতে চাই নাইম”।
ঘন্টাখানেক
পড়েই আমরা জাফলং পৌছে গেলাম। সময় তখন সকাল ১০.০০ মিনিট। সবাই গাড়ি থেকে নেমে সেখানকার
একটা হোটেলে ২টা রুম বুক করলাম একদিনের জন্য, স্যার এবং আমাদের ছেলেদের জন্য একটা
রুম, আর মেডাম আর মেয়েদের জন্য অন্য আরেকটা রুম। এখানে সবাই ব্যাগ রেখে, কাপড়
চেঞ্জ করে ঝর্না দেখার জন্য বেরিয়ে পড়লাম, সবাই একসাথেই যাচ্ছি সারিবধ্ব ভাবে।
ঝর্নার পানিতে গোসল করলাম, আবার নদীর পানিতে নামলাম আমরা, অনেক আনন্দ করলাম আমরা,
ইতি সাঁতার জানে, কিনতি নীলিমা জানেনা, তাই নীলিমা নদীতে নামতে চাইছিল না, আমি ওকে
জোড় করেই নদীতে নামালাম, এমনিতেই নদীর পানি তখন গলা পর্যন্ত ছিল, তবে স্রোত ছিল
অনেক, নীলিমাকে নিয়ে ইতির পাশে একটা বড় পাথরে দাড়করিয়ে দিলাম, মাহিন পানির ভিতরে
ডুব দিয়ে দিয়ে ছোট ছোট সাদা পাথর খুঁজে বেড়াচ্ছিল, তার দেখাদেখি আমি আর ইতিও তাই
করতে লাগলাম, আর তা সেই পাথর কুড়িয়ে নীলিমাকে দিচ্ছিলাম একসাথে রাখার জন্য। আমি
পানিত্রে ডুব দিয়েছি এরপর ইতিও দিল, ও আমাকে ওর কাছে টেনে নিল, তারপর আমার ঠোটে
খুব জোরেই একটা চুমু দিল, পানির ভিতরে থাকার কারনে আমার মুখে কিছুটা পানি চলে গেল
আর আমি কাশতে শুরু করেদিলাম, পানির উপরে উঠেও অনেক্ষন কাশলাম, ইতি আমাকে দরে
পাথরের কাছে নিয়ে বসিয়ে দিল, একটু পরে
সুস্থ হতেই আবার হাল্কা গোসল করে আর পানি ছিটিয়ে মজা করলাম সবার সাথে, এভাবে প্রায়
দুপুর ২.৩০বেজে গেল, স্যার আমাদের সবাইকে হোটেলে যেতে বলল্লেন, আমি নীলিমাকে টেনে
নদীর পাড়ে নিয়ে আসলাম, ইতিকেও আনতে গেলাম, সবাই মিলে হোটেলে ফিরলাম আমরা, হোটেলে
ঢুকে কাপড় চেঞ্জ করে সবাই নিচের নেমে, আগে থেকেই সিলেক্ট করে রাখা জাফলং বিজিবি
ক্যাম্পের সাথেই একটা ছাউনি আছে সেখানেই লাঞ্চের জন্য বসে পড়লাম সবাই।
আমি আর মাহিন
এবং স্যার ও মেডাম সবাইকে খাবার প্লেটে করে দিয়ে দিচ্ছিলাম, খাবার এখানেই রান্না
করা হয়েছে বাবুর্চী দিয়ে, আমরা যখন ঝর্নার পানিতে গোসল করতে ব্যস্থ ছিলাম তখন ই
তারা রান্না শুরু করেদেয়, আমাদের গোসল শেষ তাদের ও রান্না শেষ, স্যার আমাদের কে
আগেই বলেছিল, রান্না হবে বিফ বিরিয়ানি সাথে থাকবে দই ও ঠাণ্ডা পানীয়। দই টা অবশ্য
আমরা সিলেটের মোহনলাল মিষ্টান্ন ভাণ্ডার থেকে কিনে এনেছি, এদের দই ও মিষ্টি আবার মাহিন
ও আমার খুব পছন্দ।
সবাই লাঞ্চ
শেষে সেখানেই বসে একটু রেস্ট নিয়ে নিলাম, ইতি আমাকে চোখ দিয়ে ইশারা করতেই আমি উঠে
তার পিছু পিছু হাঁটা শুরু করলাম, খানিকটা পথ যেতেই সে থেমে দাঁড়ালো, আমি হেঁটে তার
পাশাপাশি এসে দাঁড়ালাম,
নাইমঃ কি
কিছু বলবা ?
ইতিঃ হুম,
আগে ওই দিকটায় চল, ওখানে একটা গেস্টহাউজ আছে।
নাইম; হুম,
আমি দেখেছি, সড়ক ও জনপদের গেস্টহাউজ ওটা, অনেক সুন্দর বাগান আছে সাথে।
ইতি আর আমি
সেদিকেই হাঁটা দিলাম, ওখানে পৌছাতেই একটা বেঞ্চে বসে পড়লাম দুজন।
নাইমঃ হুম্ম
এবার বল কি বলবা ?
ইতিঃ নাইম,
তোমাকে বলে বুঝাতে পারব না আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি, এবং আমিও জানি তুমি আমাকে
কতটা ভালোবাস, কিন্তু.....
নাইমঃ থেমে
গেলে যে, কিন্তু...কি ??
ইতিঃ তুমি নীলিমাকে
না করে দিবে সে যেন তোমার সাথে না মিশে। আমার সহ্য হয়না।
নাইমঃ এটা
কেমন কথা, সহ্য হয়না মানে কি ? সে আমাদের জুনিয়র ব্যাচ, পাশের বাসায় থাকে, আর সে
তো জানে আমি তোমাকে ভালোবাসি।
ইতিঃ আমি
জানি সে এগুলো জানে, কিন্তু সে যেনেও তোমার প্রতি তার আগ্রহ টা বাড়িয়ে দিচ্ছে দিন
দিন, সে চাইছে আমার কাছে থেকে তোমাকে ছিনিয়ে নিতে, তোমার মনটা আমার থেকে সে
ডাইভার্ট করতে চায়, সেটা কি তুমি বুঝনা, নাক বুঝেও চুপ করে আছ।
নাইমঃ ওকে,
আমি নীলিমার সাথে এ নিয়ে কথা বলব, এখন চল ওদিকে যাই সবাই চিন্তা করবে।
ইতি উঠতে
চাইছিল না, ওকে টেনে দাড় করিয়ে দিয়ে কপালে একটা চুমু একে দিলাম, তারপর হাত দরে
সবাই যেখানে বসে ছিল সেখানে ফিরে এলাম।
এসে দেখি
সবাই মিলে গান গাইছে, অনেকে আবার কবিতা বলছে, স্যার মেডাম ও আছেন সেখানে,
আমাদের দেখে
সবাই বলল আবার একটা গান গাওয়ার জন্য, স্যার-মেডাম ও বলল্লেন আমরা বাসে ছিলাম না,
তাই মিস করেছি, কিন্তু এখন আমাদের সবার সামনে গান গাইতে হবে আবার, কি আর করা
গিটার তো
সাথেই ছিল, হাতে নিয়ে পুরনো একটা গান ধরলাম আমি...
“আজ ফিরে
না গেলেই কি নয়, সন্ধ্যা নামুক না জোনাকি জ্বলুক না
নির্জনে বসি আরো কিছুটা সময়, কিছুটা সময়।
নির্জনে বসি আরো কিছুটা সময়, কিছুটা সময়।
ঘাসের আঙিনায় আধো শোয়া, তোমার
আমার মুখ জোছনা ধোয়া
এ যেন নতুন চোখে তোমাকে চাওয়া, এ যেন নতুন করে তোমাকে পাওয়া
এ যেন নতুন পরিচয়।
এ যেন নতুন চোখে তোমাকে চাওয়া, এ যেন নতুন করে তোমাকে পাওয়া
এ যেন নতুন পরিচয়।
এমন রুপালী রাত নাই হোক ভোর, শিশির
ছুঁয়ে যাক উষ্ণ অধর
এ যেন জেগে জেগে স্বপ্ন দেখা, এ যেন নীরব কোন কাব্য লেখা
এ যেন সুখের অনুনয়”।
এ যেন জেগে জেগে স্বপ্ন দেখা, এ যেন নীরব কোন কাব্য লেখা
এ যেন সুখের অনুনয়”।
গান গাওয়া শেষ হলেই
স্যার মেডাম এসে আমাকে ধন্যবাদ দিলেন, আমি নাকি খুব ভালো গান করি, সাথে গিটার ও
নাকি খুব ভালো বাজাই।
সবার সামনে এভাবে বলাতে
লজ্জাও লাগছিল খুব।
এরপর আমরা সবাই মিলে
গেলাম উপজাতি পাড়ায়, সেখানে আবার চা বাগান, কমলা বাগান আছে।
ছোট্ট মাটির রাস্তা, ঠিক
মাটির নয় বালুর রাস্তা হবে, সেই রাস্তার দুপাশে বড় বড় লম্বা গাছে, তাতে পান গাছের
লতা পেচিয়ে পেচিয়ে উপরে উঠে গেছে, আর অনেক বড় বড় পানের পাতাও আছে। অনেক জনকেই
দেখলাম সেই গাছ থেকে পান সংগ্রহ করতে। আরোও একটু ভিতরে যেতেই তাদের ঘরবাড়ি দেখতে পেলাম আমরা, বাঁশ-কাঠের
তৈরি সব, মাচার মত করে তৈরি করা, উপরে তারা সবাই বসবাস করে আর নিচের ফাকাস্থানে
তারা জঙ্গল থেকে কেটে আনা লাকড়ি এনে জমা করে রাখে, তাদের ঘরে ঢুকতে হলে বাঁশের বা
কাঠের মই দিয়ে যেতে হয়।
এরপর চা বাগান আর কমলা
বাগানঘুরে দেখলাম, সময় তখন বিকেল ৫টার মত হবে, স্যার-মেডাম দের কথা অনুযায়ি সবাই
হোটেলে ফিরে এলাম। সবাই সবার ব্যাগ ও জিনিসপত্র নিয়ে গাড়ির দিকে হাঁটা দিলাম।
সবাই গাড়িতে উথে বসল,
কিন্তু মাহিন এখনও আসেনি, তাই আমি নেমে হোটেলের দিকে এগিয়ে গেলাম, দেখি সে হোতেলের
সিঁড়িতে বসে আছে সাথে একটা বড় ব্যাগ।
নাইমঃ কিরে এখানে বসে
আসিছ কেন , গাড়ি ছেড়ে দিবে, তোর জন্যই অপেক্ষা করছে সবাই। চল ।
মাহিনঃ বন্দু আমাকে একটা
হেল্প করে, এই ব্যাগটা একা নিতে পারছিনা, তুই আর আমি মিলে এটাকে নিয়ে যাই চল।
নাইমঃ এটার ভিতরে কি
আছে, দরে দেখলাম অনেক ভারি। কি আছে এর ভিতর।
মাহিনঃ বন্দু, পাথর আছে
এর মাঝে। বাসায় নিয়ে যাব এ পাথর।
নাইমঃ এত পাথর নিয়ে গিয়ে
কি করবি ? আর বেড়াতে এসে কেউ পাথর নেয় নাকি।
মাহিনঃ কি করব বল, এত
সুন্দর পাথর, কোনটা ছেড়ে কোনটা নেই, তাই সাথে যখন গাড়ি আছে ভাবলাম সব গুলোই নিয়ে
যাই।
নাইমঃ আচ্ছা ঠিক আছে তবে
এত পাথর নিয়ে যাওয়া যাবেনা, সবাই কি বলবে তোকে বল, তার থেকে ২য়েকটা পাথর নিয়ে নে
বন্দু।
অবশেষে আমার কথায় কিছু
পাথর নিয়ে আমি মাহিন কে নিয়ে গাড়িতে উঠলাম। আমরা উঠে বসতেই গাড়ি ছেড়ে দিল।
আমি ইতির পাশে বসেছি, আর
মাহিন বসেছে অন্য ছেলের সাথে, আর নীলিমা বসেছে মেডাম এর সাথে। চলতি পথে ফিরে যেতে
খারাপ লাগছিল সবারি, সবাই খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল, আমিও ক্লান্ত ছিলাম তাই ঘুমিয়ে
পড়লাম ইতির কাঁধে মাথা রেখে। বাসায় যখন পৌছাই তখন সময় রাত ৯টা হবে, সবাই যার যার
বাসায় চলে গেলাম।
ওইদিন খাওয়া দাওয়া করেই
ঘুমিয়ে পড়ি আমি।
পরেরদিন সকাল বেলা ঘুম
থেকে উঠে স্কুলে গেলাম, পরীক্ষার রুটিন দিয়ে দিল, আর মাত্র ১৭দিন বাকি আছে, রুটিন
লিখে নিয়ে এসে বাসায় চলে এলাম। বাসার সিঁড়ি দিয়ে উঠতেই নীলিমার সাথে দেখা হল।
নীলিমাঃ তোমার সাথে আমার
কিছু কথা ছিল?
নাইমঃ হুম, বলে ফেল, মি
কথা?
নীলিমাঃ এখানে নয় ছাদে
চলো।
নাইমঃ ওকে, তাহলে আমি
রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে ছাদে আসছি।
রুমে ডুকে ফ্রেশ হয়ে
ছাদে চলে এলাম, না জানি কি বলে নীলিমা।
ছাদে গিয়ে দেখি নীলিমা
এখনো আসেনি, তাই আমি দোলনায় বসে ভাবছি কি বা বলবে সে, তবে আমার কিছু বলার আছে
তাকে।
নীলিমা আসতেই তাকে
জিজ্ঞাসা করলাম কি বলবে ?
নীলিমা; কি বলতে চাই তা
বুঝনা, কতবার তো বলেছি তুমি বুঝতে চাওনা।
নাইমঃ দেখ নীলিমা, আমি
ইতিকে ভালোনবাসি, এটা তুমি খুব ভালো করেই
জানো , তারপর ও কেন আমাকে তুমি একথা বলছ, আর সবসময় কেন এভাবে রিয়েক্ট করো,
দেখ আমি চাই তুমি আমার ভালো বন্দু হয়ে থাক, কিন্তু তোমার কার্যকলাপে সেটা মনে
হচ্ছে না আমার, আর আমার আর ইতির মাঝখানে কাঁটা হতে যেওনা আবার।
কথাগুলো বলেই সেখান থেকে
চলে আসলাম।
রাতের বেলা ছাদে গিয়ে
বসে ছিলাম অনেক্ষন কিন্তু ঘুম আসছিল না, আবার রুমে গিয়ে বারান্দায় পায়চারি করলাম
কতক্ষন কিন্তু তবুও ঘুম আসলনা। রাতে অনেক দেরি করে ঘুমানর ফলে, সকালে আর ঘুম ভাঙে
নি আমার, দুপুরে ঘুম থেকে উঠে গোসল করে নাস্তা করে নিলাম, এরপর টেবিলে বসে বই নিয়ে
অনেক্ষন বসে রইলাম, কিন্তু কোন পড়া পড়তে পারিনি, এভাবে সময় ফুরিয়েগেল তাড়াতাড়ি,
এক্সাম ও চলে এল, ভালোই হয়েছে এক্সাম, ফলাফল দিবে আগামী মাসের ১৯ তারিখ।
এই সময় জুড়ে একদম ফ্রি
আছি, তাই ভাবছিলাম ইতির সাথে দেখা করতে হলে বাসার ছাদেই দেখা করতে হবে, স্কুল আর
কোচিং এর বাহানায় আর বেরোনো যাবেনা। বারান্দায় দাঁড়িয়ে ইতির
বারান্দার দিকে তাকিয়ে আছি এ সময় ইতি বারান্দায় আসল,
ইতিঃ এই তুমি এভাবে
তাকিয়ে আছ কেন ? কেউ দেখে ফেললে ?
নাইমঃ এখানে কে দেখবে,
তোমার রুম আর আমার রুম ছাড়া অন্য কারও রুম আছে নাকি, আর আমাদের রুমে তো কেউ আসেনা।
আর দেখে ফেলল্লেই বা কি হবে, উল্টো আমাদের ভালো হবে।
ইতিঃ হুম্ম, কেমন ভালো
হবে তা আমি জানি, এখন বল কেন উঁকি দিচ্ছিলে ?
নাইমঃ উঁকি আমি দিতেই
পারি, আচ্ছা আজ রাতে ছাদে চলে এস, কথা আছে তোমার সাথে।
ইতিঃ ওকে, আসব এখন তুমি
যাও, প্লিজ।
ইতির সাথে কথা বলা শেষেই
রুমে গিয়ে বিছানায় বসলাম এমন সময় আম্মুর ডাক এল,
আম্মুঃ নাইম, এদিকে আয়তো
বাবা।
নাইমঃ হ্যা আম্মু বল কি
বলবে?
আম্মুঃ আজ তো উপরতলার
আন্টির বাসায় আমাদের সপরিবারে দাওয়াত আছে, ওনার মেয়ের নাকি জন্মদিন। তোমাকেও
আমাদের সাথে যেতে হবে।
নাইমঃ ওকে আম্মু ঠিক আছে
যাব, তবে আমি রাত ১০টার আগেই ওখান থেকে চলে আসব।
সন্ধ্যার সময় উপরতলায়
আমরা সবাই গেলাম দাওয়াতে।
আমি তো গিয়ে অবাক, ইতিও
আছে সেখানে, আবার নীলিমাও আছে, তবে নীলিমা আমার দিকে তাকিয়েও যেন দেখলনা আমাকে।
আমিও ওর কাছে যাইনি একটিবারের জন্য। ইতির সাথে গিয়ে আড্ডা দিতে লাগলাম, এ সময়
আন্টি বলল নাইম এর কন্ঠে গান শুনিনা অনেক দিন, ছেলে আমাদের রাতের বেলা ছাদে গান
করত, তাও পরীক্ষার জন্য বন্দ করে দিয়েছে।
আমি আন্টিকে বলল্লাম,
“এখনতো এক্সাম নেই তাই আবার শুনতে পারবেন”।
আন্টি তবুও নাছোড়
বান্দা, গান শনাতেই হবে তারউপর আজকে ওনার মেয়ের জন্মদিন বলে কথা। গান গাইব এমন সময়
নীলিমা গান গাওয়া শুরু করল, নীলিমার কন্ঠ অনেক মিষ্টি ছিল, আমি প্রায় চুপি চুপি ওর
গান শুনতাম।
“এই যাদুটা যদি সত্যি
হয়ে যেত, তাহলে আমি তা শিখে নিতাম
প্রথমে আমি তাকেই যাদু
করতাম।
কামনার আঁখিতে আমাকে
বেঁধে সে ধরা দেয় না
হৃদয়ে ঝড় তুলে
ভালোবাসি...বাসি বলে ভালোবাসেনা।
যদি পারতাম আমি জীবনের
সবটুকু দিয়ে
তবে ভেল্কিতে তার
দৃষ্টি-পাখিটা ধরতাম।
ছলনার বাঁশিতে আমাকে
ডেকে সে দূরে সরে যায়
ভাবনার বিষ ঢেলে ছলেবলে
কৌশলে পালিয়ে বেড়ায়
যদি জানতাম সম্মোহনের
মন্ত্রটা, তবে মন্ত্র দিয়েই মন পিঞ্জরে ভরতাম”।
নীলিমার গান শুনে সবাই
হাততালি দিলো, আমিও দিলাম, কিন্তু ইতি দিল না, তার চোখে আমি অন্যকিছু দেখেছি, নীলিমার
গান গাওয়া শেষে আমি ওর সামনে গেলাম,
নাইমঃ খুব ভাল হয়েছে
আজকের গানটা, আগের গুলোতে সুর কম ছিল, কিন্তু আজকের টা অনেক সুপার হয়েছে, একদম
ভিতর থেকে গেয়েছ তাই না।
নীলিমাঃ মনে কর কোন এক
সৈকতে বালুর উপর বসে বালুদিয়ে একটা ঘর বানালে তুমি, আর সেই ঘর বানানো শেষে চিন্তা
করলে এই ঘরের মত একদিন একটা ছোট ঘর বানাবে তুমি, এবং সেই ঘরে কাউকে নিয়ে সুখের
বাসা বাধবে, হঠাৎ তোমার সেই বালুর ঘরটা যখন অন্য কেউ এসে ভেঙে দিল, তখন যে কষ্টটা
তুমি ফিল করবে, ঠিক সেই কষ্টটা আমি ফিল করতেছি, আর করেও যাব সারাজীবন।
আমাকে কিছু বলার সুযোগ
দিলনা নীলিমা। হন হন করে বের হয়ে গেল, আমিও তার পিছু পিছু গেলাম, নীলিমা তখন ছাদের
দিকেই সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছিল।
আমি ছাদে গিয়ে দেখি এক
কোনায় বসে কান্না করছে,
ওর পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম
আমি। কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলল্লাম, দেখ নীলা, আমি তোকে বন্দু ছাড়া অন্য কিছু
ভাবিনি, আর ভাববোই বা কেন বল, বন্দুই হল একটা সম্পর্কের শেষ পরিনতি, বন্দুর থেকে
বেশি বা এর উপরে কিছু নেই। তোকে সেই যায়গায় বসিয়েছি আমি। কেউতো সারাজীবন পাশে
থাকেন, থাকলেও সুখের দিনগুলো পর্যন্ত থাকে, কিন্তু একটা বন্দু, সারাজিবন পাশে
থাকে, সুখের দিন বা কষ্টের দিন, এমনকি মরে গেলেও তার আত্মা তার বন্দু পাশে থাকে।
তুই কেন সেই যায়গাটি থেকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছিস বল ?
আমার কথার উত্তরে নীলিমা
কিছু বললনা, একনাগাড়েই কান্না করতে ছিল সে, ওর কাঁধে হাত রাখলাম আমি, কেঁপে উঠল ও,
ঘুরে আমার দিকে ফিরে আমাকে জড়িয়ে ধরল, এভাবে আচানক জড়িয়ে ধরাতে আমি হতবাক হলাম,
কারন এই প্রথম নীলিমা আমাকে স্পর্শ করল, এমনকি আমিও। ২মিনিট পর আমাকে ছেড়ে দিয়ে
বলল, ঠিক আছে, তুমি যা চাইবে তাই হবে। আমি আর তোমাদের মাঝে কাঁটা হতে চাইনা, বন্দু
হয়েই থাকব সব সময়।
কথাগুলো বলেই নীলিমা
সেখান থেকে চলে এল, আমি ছাদেই রয়ে গেলাম।
একা, একাকী আধারে
দাঁড়িয়ে, রাতের আকাশের পানে তাকিয়ে ছিলাম।
অনুষ্ঠান আগেই শেষ হয়ে
গিয়েছিল, আমি বাসায় ঢুকতেই আম্মু বলল, কিরে কোথায় গিয়েছিলি তুই, এই দেখ তোর আন্টি
তোর জন্য খাবার পাঠিয়ে দিয়েছে।
নাইমঃ আম্মু আমি এখন খাব
না, তুমি আমার রুমে রেখে দেও, পরে খেয়ে নিব আমি।
আম্মুঃ কেন বাবা, শরীর
খারাপ লাগছে নাকি, ডাক্তার ডাকি ?
নাইমঃ এত কথা কেন বল
তোমরা ? না করেছি খাব না, বাস খাব না।
আম্মুর সাথে এভাবে কথা
বলতেই চাইনি কিন্তু কি করব আমার মাথা ঠিক নেই যে, রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে বসে রইলাম।
বারান্দায় গেলাম কিন্তু
ইতির দেখা নেই। অনেক দেরী করে ঘুমিয়েছি, তাই ঘুম থেকে উঠতে উঠতে ১২টা হয়ে গেল।
ইতিকে কল দিলাম মোবাইল সুইচঅফ।
উঠে আম্মুর রুমে গেলাম
কার রাতের ব্যবহারের জন্য ক্ষমা চেয়ে নিলাম,
আম্মু আমাকে পাশে বসিয়ে
বলল, দেখ বাবা, আমি জানি না তোর কি হয়েছে, তবে মা হিসেব এটুকুই বুঝতে পারছি, তোর
কষ্ট হচ্ছে কোন কারনে, সেটা যদি বলার মত হয় তাহলে বল বাবা, এভাবে তুই মন খারাপ করে
থাকলে আমাদের ও তো খারাপ লাগে।
তোর আব্বু বলছিল, যদি
বরিশাল তোর খালামনির বাসা থেকে বেড়িয়ে আসিছ তাহলে হয়ত ভালো লাগবে তোর। কি বলিস ?
নাইমঃ আমি ভেবে দেখব
আম্মু। এখন আমাকে কিছু খেতে দাও।
নাস্তা করে আবার রুমে
গিয়ে মোবাইলটা হাতে নিয়ে ইতিকে কল দিলাম এবারও সুইচঅফ। একটা মেসেজ দিয়ে, আমি ছাদে
চলে এলাম।
দেখি ইতি বসে আছে ছাদে।
কাছে গিয়ে টেনে তুলে
গালে একটা থাপ্পড় দিলাম, কেমন তুমি, সেই কখন থেকে কল দিয়েই যাচ্ছি মোবাইলটা
পর্যন্ত সুইচঅফ করে রেখেছ, আর এখানে এসে বসে আছ।
ইতিঃ তোমার সাহস হল
কিভাবে আমার গায়ে হাত তোলার, নিজেকে কীভাব তুমি, যখন যা ইচ্ছা করবে, যার সাথে যা
ইচ্ছা করবে, আমি মেনে নিব না। গতকাল তুমি আর নীলিমা ছাদে এসেছিলে, কি করেছ তোমরা
১ঘন্টা ধরে।
নাইমঃ কেন কি করেছি তুমি
আড়ালে দাঁড়িয়ে দেখছ, আবার জিজ্ঞাসা করছ কেন, তুমি কি মনে করেছ আমি দেখিনি তোমাকে,
তোমার পায়ের আওয়াজ আমি ঠিকই চিনি।
ইতিঃ তাই নাকি, আচ্ছা
তাহলে তো তোমার সব সত্যি ধরা পরে গেল, আমি যা দেখেছি সেটাই তাহলে সত্যি, তুমি আমার
সাথে চিটিং করেছ।
নাইমঃ এখন মনে হচ্ছে
থাপ্পড় একটা নয় দুটো দেয়া উচিৎ ছিল তোমাকে।
ইতিঃ সেটাই দিচ্ছ না
কেন, দাও ?
নাইমঃ আমি এখানে ঝগড়া
করতে আসিনি, প্লিজ চুপ কর, তুমি আমাকে যেভাবে বলেছ, আমি ঠিক সেভাবেই নীলিমাকে
বুঝিয়েছি, আবার এখন তুমি কেন উল্টো কথা বলছ।
ইতিঃ আমি কোন উল্টো কথা
বলছিনা, নাইম তুমি তোমার পথে, আমি আমার পথে।
ইতি চলে আসলে আমি
সেখানেই বসে পড়লাম, কি হচ্ছে এসব আমার সাথে, যাকে খুশি করতে বন্দুর সাথে সম্পর্ক
বিচ্ছেদ করলাম, সেই আমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে।
ছাদ থেকে নিচে নেমে ইতির
বাসার সামনে গিয়ে দরজায় নক করলাম, আন্টি দরজা খুলে দিল।
আন্টিঃ আরেহ নাইম যে,
কেমন আছ বাবা, অনেকদিন পরে এলে আমাদের বাসায়। ইতির সাথে একই ক্লাসে পড় তুমি কিন্তু
একদিন এসেছে আর এলেনা আমাদের বাসায়।
নাইমঃ না আন্টি একটু
ব্যস্থ ছিলাম এক্সাম নিয়ে তাই আসা হয়নি। আন্টি ইতি কোথায় ?
আন্টিঃ ওর রুমেই আছে,
তুমি যাও আমি তোমার জন্য নাস্তা রেডি করছি।
ইতির রুমের দরজা খোলাই
ছিল, রুমে নক না করেই ঢুকে গেলাম, ইতি বালিশে মুখ গুজে শুয়েছিল, আমি গিয়ে তার পিঠে
হাত রাখলাম।
ইতি বিছানাথেকে লাফিয়ে
উঠল, ওর মুখ ফোলা ছিল, আর বালিশটা ভিজা ছিল।
ইতি; তুমি, এখানে কিভাবে
এলে, আমার রুমে এভাবে আসার স্পর্ধা হ্ল কোথা থেকে তোমার।
নাইমঃ কেন আমি কি আসতে
পারিনা, আর তুমি কান্না করছিলে কেন ?
ইতিঃ না তুমি আমার রুমে
আসতে পারনা, তাও আমার অনুমুতি ছাড়া। আর আমি কান্না করছিলাম না।
নাইমঃ তাই বুঝি, তো
কান্না না করলে তোমার বালিশ ভিজল কিভাবে, আর মুখটা ফুলে গেলইবা কি করে।
ইতিঃ তার কৈফিয়ত কি
তোমাকে দিতে হবে, যাও এখান থেকে, না হলে আমি আম্মুকে ডাকতে বাধ্য হব।
নাইমঃ দেখ ইতি আমি এখানে
শুধু তোমাকে দেখার জন্য এসেছি, তুমি আমাকে ভুল বুঝেছ।
ইতিঃ এ নিয়ে কোন কথাই
বলতে চাই না আমি, আমি সেদিন নিজের চোখে যা দেখেছি, তা মিথ্যা হবে মানতেও পারছিনা,
ধোঁকাবাজ, প্রতারক।
ইতি উত্তেজিত হয়ে পড়লে
আমি সেখান থেকে চলে আসি।
কিছুদিন আর ঘর থেকে বের
হইনা, নীলিমা এসেছিল এর মধ্য কয়েকবার, কিন্তু কোন কথাই বলিনি ওর সাথে।
সকালবেলা আম্মু ঘুম থেকে
ডেকে তুলল্লেন, নাইম আমি আর তোর আব্বু একটু বাহিরে বেরোচ্ছি, আমাদের ফিরতে দেরি
হবে, ফ্রিজে খাবার আছে, বুয়াকে বলিস গরম করে দিবে।
আম্মু চলে যাওয়ার ১ঘন্টা
পরে নীলিমা আমার রুমে এল।
নীলিমাঃ নাস্তা করেছ তুমি।
নাইমঃ কি জন্য এসেছ সেটা
বল। বাসায় কেউ নেই।
নীলিমাঃ আমি জানি, আন্টি
বাহিরে যাওয়ার সময় আমাকে বলে গেছেন।
নাইমঃ তো কি বলতে এসেছ,
বলে চলে যাও।
নীলিমাঃ আমি চলে যাচ্ছি,
আমার মামার বাসায়। ওখান থেকেই পড়াশুনা শেষ করব ভাবছি।
নাইমঃ গুড ডিসিশন, কবে
যাচ্ছ।
নীলিমাঃ তোমার খারাপ
লাগছে না ?
নাইমঃ এতে খারাপ লাগার
কি আছে।
নীলিমাঃ ওহ তাই তো খারাপ
লাগার তো কোন কারন নেই। ওকে আমি আগামীকাল সকালেই চলে যাব। ভালো থেক তুমি।
নীলিমা চলে গেলে, বিছানা
থেকে উঠে বসে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে রইলাম
অনেকক্ষণ, সত্যি কি নীলিমা
চলে যাবে, মুখে যতযাই বলি নাকেন, নীলিমা চলেগেলে ওর অভাব টা কোন কিছুর পরিবর্তেই
পূরন হবার নয়।
সারাদিন বাসায় শুয়ে-বসে
কাটিয়ে দিলাম, বিকেল নাগাদ আম্মু-আব্বু ফিরে এলেন, KFC এর জিঞ্জার বার্গার আমার অনেক ফেভারিট তাই আম্মু আমার জন্য ২টা বার্গার
নিয়ে এলেন।
আম্মু রুমে ঢুকেই আমার
হাতে বার্গারের প্যাকেট দরিয়ে দিলেন।
আমিও সারাদিন কিছু
খাইনি, তাই বার্গার ২টা তখনি খেয়ে নিলাম।
সন্ধ্যা হয়ে এলে, একটু
টিভি দেখতে বসলাম, আমার পছন্দের একটা মুভি ছিল সেটা, ইংলিশ মুভি, Perfume – The Story Of A Murderer.
ছবিটা যতক্ষন দেখেছি
ভালো লেগেছিল, ছবিটা শেষ হওয়ার পর, ফ্রেশ হয়ে খেতে গেলাম। খাবার টেবিলে বসতেই
আম্মু আমার প্লেটে খাবার বেড়ে দিলেন।
আব্বু বললেন, নাইম তা
পরীক্ষা শেষ হলে সবাই কোথাও না কোথাও বেড়াতে যায়, তা তুমি কোথায় যাবে ঠিক করলে।
নাইমঃ সে রকম ভাবে
ভাবিনি আমি আব্বু, আর এখানেই আমার ভাল লাগছে, কোথাও যেতে ইচ্ছে করছেনা।
আব্বুঃ তোমার মায়ের আর
আমারও ইচ্ছা তুমি বরিশালে তোমার খালামনির বাড়িতে গিয়ে কয়েকদিন ঘুরে আস, তিনি
বারবার করে বলছেন সেখানে যাওয়ার জন্য।
নাইমঃ আচ্ছা, এনিয়ে আমি
পরে জানাবো আব্বু।
খাওয়া শেষে রুমে গিয়ে
রেস্ট নিলাম, ঘুম আসছিলনা তাই ছাদে চলে গেলাম।
দোলনায় বসে আছি একা,
চারদিকে চুপচাপ, নীকষ কালো ওই আকাশের বুকে জ্বল জ্বল করে তারা রা জ্বলছে শুধু।
উঠে দাঁড়িয়ে রেলিং এর
সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম, রেলিং এর নিচেই একটা পরগাছা ছিল সেটা তুলতে যাব ঠিক তখনি
পিছন থেকে কেউ আমাকে ঝাপ্টে দরল।
ইতিঃ কি করতে চাইছ তুমি,
পাগল হয়ে গেছ।
নাইমঃ তুমি এখানে,
কিভাবে এলে।
ইতিঃ তার আগে বল, তুমি
আত্নহত্যা করতে চাইছিলে কেন, আমার জন্য।
নাইমঃ কে বলেছে আমি
আত্নহত্যা করতে চাইছিলাম, আমিতো......।
ইতিঃ থাক আর মিথ্যা বলতে
হবেনা, আমি সর্যি, আমি আর তোমার সাথে খারাপ আচরন করব না, আর ভূল বুঝবনা তোমাকে।ক্ষমা
করে দাও আমাকে প্লিজ।
নাইমঃ সত্যি তো আর ভূল
বুঝবেনা আমাকে, আর দূরে ঠেলে দিবেনা, বল, ছেড়ে যাবেনা কোনদিন।
ইতিঃ সত্যি, সত্যি,
সত্যি, তিন সত্যি বললাম, আর কোনদিন এমন হবেনা।
আমিও ইতিকে পরম ভালবাসায়
জড়িয়ে দরলাম। অনেক্ষন সেখানে বসে ছিলাম, কয়েকদিনের জমানো না বলা কথা গুলো একে এক
সব বলে হাল্কা হলাম দুজনে।
এরি মধ্যো নীলিমা তার
মামার বাড়ি চলে গেল, যাওয়ার সময় সে দেখা করতে চাইছিল, কিন্তু আমি দেখা করিনি তার
সাথে। এভাবে কেটে গেল আরও কিছু সময়, পরীক্ষার রেজাল্ট প্রকাশ হল, ভাল রেজাল্টেই
পাশ করলাম, কলেজে ভর্তীর জন্য আরও ১মাস ছুটাছুটিতে ব্যস্থ হয়ে পড়লাম, এর মাঝে ইতির
সাথে মোবাইলে কথা হত আর কিছু সময়ের জন্য ছাদে বা সিঁড়িতে দেখা হত, কারন সেও আমার
মত ব্যস্থ ছিল। আমরা দুজনেই চেয়েছিলাম একই কলেজে যেন আমাদের এডমিশন হয়ে যায়,
কিন্তু ভাগ্য সূত্রে আমি ভাল কলেজে চান্স পেলেও, ইতি সেই কলেজে চান্স পায়নি, তাই
সে অন্য কলেজে এডমিশন নিল। তবে আমরা দুজনে একসাথে কলেজের উদ্দেশ্য বাসা থেকে বের
হতাম, আমার কলেজের পরেই ইতির কলেজ ছিল, বেশি দূরে ছিলনা। মাঝে মাঝে আমি ইতি কে
কলেজে পৌছে দিয়ে আসতাম, কলেজে প্রথম প্রথম ভালোই লাগত আমার, নতুন পরিবেশ, নতুন
বন্দু, নতুন স্যার-মেডাম, সত্যি অন্যরকম ভাললাগা কাজ করত আমার মাঝে। কিন্তু
কিছুদিন যেতে না যেতেই ইতির জন্য খারাপ লাগত, অনেক বন্দুকে দেখতাম তাদের জিএফ কে
নিয়ে একা বসে গল্প করছে বা আড্ডা দিচ্ছে, তাদের দেখে আমার খারাপ লাগত, আর শূন্যতা
তৈরি হত।
তাও সব ভুলে হাসিখুশি
থাকতাম কারন বন্দু মাহিন ছিল আমার সাথে, ভাগ্যক্রমে মাহিন আর আমার একই কলেজে চান্স
মিলে যায়। মাহিন আমাকে বলল, ইতিদের কলেজে ওর এক বান্দবী থাকে। এটা আমি আগে তেমন
গুরুত্ব দেইনি, কিন্তু ২মাস যেতেই আমি ইতির ভিতরে কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করলাম,
আমার সাথে আগের মত কথা বলেনা, হাসিতেও কোন আনন্দ ছিল না, আর মাঝে মাঝে বৃথায়ই রাগ
করত। প্রথম প্রথম আমি তা পাত্তা দিতাম না, কারন সম্পর্কে এমন কিছু ব্যাপার থাকে যা
দুজনেক মানিয়ে চলতে হয়, কেউ যখন রাগ করে, অন্যজনের উচিৎ তার রাগ ভাঙ্গানোর,
রাগটাকে বাড়িয়ে দেয়া নয়, তাই আমি সবসুময় এ বিষয়গুলোকে এডিয়ে চলতাম, কিন্তু একটা
মানুষ কতটা পরিমান সেক্রেফাইস করতে করতে একপর্যায়ে তার দৈর্য্যর বাধ ভেঙে যায়, ঠিক
আমারও তেমনটি হল, মাহিনের বান্দবীর সাথে দেখা করে, ইতির ব্যাপারে সব খবর নিতে
আরম্ভ করলাম।
তার থেকেই জানতে পারলাম,
ইতির সাথে তাদের কলেজের একটা ছেলে, নাম শামিম তার সম্পর্ক চলছে। কথাটা শোনার সাথে
সাথে মনে হল আমার পায়ের নিচের মাটি সরে গেছে, সেখানেই বসে পড়লাম আমি। যাকে এতটা
ভালোবাসলাম আর সেই ধোঁকা দিল আমার সাথে।
বাসায় ফিরে অপেক্ষা করতে
লাগলাম ইতির জন্য, আমার কলেজ আর ইতির কলেজ একসাথেই শেষ হয়, কিন্তু মাঝে মাঝে ইতি
আমার আগেই চলে আসে, আর আজকে আমি আগে চলে এসেছি কলেজ থেকে, এই কথা ইতিকে বলিনাই
আমি, তাই ইতি ভেবেছিল আমি এখনও কলেজে আছি, তাই সে আজ কলেজ থেকে তাড়াতাড়ি বাসায় চলে
আসে, ইতিকে দেখলাম বাসার গেইটে একটি ছেলের বাইক থেকে নেমে, তাকে বিদায় দিচ্ছে, ছাদ
থেকে সব দেখলাম আমি। এরপর সিঁড়িতে গিয়ে দাঁড়ালাম, একটু পর ইতির পায়ের শব্দ পেলাম
সিঁড়িতে, ইতি কাছে আসতেই য়ামাকে দেখে হতবাক হয়ে গেল, তাকে টেনে ছাদে নিয়ে গেলাম।
আমাকে দেখে ইতি কিছুটা
ভড়কে গিয়েছিল, চোখ দেখেই বুঝে নিয়েছি আমি।
ইতিঃ আরেহ তুমি, কলেজ
থেকে কখন এলে, আমাকে কল দিতে পারতে দুজন একসাথে আসতাম।
নাইমঃ এই ছেলেটি কে, যে
তোমাকে বাইকে করে বাসায় ড্রপ করে দিয়ে গেল, যার বাইকে বসে তুমি তাকে জরিয়ে
দরেছিলে।
ইতিঃ কোন ছেলে, কার কথা
বলছ তুমি, ও শামিম, এ আমার কলেজের সহপাঠি।
নাইমঃ কলেজের সহপাঠি র
সাথে বাইকে আসার কি প্রয়োজন ছিল। আর এলেও যখন তখন, আমাকে কল না দিয়ে তার সাথে একই
বাইকে এলে, তাও আবার জড়িয়ে দরে। ইতি, এখনও তুমি আমার সাথে মিথ্যা বলে যাচ্ছ।
তুমি কি অস্ব্যিকার করতে
পার, শামিম এর সাথে তোমার কোন সম্পর্ক নেই। শামিম এর সাথে তুমি
ক্লাস বাদ দিয়ে বেড়াতে যাও, তা কি মিথ্যা।
ইতিঃ দেখ নাইম, তুমি যা
জান সব মিথ্যা আমি...........
ইতিকে কোন কথা বলার
সুযোগ না দিয়েই ওর গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলাম।
নাইমঃ তোমার গায়ে হাত
তুলতে আমাকে তুমি বাধ্য করেছ, আমাকে যখন আর তোমার ভাল লাগেনাহ, তাহলে আমাকে সরসরি
বলে দিতে পারতে, আমি তোমার জীবন থেকে সরে যেতাম। কিন্তু তা না করে, তুমি আমাকে
নিয়ে দিনের পর দিন খেলেছ।
ইতিঃ জেনেই যখন গিয়েছ সব
তাহলে আর কিছু লুকোবনা তোমার কাছে, হ্যা আমি শামিম কে ভালবাসি, এবং এটা তোমার
অবহেলার কারনেই, নাইম।
নাইমঃ আমার অবহেলার
কারনে, মানে ?
ইতিঃ কেন মনে নেই তোমার,
এই কয়কটি মাসেই তো কতবার বলেছি তোমাকে, নীলিমা চলে যাওয়ার পরথেকেই তুমি কেমন যেন
হয়ে গেছ, ঠিক মত কথা বলনা, কোথাও ঘুরতে যেতে চাওনা, আমি জোড় করে নিয়ে গেলে মনমরা
হয়ে থাক।
নাইমঃ হ্যা তুমি
বলেছিলে, কিন্তু সেটার কারন কেন নীলিমা হবে, তোমাকে ঠিক মত কাছে পেতাম না, একা একা
লাগত তাই হয়ত এমন হত।
ইতিঃ নাইম, আমি তো
তোমাকে জানি, বুঝি আমি তুমি কেমন, তোমার এই অবহেলা, আমার প্রতি তোমার এই উদাসীনতা আমাকে
বাধ্য করেছে তোমার থেকে দূরে যেতে। আমি জানি তুমি আমাকে ভালবাস, কিন্তু এটাও সত্যি
তুমি নীলিমাকেও ভূলতে পারছ না, আর পারবেনাও, আমার তোমার প্রতি কোন অভিযোগ নেই,
কারন এই অবস্থায় আমি তোমাকে জোড় করে পেতে চাইলেও, তোমার স্পর্শ, মন সবি পাব,
কিন্তু তোমার সেই মনের অনেকটা জুড়ে আছে নীলিমা, ওই স্থানে আমার স্থান হবেনা। নাইম,
তুমি শুধু একটি রাত ভাল করে ভেবে দেখ, তুমি কি নীলিমাকে ছেড়ে থাকতে পারবে।
নাইমঃ দেখ ইতি তোমার সব
কথাই মেনে নিলাম আমি, কিন্তু এখন তো আমি তমাকেই ভালোবাসি, আর নীলিমা তো মার বন্দু
ছিল, সে ক্ষেতরে হয়ত দুয়েক সময় ওর কথা আমার মনে হয়েছে তাই বলে.....
ইতিঃ তাই বলে আর কিছু
নেই তোমার বলার নাইম। তুমি তোমার মত চল আমি আমার মত। এটাই আমার শেষ সিদ্বান্ত।
নাইমঃ এভাবে তুমি আমাকে
তোমার সিদ্বান্তের কথা চাপিয়ে দিতে পারনা, আমি মানব না এমন সিদ্বান্ত।
ইতিঃ তুমি মানলে কি
মানলে না এতে আমার কিছু যায় আসেনা, আমি তোমার ভিতরে অন্য কারও স্থান আছে যানা
সত্তেও আমি সেই স্থানের ভাগ নিতে পারিনা, কারন সেই স্থান এখন অন্যকারও জন্য। আমার
কথাগুলো তুমি হয়ত আজ নয় অন্য সময় বুঝতে পারবে।
আমাকে একপাশে ঠেলে সরিয়ে
ইতি সিঁড়ি বেয়ে ওর বাসায় ঢুকে গেল, আমিও আমার রুমে চলে এলাম, দরজা বন্দ করে
অনেকক্ষণ চুপ করে ভাবছিলাম, ইতি যা বলে গেল তাকি সত্যি ঠিক, কিন্তু আমার কেন তেমন
ফিল হয়না, নাকি ইতি ওর দোষটা আমার ঘাড়ে চাপানোর জন্য এমন কথা বলেছে আমাকে,
সারাটাদিন রুমেই ছিলাম,
আম্মু বারকয়েক ডেকে গিয়েছে, কিন্তু কোন শব্দ করিনি তাই আর কিছু বলেনি, কিন্তু
সন্ধ্যায় আবার ডাকতে এলেন, আমি দরজা খুলে দিলাম,
আম্মুঃ কিরে রুমের লাইট
অফ কেন, আর সারাদিন রুমের ভিতরে কি করছিলি।
নাইমঃ এমনি ভাল লাগছিলনা
তাই, আচ্ছা আম্মু তুমি বলেছিলে ছোট খালামনির ওখানে যাওায়র জন্য।
আম্মুঃ হ্যা, সেই কবে
থেকে বলছে সামিয়া তোকে সেখানে যাওায়র জন্য, কতদিন তকে দেখেনা, কলেজে ভর্তীর আগে
কতবার বলেও ছিলাম তোকে গিয়ে দেখে আয়, গেলিনা তো।
নাইমঃ আম্মু, এখন আমার
ইচ্ছে হচ্ছে আমি সেখানে গিয়ে পড়ালেখা করি, আমার এখানে ভালো লাগছে না, আমি বরিশালেই
থাকতে চাই।
আম্মুঃ ভেবে দেখ বাবা,
তুই সেখানে গেলে আমাদের কোন চিন্তাই থাকবেনা, কারন সামিয়ার তো কোন সন্তান নেই,
তোকেই ছেলে ভাবে ও, তুই গেলে সে অনেক খুশি হবে।
নাইমঃ ঠিক আছে আম্মু,
আমি কলেজে কাল গিয়ে প্রিন্সিপ্যাল স্যার কে বলে আসব কথাটা। তুমি আব্বুকে দিয়ে
ওনাকে একটা কল দিতে বলে দিতে বলবা।
আম্মুঃ ঠিক আছে এখন খেতে
আয়, সারাদিন কিছুই খাসনি।
পরেরদিন কলেজে ঢুকেই
সোজা প্রিন্সিপ্যাল স্যারের রুমে গেলাম,
স্যার আমাকে দেখেই বলল
হুম, তোমার বাবা কল করেছে আমাকে, তোমাকে টিসি দিয়ে দিতে আমাদের আপত্তি নেই কিন্তু,
সামনেই তোমাদের সেমিস্টার পরীক্ষা আরম্ভ হবে, এমন অবস্থা অন্য কলেজে এডমিশন পাবে
কিনা ?
নাইমঃ স্যার ওই ব্যবস্থা
করে ফেলব, আপনি আমাকিএ শুধু অনুমতি দিন।
স্যার; ওকে, তোমার যা
মর্জী।
ওইদিন ক্লাস করলাম, সবার
থেকে বিদায় নিয়ে চলে এলাম বিকেলে বাসায়।
ফ্রেশ হয়ে ঘুমালাম
অনেক্ষন, এর মধ্য ইতির কথা গুলো ভেবেছি অনেক বার, ভেবে দেখলাম, সত্যি বলছে সে,
আমার হৃদয়ের গহিনে নীলিমার একটা অবস্থান আছে, এবং সেটা পাকাপোক্ত ভাবেই আছে,
নীলিমা চলে গেলেও একেবারের জন্য হলেও আমি তাকে ভূলতে পারিনি।
সন্ধ্যায় ছাদে উঠে বসে
আছি একা, এমন সময় ইতি এল, আমাকে পিছন থেকে আমার পিঠে হাত দিয়ে বলল, কিছু ভাবছ একা
একা।
নাইমঃ নাহ, কিছুই ভাবছি
না আমি।
ইতিঃ মিথ্যা বলতে পারনা
তুমি, তাও মিথ্যা বল কেন, তোমার তোতলানো দেখেই বুঝতে পারছি তুমি আমার সাথে মিথ্যা
বলছ।
নাইমঃ হুম, ভাবছিলাম
তোমার কথাগুলো, তুমি ঠিক বলেছ, কিন্তু এখন আমি কি করব, আমি তো তোমাকেও দুঃখ
দিয়েছি, আবার নীলিমাকেও।
ইতিঃ আরেহ বোকা, এতে
দুঃখ পাওার কি হল, তুমি তোমার সত্যিকারে ভালবাসার মানুষ কে তা জানতে পেরেছ, আমিও
বুঝেছি তুমি আমার জন্য নও। আর আমরা যদি এখন একসাথে চলি, কিছুদিন পরে আমাদের
সম্পর্কের অবনতি হবেনা এটা কিভাবে ভাবলে, তাই বলছি সময় থাকতে আমাদের সম্পর্ক গুলো
যাচাই বাচাই করা দরকার।
নাইমঃ তুমি যেভাবে ভাবতে
পার, সবাই তো আর সেভাবে ভাবেনা।
ইতিঃ ভাবতে হয়, আবেগ
দিয়ে তো আর জীবন চলে না, আর তুমি তো আমার কাছ থেকে হারিয়ে যাচ্ছনা, বন্দু হয়ে পাশে
থাকবে সবসময়, কি পারবে না ?
নাইমঃ হুম, এম্ন ভালো
একজন বন্দু পাশে পেলে আর কি চাই।
ইতিঃ একটা গান শোনাও
প্লিজ, অনেকদিন তোমার গান শুনিনা।
নাইম; যাহ আমার সাথে
গিটার বা কিছু নেই, আর মুড নেই এখন।
ইতিঃ আরেহ গিটার আছেতো,
আমি নিয়ে আসছি সাথে করে।
নাইমঃ এই গিটার তুমি
কোথায় পেলে, এটা তো নীলিমার গিটার, ওর বাসায় ছিল।
ইতিঃ নীলিমা যেদিন চলে
যাচ্ছিল, সেদিন এই গিটার টা ও বাহিরে ফেলেদিয়েছিল, আমি কুড়িয়ে নিয়ে এসেছি।আমার মনে
হয় এটা তোমার কাছে ভালোই মানাবে।
নাইমঃ ওর খুব ফেভারিট
গিটার ছিল এটা, পিছনে আমার আর ওর নামের প্রথম অক্ষর দাগ কেটে আঁকা আছে, ডাবল NN ।
গিটার তা হাতে নিয়ে গলা
খুলে একটা গান গাইলা, অনেক দিন পরে রাতের নিস্তবদ্ব তার মাঝে আমার কন্ঠ যেন খুশির
জোয়ার তুলেছিল।
“দুরে দুরে
থাকা মানে দুরত্ব বেশী নয়.. কাছাকাছি থাকলে হয়তো
থমকে যেতো এ সময়..
বাতাস বলে এসেছিলে স্বপ্ন ছুয়েছি তোমাকে.. তোমার স্পর্শ আছে ঘিরে অচেনা এই কোলাহলে.. পেতে চাই তোমায় নিরব ভোরে.. শিশির ভেজা সবুজ ঘাসে..
পেতে চাই তোমায় অস্থিরতায়.. অসম্ভবের শেষ সীমান্তে..
পেতে চাই তোমায় নিরব ভোরে.. শিশির ভেজা সবুজ ঘাসে..
পেতে চাই তোমায় শত পূর্ণতায় প্রবাসে..
স্বপ্নেরা ঠিকই আছে তোমার কাজলরেখায় সেই স্বপ্ন আমার চোখে তোমাকেই শুধু চায়
দুরে দুরে থাকা মানে দুরত্ব বেশী নয়.. কাছাকাছি থাকলে হয়তো..
থমকে যেত এ সময়..
বাতাস বলে এসেছিলে..
স্বপ্ন ছুয়েছি তোমাকে.. তোমার স্পর্শ আছে ঘিরে.. অচেনা এই কোলাহলে..
পেতে চাই তোমায় নিরব ভোরে.. শিশির ভেজা সবুজ ঘাসে..
পেতে চাই তোমায় অস্থিরতায়.. অসম্ভবের শেষ সীমান্তে......”।
থমকে যেতো এ সময়..
বাতাস বলে এসেছিলে স্বপ্ন ছুয়েছি তোমাকে.. তোমার স্পর্শ আছে ঘিরে অচেনা এই কোলাহলে.. পেতে চাই তোমায় নিরব ভোরে.. শিশির ভেজা সবুজ ঘাসে..
পেতে চাই তোমায় অস্থিরতায়.. অসম্ভবের শেষ সীমান্তে..
পেতে চাই তোমায় নিরব ভোরে.. শিশির ভেজা সবুজ ঘাসে..
পেতে চাই তোমায় শত পূর্ণতায় প্রবাসে..
স্বপ্নেরা ঠিকই আছে তোমার কাজলরেখায় সেই স্বপ্ন আমার চোখে তোমাকেই শুধু চায়
দুরে দুরে থাকা মানে দুরত্ব বেশী নয়.. কাছাকাছি থাকলে হয়তো..
থমকে যেত এ সময়..
বাতাস বলে এসেছিলে..
স্বপ্ন ছুয়েছি তোমাকে.. তোমার স্পর্শ আছে ঘিরে.. অচেনা এই কোলাহলে..
পেতে চাই তোমায় নিরব ভোরে.. শিশির ভেজা সবুজ ঘাসে..
পেতে চাই তোমায় অস্থিরতায়.. অসম্ভবের শেষ সীমান্তে......”।
গান শেষেই ইতি আমাকে
জড়িয়ে কান্না করতে লাগল, আমিও কান্না করে দিলাম। আমি যানি আমার জন্য ওর এই
ভালবাসার আত্নাহুতি, এমন কাউকে জিবনে পাওয়া ভাগ্যর বেপার অনেক।
ইতিকে বললাম আমি বরিশালে
চলে যাচ্ছি, আমি শুনেছি নীলিমা নাকি সেখানেই থাকে ওর মামার বাড়িতে।
ইতিঃ ওকে খুঁজে পেলে
সাথে সাথে আমাকে জানাবে, আর যোগাযোগ রাখবে সবসময় আমার সাথে।
নাইমঃ হুম, অবশ্যই রাখব,
ভালো থেক তুমি।
পরেরদিন বরিশালের
উদ্দেশ্য সিলেট থেকে বিমানে ঢাকা হয়ে পৌছালাম বরিশাল বিমান বন্দরে। খালামনি আর
আংকেল এসেছিল আমাকে রিসিভ করতে।
ওনাদের কে সালাম করে
গাড়িতে উঠে বসলাম আমি।
বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে
খাবার টেবিলে ওনাদের সাথে কথা বললাম, কুশল বিনিময় শেষে আমরা নীরবে খাওয়া দাওয়া
করলাম,
আংকেল আমাকে রেস্ট নিতে
বললেন, আর এও বললেন বিকালে আমাকে নিয়ে বেড়াতে বের হবেন।
আমি রুমে গিয়ে আমার
ব্যাগ থেকে কাপর আর বই গুলো গুছিয়ে রাখলাম।
খালামনি এসে বসলেন আমার
পাশে, মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন, আমার ছেলেটা কত বড় হয়ে গেছে, আমার কথা মনে পরেনা
তোর, এতদিন পরে দেখতে এলি।
নাইমঃ খালামনি, পড়াশুনা
নিয়ে ব্যস্থ ছিলাম, তাই তোমাদের খবর নিতে পারিনি, আর এজন্যই তো এখন থেকে তোমার
কাছে থাকব।
খালামনিঃ হুম, মনে থাকে
যেন, আর আগামীকাল তোর আংকেল তোকে নিয়ে আমাদের এখানের কলেজে নিয়ে যাবে। এখন আরাম কর
বাবা।
খালামনি চলে গেলে, আমি
ইতিকে কল দিলাম, দুয়েকটা কথা বলে লাইন কেটে দিলাম।
বিকালে এখানকার নদী
বন্দরের ঘুরে আসলাম। রাতে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
পরেরদিন আংকেল এর সাথে
কলেজে গেলাম, ওনি আবার কলেজের সভাপতি হন, এছাড়াও এখানকার সোনালী ব্যাংকের
ম্যানেজার।
এডমিশন হয়ে গেল তাই, আমি
গিয়ে ক্লাসের সামনে গেলাম, প্রিন্সিপ্যাল স্যার আমাকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন।
ক্লাসে ঢুকে সামনের সিটে
বসলাম আমি। ক্লাস শেষ হতেই অনেকের সাথে ভাব হয়ে গেল, সবাই এখানকার অনেক নম্র্য
সভ্বাবের। বন্দুত্ব হয়ে গেল অনেকের সাথে।
এভাবেই চলতেছিল আমার
দিনগুলো, এর মাঝে কয়েকবার ইতির সাথে কথা হয়েছে ও নীলিমার মায়ের থেকে ওর বর্তমান
ঠিকানা নিয়েছে।
কলেজের পরীক্ষা শেষ হতেই
সাব্বির কে নিয়ে সেই ঠিকানায় গেলাম, কিন্তু কাউকে পেলাম না, একজঙ্কে জিজ্ঞাসা
করতেই, সে বলল তারা এ বাড়ি বিক্রি করে দিয়ে অন্য যায়গায় চলে গেছে, কোথায় গেছে তা
তারা জানেনা।
মনটা দারুন ভাবে ভেঙে
গেল, সাব্বির বলল, দোস্ত তুই কোন চিন্তা করিস না, আমরা আছিতো, সবগুলো কলজেই খুঁজে
দেখব এই মেয়েকে পাওয়া যায় কিনা।
কলেজে ২য়বর্ষ পরীক্ষাও
চলে এল, ভালোকরে দিন-রাত পড়তে শুরু করেদিলাম, ইতির সাথে মাঝে মাঝে কথা হত, এভাবেই
চলত, ইতি আমাকে সান্তনা দিত সবসময়। কলেজ পাশ করে এবার
অনার্স এ ভর্তী হবার পালা, আমি যে কলেজে পড়ি সেখানে অনার্স এর সুবিধা নেই। তাই আমি
সহ সাব্বির আরও অনেকেই বরিশাল এর মেইন সিটি তেই একটা ভার্সিটি তে ভর্তি হলাম।
এর মাঝে একবার
আব্বু-আম্মুর সাথে দেখা করে এসেছি, ইতির সাথেও দেখা হয়েছে, অনেক শুকিয়ে গেছে সে।
কয়েকদিন থেকে আবার বরিশালে ফিরে আসি আমি।
বরিশালে আসার পরে আমি আর
সাব্বির মিলে অনেক যায়গায় নীলিমাকে খুঁজেছি। সাব্বির আমাকে বলেছিল দোস্ত ভাবী
দেখতে কেমন ?
আমি বলল্লাম, ভারতের
বলিউডের নায়িকা জুহি চাওলা কে দেখেছিস।
সাব্বিরঃ হ্যা, আমার
ফেবারিট একজন নায়িকা।
নাইমঃ আমার নীলিমাও
দেখতে তেমন, চোখ বড় বড়, জুহি চাওলার মত হাসলে গালে টোল পরে, আর দাঁত গুলো একটু
লম্বাটে।
সাব্বিরঃ হয়েছে দোস্ত আর
বলিস না, একেবারে মুখস্ত করে ফেলেছিস দেখছি। এখন চল ক্যান্টিনে যাই।
সাব্বিরকে নিয়ে
ক্যান্টিনে বসে আছি এমন সময় নেহা আসল, নেহা আবার সাব্বিরের জিএফ হয়।
আরেহ তোমরা এখানে সবাই,
আর আমি তোমাদের খুঁজে মরছি সারা ক্যাম্পাসে।
সাব্বিরঃ একেই বলে বলদি
মেয়ে।
নাইমঃ এখানে বলদির কি
হল, তুই সব সময় এমন করে কথা বলিস কেন, সাব্বির?
সাব্বিরঃ তুই জানিস না
বন্দু, মেয়েদের বুদবি হাটুর নিচে থাকে, কথায় আছে না, চোর গেলে বুদ্বি বাড়ে,
মেয়েদের সামনে চোর ২০টা গেলেও এদের বুদ্বি হবার নয়।
নেহাঃ কেন আমি আবার কি
বোকামী করলাম।
সাব্বিরঃ সারা ক্যাম্পাস
খুঁজে বেড়িয়েছ আমাদের, কেন তোমার মোবাইলে
টাকা নেই, কল দিতে পারতে।
নেহাঃ ওহ তাইতো, সত্যি
আমি ভূলে গিয়েছিলাম।
আমি তখন অট্টহাসিতে মত্ত
হলাম সবার সাথে।
নেহা লজ্জা পেয়ে কান্না
ভাব এমন সময় সবাই চুপ হয়ে গেল, পরে সাব্বির ওকে সর্যি বলে এ যাত্রা রক্ষা পেল।
নেহাঃ সবাইকে আমার বাসায়
আগামীকাল নিমন্ত্রন করলাম। সবাই বিকেলেই চলে আসবা, লেট করবানা।
সাব্বিরঃ কারও নেমন্ত্রন
পাইনি অনেকদিন হুল।তা উপলক্ষ্য কি নেহা ?
নেহাঃ কেন তুমি জানোনা
কিছু, ভূলে গেছ নাকি আবার ?
সাব্বিরঃ না ভূলিনি, মনে
পড়ছে তোমার খরগোশ টা বাচ্চা দিয়েছে, তুমি বলেছিলে ওটার পেটে বাচ্চা আছে। ঠিক বলেছি
?
নেহা রাগে লালা হয়ে গেল,
আমি বলল্লাম আমি জানি, আগামীকাল নেহার জন্মদিন, কি ঠিক বলেছিতো।
নেহাঃ নাইম ভাই তুমি
কিভাবে মনে রাখ, দেখ আপনজন ভূলেই গেছে আর তুমি ভাই মনে রেখছ।
সাব্বিরঃ আচ্ছা ঠিক আছে,
এখন থাম তোমরা, আমরা আগামীকাল সবাই নেহার বাসায় যাচ্ছি, ইটস ফাইনাল।
পরেরদিন নেহার বাসায়
গেলাম, সাব্বির আমাকে বাসাথেকে নিতে এসেছে ওর বাইকে, আমার রুমে ওকে বসিয়ে আমি
ফ্রেশ হতে গেলাম, এসে দেখি ওর হাতে নীলিমার গিটার ও দেখছে গিটার টা।
সাব্বিরঃ তুই গিটার
বাজাতে পারিস বলিস নিত দোস্ত।
নাইমঃ বলিনি বুঝি, এখন
আর গিটার বাজাই না, তাই হয়ত বলিনি। ওই গিটার নিচ্ছিস কেন সাথে ?
সাব্বিরঃ দোস্ত নেহার
পার্টিতে আজ তুই গান শোনাবি আমাদের, এটা নেহাত তরফ থেকে আমার আবদার দোস্ত না করিস
না।
নাইমঃ আচ্ছা ঠিক আছে চল,
নেহা অনেকবার কল দিয়ে ফেলেছে, দেরী করে গেলে আবার বকা দিবে তোকে।
বাইকে করে আমি আর
সাব্বির নেহাদের বাসায় গেলাম, আমাদের অনান্য বন্দুরা এইতিমধ্য চলে এসেছে।
নেহা তার বাবা-মায়ের
সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দেয়, আংকেল আন্টি আমাদের কে ধন্যবাদ দিলেন আমরা সবাই
এসেছি বলে, সবাই মিলে এরপর নেহাকে উইশ করলাম, আমরা সারাদিন অনেক মজা করলাম,
সন্ধ্যা হয়ে এলে, আরও অনেকেই এল, সবার সাথে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিল নেহা, কেক
কাটার সময় হয়ে এলেও নেহা কেক কাটছিলনা তাই সাব্বির বলল কি হয়েছে কারও জন্য অপেক্ষা
করছ নাকি ?
নেহাঃ আমার ছোট ভাইয়ের
হাউজ টিচার আসার কথা, সে এখনও আসছে না তাই।
সাব্বিরঃ সে মনে হয়
আসবেনা, তুমি তো বলেছে সে পার্টি, উৎসব, আনন্দ হৈচৈ পছন্দ করেনা।
নেহাঃ হুম, আচ্ছা চল
সবাইকে বসিয়ে রাখা উচিৎ নয়।
কেক কাঁটা হলে আমরা সবাই
মজা করলাম, নেহার মুখে সাব্বির কেক লাগিয়ে দিলে, নেহাও সবাইকে কেকে লাগিয়ে দিল,
আমার মুখেও সাব্বির কেক লাগিয়ে দিল, অনেকক্ষণ এভাবে দুষ্টামি করলাম আমরা, এরপর
ছাদে চলে গেলাম সবাই মিলে।
নেহা আমার সাথে গিটার
দেখে বলল, নাইম ভাই তুমি গিটার নিয়ে এসেছ, ধন্যবাদ, এখন আমাদের একটা গান শোনাতে
হবে।
নাইমঃ বন্দুর প্রেমিকা
আবদার করেছে, বন্দুর জন্য তো রাখতে হবে।
নেহাঃ কেন আমি তোমার ছোট
বোন না, কি আমার কথা রাখবেনা।
নাইমঃ তাতো রাখবই, আচ্ছা
কোন গান শুনবে বল, আজ যেটা বলবে সেটাই শোনাব।
নেহার পছন্দের গানটা
গাইলাম, এরপর অনেকে রিকোয়েস্ট করল আরও কয়েকটা গান গাওয়ার জন্য, একদিনিতো আজ পেয়েছে
ওরা আমাকে, তাই সবাইকে তাদের পছন্দের গান শুনিয়ে দিলাম।
গল্প, আড্ডা আর গানে
অনেক রাত হয়ে গেল, সবাই ডিনার করে নেহা, ও তার বাবা-মায়ের থেকে বিদায় নিয়ে বাসায়
চলে এলাম।
পরেরদিন ভার্সিটিতে
গেলাম, নতুন পরিবেশ কিন্তু মুখ গুলো বেশির ভাগই চেনা, তাই আনইজি লাগছিলনা আমাদের
কারও। বেশির ভাগ সময় ক্লাস না করেই বাহিরে আড্ডা দেই সবাই, আজকেও তার ব্যক্তিক্রম
হলনা, সবাই গতকাল নেহার বাসায় পার্টি নিয়ে সবাই খুব খুশি, অনেকদিন পরে সবাই মিলে
হইচই করল, সাব্বির আমাকে জিজ্ঞেস করল, দোস্ত তোর জন্মদিন কবে রে,
নাইমঃ শেখ মুজিবের
জন্মদিন যেদিন সেদিন আমার জন্মদিন সেদিন।
নেহাঃ কবে, ১৭ই মার্চ
তাই না।
কথা বলছি সবার সাথে হঠাৎ
আমাদের পিছন থেকে কেউ নেহাকে ডাকল,
নেহা একটু এদিকে আস, কথা
আছে।
তার কন্ঠটা এতই পরিচিত ছিল
যে, আমার কানে আঘাত করছে বারবার, আর বুকের ভিতরে যেন হাতুড়ির বাড়ি মারছে।
আমি ঘুরে সেদিকে তাকিয়ে
দেখি, সে আর কেউ নয়, যার জন্য আমার এত দূর চলে আসা, যাকে ছাড়া আমি একটা দিন চিন্তা
করতে পারিনা, যে আমার কাছে আমার জগৎ, পৃথীবি সব, সেই নীলিমা দাঁড়িয়ে আছে।
অনেক পরিবর্তন লক্ষ্য
করলাম ওর মাঝে, চোখে চশমা পড়া, চুলগুলো আগে খুলে রাখত আর এখন খোপা করে রাখা, হাতে
ঘড়ি পরত সবসময়, আর এখন খালি।
চোখের নিচে হাল্কা করে কালি
জমে গেছে, মুখের লাবন্যতা কমে গিয়েছে, আর শুকিয়ে গেছে আগের থেকে অনেক।
নীলিমা আমাকে দেখতে পায়
নি, কারন আমি একটা গাছের আড়ালে বসে ছিলাম সাব্বির এর সাথে, নীলিমা যখন নেহা কে
ডেকেছিল তখন নেহা উঠে গিয়ে নীলিমার কাছে যায়, তাই নীলিমা আর সামনে আসেনি, ও একটু
সামনে এলে আমাকে দেখতে পারত।
নীলিমা চলে গেলে, আমি ওর
পিছু পিছু গেলাম মেইন গেট পর্যন্ত। কিন্তু দেখলাম সে রিক্সা নিয়ে চলে গেল।
নেহা আর সাব্বির আমার
কাছে এসে বলল, নাইম ভাই ওর পিছু নিলেন কেন এভাবে আপনি, চেনেন নাকি ওকে ?
নাইমঃ তার আগে তুমি বল,
ওকে তুমি চেন কিভাবে ?
সাব্বিরঃ আরেহ এইতো
নেহার ছোট ভাইয়ের হাউজ টিচার। আর এই ভার্সিটিতেই পড়ে।
নেহাঃ হ্যা, আর ও এখানে
ওর মামার বাড়িতে থাকে, একাই থাকে সবসময়। ভার্সিটিতে তেমন একটা আসেনা, কলেজেও আসতনা
ঠিকমত, শুধু এক্সামের সময় আসত।
সাব্বিরঃ দোস্ত এই সেই
মেয়ে, যাকে তুই এতদিন ধরে খুঁজে বেড়িয়েছিস। এই সেই নীলিমা।
নাইমঃ হ্যা এই সেই
নীলিমা। ওর জন্যই তো আসা আমার এখানে, আজ অনেকদিন পরে কাছে পেয়েও সামনে যেতে পারলাম
না আমি।
সাব্বিরঃ তাহলে সামনে
গেলি না কেন ?
নাইমঃ আসলে বুঝতে
পারছিনা, ওকে দেখেই কেমন যেন হয়ে গেছিলাম, যখন ভাবনার রেশ কেটে গেল দেখলাম চলে
যাচ্ছে।
নেহাঃ চিন্তার কি আছে,
ওর বাসায় চলে গেলেই হয়, আর তাছাড়া ও বিকেলে এখানকার একটা কোচিং সেন্টারে যায়, আইড়িয়া
আছে একটা আমার মাথায়, আমাদেরও তো ভর্তি হতেই হবেকোচিং এ, তো আমরা সবাই সেই কোচিং
এভর্তি হই না কেন ?
সাব্বিরঃ হুম, আইডিয়াটা
মন্দ নয়, তবে তার আগে যানতে হবে, নীলিমার কোন বয়ফ্রেন্ড নেইতো আবার, মানে এতদিনের
গ্যাপে তো সেটা হতেও পারে।
নাইমঃ কি যাতা বলছিস,
এসব কখনোই হবেনা। এর আগে ওর বাসা কোথায় সেটা জানতে হবে আমাকে। নেহা তুমি জান নাকি
ওর বাসা কোথায় ?
নেহাঃ আমি যানিনা, তবে
আব্বু জানবে হয়ত, আব্বুর বন্দুর ভাগনী নেহা। আমি আব্বুর থেকে ওদের বাসার ঠিকানা
এনে তোমাকে জানবো।
বিকেলের দিকে নেহার
এসএমএস পেলাম, সেখানে নীলিমার বাসার ঠিকানা দেয়া আছে, তাড়াহুড়ো করেই বাসা থেকে বের
হলাম, কিন্তু খুঁজব কোথায়, ভালোকরে লক্ষ্য করতে আমার মন চাইল, নিজের গালে নিজেই চড়
লাগাই।
আমার খালামনির বাসার
পাশের বাসার ঠিকানা এইটা, আসলেই সত্যিকথা, প্রেমে পড়লে অনেক সময় বোকামি করে ফেলে
সবাই।
যাক বাচা গেল বাসার
ঠিকানা যখন পেলাম, তাহলে তো দেখা হবেই, কিন্তু এতদিন দেখা হল না কেন ?
নেহা বলেছিল যে নীলিমা
তেমন একটা ঘর থেকে বের হয়না, আর আমিও তো বাসায় থাকিনা, এমনকি ছাদে যাই না, তাই হয়ত
দেখা হয়নি।
বাসায় ফিরে এলাম, আমকে
খালামনি দেখে বলল, কিরে এইমাত্র না বের হলি তাড়াহুড়ো করে, আবার ফিরে এলি যে, কিছু
ভূলে গেছিলি নাকি ?
নাইমঃ না, খালামনি, যে
জন্য বাহিরে যেতে চাইছিলাম তা, এখানেই আছে, কোথাও খুঁজতে হবেনা।
খালামনিঃ ওহ তাই বল, তা
কিছু খাবি এখন, আমার ক্ষুদা পেয়েছে, কিন্তু একা একা খেতে ভাল লাগছেনা।
নাইমঃ হুম, তুমি খাবার
টেবিলে সাজাও, আমি আসছি।
খাবার টেবিলে বসে,
নীলিমার মামা সম্পর্কে অনেক কিছু জানলাম খালামনির কাছ থেকে, নীলিমার বেপারেও
কিছুটা তথ্য পেলাম, নীলিমা নাকি বাসা থেকে তেমন একটা বের হয়না, তবে বিকেলে ছাদে
হাটে, অনেক সময় সন্ধ্যায় ছাদে একা একা হাটে, নীলিমার মামীর সাথে খালামনির আবার
সম্পর্ক ভাল ছিল, প্রায় দুজন, দুজনের বাসায় এসে গল্প করেন। ওরা এখানে এসছে ৭-৮ মাস
হয়েছে।
খাওয়া শেষে, রুমে গিয়ে
বারান্দায় গিয়ে পাশের বাড়িতে উঁকি দিলাম কিন্তু না, কাউকে দেখা যাচ্ছে না।
এমন সময় খালামনি হাতে
দুধের গ্লাস নিয়ে রুমে এলেন, নে বাবা, এই দুধটা খেয়ে ফেল তাড়াতাড়ি।
নাইম; খালামনি তুমিও
আম্মুর মত, জ্বলাতন কর, আমার ভাল লাগেনা ছোট বাচ্চাদের মত দুধ খেতে।
খালামনি; দেখ ছেলে কি
বলে, এটা না খেলে শরীর ভাল থাকবে কি করে, নে বাবা খেয়ে নে।
খালামনি কে খালি গ্লাস
ফিরিয়ে দিতে উনি চলে গেলেন, আমি আবার বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম, কিছুই দেখা
যাচ্ছেনা, তাই রুমে গিয়ে খোজাখুজি করে একটা বাইনোকুলার (দূরবীন) পেলাম। সেটা নিয়ে
বারান্দায় গেলাম, চোখে লাগাতেই সামনের বাড়ির জানালাটা যেন এক লাফে আমার চোখের
সামনে এসে পড়ল, হাত দিয়ে দরা যাবে এমন লাগছিল,
৩মিনিট তাকিয়ে থেকে যখন চোখ থেকে বাইনোকুলারটা নামিয়ে ফেলব তখন নীলিমা কে
দেখতে পেলাম, হাতে বই নিয়ে আছে, আর মুখের ঠোট গুলো নড়ছে, দেখে হেসে উঠলাম, আগের
স্বভাব যাইনি এখনও, আগেও এমন করত, পড়া খুব জোরেই মুখস্থ করত, এ নিয়ে কত ঠাট্টা
করতাম ওর সাথে। এরপর বইটা টেবিলে রেখে অন্য রুমে চলে গেল, আর এলনা।
মন খারাপ করে রুমে চলে
এলাম রুমেই কাটিয়ে দিলাম সার বিকেল, সন্ধ্যায় ছাদে গেলাম, যদি নীলিমা তাদের ছাদে
আসে, অনেক্ষন বসেও নীলিমাকে দেখতে পেলাম না।
ওই দিকে নেহা কে বলেছিলাম
নীলিমার মোবাইল নাম্বারটা মেসেজে দিতে, মেসেজের অপেক্ষা করছিলাম।
একটু পরে একটা মেসেজ এল
আমার মোবাইলে, সাব্বিরের নাম্বার থেকে, সেখানে নীলিমার মোবাইল নং দেয়া।
ছাদে বসেই নেহাকে কল
দিলাম, কয়েকবার রিং হল কিন্তু রিসিভ হল না।
আবার ট্রাই করতেই, ওপাশ
থেকে সেই পরিচিত কন্ঠস্বর শুনতে পেলা না, অন্য কেউ রিসিভ করেছে হয়ত।
লাইনটা কেটে দিয়ে বসে
রইলাম, ৫মিনিট পরে আবার কল দিলাম সেই নাম্বারে।
এবার নীলিমা রিসিভ করল,
হ্যালো, কে বলছেন ?
নাইমঃ আমি আপনার
শুভা-কাঙ্খী।
নীলিমাঃ ওহ তাই নাকি, তা
আপনার নাম কি ? আর আমার নাম্বার পেলেন কোথায় ?
নাইমঃ মন থেকে আল্লাহর
কাছে যা কিছু চাইলে তো উনি তা দিয়ে দেন, আর আপনার নাম্বার পাব না, মিস নীলিমা।
নীলিমাঃ হুম, আমার নাম ও
জানেন দেখছি, তা আপনার নামটা এখনও বলেন নি আমাকে ? আর কি জন্যই কল দিয়েছেন ?
নাইমঃ এতদিন পরেও আপনার
কন্ঠস্বর আমি ভুলতে পারিনি, আর আপনি আমাকে ভূলে গেলেন, বাহ ভালোই।
নীলিমা; দেখুন ভনীতা না
করে সোজাসুজি কথা বলেন নয়ত আমি কল কেটে দিতে বাধ্য হব।
নাইমঃ একটু ছাদে আসা
যাবে কি ?
নীলিমাঃ সর্যি, আমি
আপনার কথায় ছাদে যাব কেন, আর আমি ছাদে যাই না। আমি লাইন কেটে দিতে বাধ্য হচ্ছি।
নাইমঃ ওকে, ছাদে আপনাকে
আসতেই হবে.............
লাইন কেটে যেতেই আমি ছাদের একদম কিনারাতে চলে এলাম, যেখান থেকে
নীলিমার রুমের জানালা দেখা যায়।
গিটার হাতে নিয়ে বসে
আছি, কিন্তু অনেক্ষন হয়ে গেল নীলিমা এলনা।
আমিও বাসায় চলএ আসব এমন
সময় কারও ছায়া দেখতে পেলাম পাশের বাড়ির ছাদে, অন্ধকার থেকে আলোয় আসতেই নীলিমাকে
চিনতে পারলাম আমি, আমি অন্ধকারে আছি বলে সে আমাকে দেখতেই পেলনা।
নীলিমা কে কল দিলাম আবার,
কি ম্যাম ঠিকই তো এলেন, তাহলে ফোনে কেন না করছিলেন।
নীলিমাঃ আসলে আপনার
কণ্ঠটা আমার পরিচিত লাগছিল, আর ছাদে কি আছে , কেনইবা আসতে বলল্লেন তা দেখার জন্যই
ছাদে এলাম।
নাইমঃ ওহ, আচ্ছা। তা এত
কষ্ট করে যখন ছাদে আসতে পেরেছেন তখন ২মিনিট সেখানেই অবস্থান করুন।
নীলিমাঃ কেন ২মিনিট
অবস্থান করব কেন ? কি বলবেন বলেন, একটু পরে সবাই ডাকবে আমাকে।
নাইমঃ মাত্র ২মিনিট
লাগবে, একটু অপেক্ষা তো করতে ই হবে,
নীলিমা যখন ছাদে এল তখন
আমি ওর সাথে মোবাইলে কথা বলতে বলতে ওর বাসার ছাদে যাওয়ার চেষ্টা করছিলাম, ওর বাসার
ছাদ আমার খালামনির বাসার ছাদ থেকে মাত্র ৩.৫হাত দূরত্ব ছিল, মাঝখানে একটা গাছ ছিল
তাই ওই গাছ বেয়ে একটু কষ্ট করেই ওর বাসার ছাদে পৌছে গেলাম।
ছাদে আমার লাফিয়ে পড়ার
শব্দ শুনে নীলিমা মোবাইলের টর্চের আলো ফেলল, কিন্তু তার আগেই আমি অন্যদিকে সরে
গিয়েছিলাম।
পিছন থেকে পা টিপে টিপে
নীলিমার পিছনে চলে আসলাম, একহাত দিয়ে ওর মুখ চেপে দরলাম, এবং অন্যহাত দিয়ে ওকে
জড়িয়ে দরলাম, মুখে হাত দিলাম এই কারনে যেন ভয় পেয়ে চিৎকার না করে আবার,
কিন্তু নীলিমা কোন শব্দই
করল না, আমার দিকে ঘুরে তাকালো, টর্চের আলোয় ওর চোখে জল দেখেছি শুধু। আমাকে আরও
জোরে জড়িয়ে দরল সে।
নীলিমাঃ এতদিন হয়ে গেল
কোন খবর নিলে না, আর যখন এত কাছে এলে তাহলে লুকোচুরি করছিলে কেন এতদিন।
নাইমঃ তার মানে তুমি
জানতে ওটা আমি ছিলাম, যে মোবাইলে কথা বলেছে তোমার সাথে।
নীলিমাঃ হুম, যানতাম
তুমি যে আগের থেকে অনেক বোকা হয়ে গেছ এতটা ভাবিনি, নিজের নাম্বার থেকেই আমাকে কল
করেছ, তোমার নাম্বারতো আমার মোবাইলে সেইভ করা, আর আমি তো আমার পুরনো সিম ফেলে
দিয়েছি, কিন্তু তোমার আগের নাম্বারটাই সেভ করে রেখেছি, বুদ্বু কোথাকার।
নাইমঃ অনেক কষ্ট দিয়ে
ফেলেছি তোমাকে তাই না।
নীলিমাঃ হ্যা, কষ্ট তো
দিয়েছই, এজন্য শাস্তি পেতে হবে, তবুও যাক শেষ পর্যন্ত তোমাকে ফিরে পেয়েছি।
নাইমঃ শাস্তি, সেটা তো পেতেই
হবে, তবে তুমি নয় আমি বলব, অবশেষে ফিরে পেলাম তোমাকে, আমার নীলিমাকে।
নীলিমার মুখটা তুলে ওর
দিকেই তাকিয়ে থাকলাম, আগে খেয়াল করিনি, একটা ছোট তিলও আছে, ঠোটের নিচে বলে চোখে
পড়েনি, আর এতটা কাছ থেকেও তো কোনদিন দেখিনি তাকে, আজ লাইটের আলোতে সামনে থেকে
দেখলাম।
নীলিমা; কি দেখছ এমন করে
?
নাইমঃ তোমার মুখে এই তিল
এল কোথাথেকে, হুম্ম। কাজল দিয়ে করনি তো।
নীলিমাঃ আগে কখনও এমন
করে তাকিয়েছ আমার দিকে, তিল দেখে বুঝছ না আসল না নকল, তাহলে দরে দেখ।
নাইমঃ আর ধরতে হবেনা,
ওটা আসল। আমার প্রিয়তমা নীলিমার চুলগুলো দরে ওকে আমার মুখের একদম সামনে নিয়ে
আসলাম।
চোখ বন্দ করেই ছিল
নীলিমা, সেই সাথে ঠোট গুলো কাঁপছিল প্রবল ভাবে। ওই দুচোখ বন্দ করার এবং ঠোট কেন
কাঁপছিল সেই কারন কি, তা যেকোন প্রেমিক পুরুষ এমনিতেই বুঝবে।।
আমি মোবাইলের লাইটা অফ
করে দিয়ে, নীলিমার ঠোটে আমার ঠোটের স্পর্শ করেই ওখানেই স্থির রইলাম।
রাতের আকাশের তারা
জ্বলছিল শুধু, আর তাদের মধ্যমনি হয়ে ছিল চাঁদ, চারিদিকে নীরব নির্জন, কোন শব্দই
নেই, যেন আমাদের দুজনার কথা চুপ করে রাতের পাখিরা এমনকি বাতাসরাও শুনছিল।
শুধু আমার কানে ও বুকে নীলিমার
ঘরম শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ ও অনুভব হচ্ছিল।
আরদূর থেকে কানে এইগান
বেজে চলছিল।
“কাছে
এসে ভালবেসে ছুঁয়ে দিয়েছ আমায়,
তুচ্ছ করে সকল বাধাঁ তুমি ছুয়েছ হৃদয়।
তুমি ছাড়া দিশেহারা, আধারেতে আকাঁ ছবি,
তুমি এলে রঙে রঙে, রাঙিয়ে পৃথিবী”।
তুমি এলে রঙে রঙে, রাঙিয়ে পৃথিবী”।
Comments