ভালবাসার গল্প - প্রাপ্তি
গল্পের নাম প্রাপ্তি
পর্ব - ০১
রাত তখন আনুমানিক ১২টা হবে, একাকী নির্জন
রাস্তা দিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে হেঁটে চলেছি আমি।
আর আনমনে নিজের অতীত এর কথা ভাবছি।
আমার নাম মিলন, গ্রাম থেকে কাজের
উদ্দেশ্য এসেছি ঢাকা শহরে। মাদ্রাসায় পড়তাম আমি। কিন্তু বেশি পড়ালেখা করতে পারিনি অভাবের
কারনে। বাবা মারা গেছেন অনেক আগেই যখন আমার বয়স ৭ বছর ছিল, আমি আর আমার বড় বোন আর
মা এই তিন জন মিলেই আমাদের পরিবার ছিল।
বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে আমাদের পরিবারে
নেমে এল দূর্ভীক্ষ। অনাহারে, অর্ধ্বাহারে থাকতাম, মা আর বোন মিলে ইট ভাটায় কাজ
করত, তখন আমি মাদ্রাসা ছেড়ে অন্যর জমিতে কাজ করতাম। আমার মা আর বোন হাড় ভাঙা
খাটুনি করত ইটের ভাটায়। বোনের থেকে মায়ের কষ্ট হত বেশি, একে তো বয়স ছিল বেশি উনার,
বেশি দিন আর কষ্ট করতে হয়নি তাকে, আমাদের দু ভাইবোন কে ছেড়ে তিনিও বাবার কাছে চলে
গেলেন। মাঝে মাঝে ভাবি মা-বাবা কত স্বার্থপর, আমাদের দু ভাইবোন কে এভাবে একা ফেলে
চলে গেছেন ওই দূর আকাশে। বাবা চলে যাওয়ার পড়ে মাও চলেগেলেন, দু ভাইবোনের কষ্টের
সীমা ছিলনা।
অন্যর জমিতে কাজ ছেড়ে একটি ওয়ার্কসপ এ
কাজ করতে শুরু করলাম, গ্রামের ওয়ার্কসপ ছিল বলে বেতন কম দিত মাসে ১৫০০টাকা, এত কম
বেতনেও সেখানে কাজ করতাম কারন আমার ইচ্ছে ছিল এখান থেকে কাজ শিখে শহরে গিয়ে ভাল
কাজ পাব, তাই এখানে কাজ করলাম ২বছর। এর ভিতরে আমার বোনের বিয়ের বয়স পার হয়ে
যাচ্ছিল, গ্রামে ২৪-২৬ বছরের মেয়েদের কে কেউ বিয়ে করতে চায় না, আমার বোনের তখন
২৪বছর চলছিল। বোনটিও একদিন একজনের সাথে প্রেম করে পালিয়ে চলে গেল আমাকে ফেলে। ঘরের
উঠোনে বসে রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে বিধাতার নিকট অভিযোগ করতাম, কেন তিনি আমার
কাছের মানুষ গুলোকেই আমার থেকে দূরে সরিয়ে নেন। শহরে যাওয়ার ইচ্ছা থাকা সত্তেও
এতদিন বড় বোনের জন্য যেতে পারিনি সেই বোন যখন আমাকে ছেড়েই চলে গেল তাহলে আর কিসের
মায়ায় থাকব এখানে, আমাদের গ্রামে এক পাগল মহিলা ছিল, ঠিক পাগল নয়, রাস্তায় রাস্তায়
ঘুরে বেড়ায় , অন্যোর থেকে খাবার চেয়ে খায়। সেই মহিলার যেহেতু কোন ঘর বাড়ি নেই তাই তাকেই আমার বাড়ি দেখাশুনা করার জন্য আমার
বাড়িতেই তাকে থাকতে বলি। ওয়ার্কসপ এর মালিকের থেকে বকেয়া বেতন নিয়ে চলে আসি ঢাকা
শহর। আমার স্বপ্নের শহর, প্রথম কয়েকদিন অনেক ভালোই কাটল আমার, অনেক উঁচু বিল্ডিং
দেখলাম, আর অনেক লোক কে দেখলাম অনেক সুন্দর জামা-কাপড় পড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
কিছুদিন নিজের সাথে করে আনা টাকা দিয়ে
বেশ ভালোই চলেছি, কিন্তু টাকা শেষ হতেই না খেয়ে থাকতে হল, কাজ খুজেও পাচ্ছিলাম না
কোথাও, দুদিন শুধু পানি খেয়েই কাটিয়েছি, আর ঘুমিয়েছি কমলাপুর রেল স্টেশন এ। অনেক
ছেলে মেয়েদের কে দেখতাম বড় বস্থা নিয়ে কাগজ আর প্লাস্টিক খুঁজে বস্তায় ভরে তা
তাদের মালিকের নিকট জমা করে আসে, এদের নাকি টোকাই বলে। আমিও তাদের সাথে যোগ দিলাম
কিন্তু আমি কোন প্লাস্টিক খুঁজে পেলে তারা তা আমার হাত থেকে ছিনিয়ে নেয়, প্রথম
প্রথম কিছু বলতাম না কিন্তু একদিন এক ছেলেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেই, সে গিয়ে পড়ল
রেল লাইনের উপরে, মাথা ফেটে সেখানেই অজ্ঞান হয়ে যায় সে, মারা গেছে ভেবে আমি ভয় পেয়ে
সেখান থেকে পালিয়ে চলে আসি অন্য এলাকায়।
যাত্রাবাড়ি র একটা ওয়ার্কসপ এ কাজ পেয়ে
যাই তখন, সকাল থেকে কাজ করতাম রাত ১০টা পর্যন্ত আর ঘুমাতাম সেখানেই। আগে থেকে
ওয়ার্কসপ এ কাজ করার অভিজ্ঞতা ছিল বলে মালিক আমাকে ৩০০০হাজার থেকে ২মাসেই আরও
২০০০হাজার মানে বেতন ৫০০০টাকা করে দিলেন। আমার জন্য এই পাঁচ হাজার টাকা মানে অনেক
কিছু। বয়স ও তখন বেড়ে যুবকএ পরিনত হলাম, নাকের নিচে কালো চুল গজালো, একমাস পর পর
সেলুনে গিয়ে চুল আর সেভ করে আসি, সেলুনের ছেলেটা মুখে ফেনা লাগিয়ে খুর দিয়ে সেভ
করে দেয়, আবার হাত পা ম্যসাজ করে দেয়, কি ভাল লাগে বলে বুঝাতে পারবনা। এর মধ্য
সিগারেট খাওয়া শুরু করেছি আমি, প্রতিদিন ৫-৬টা সিগারেট খেতাম, তবে অন্য কোন নেশা
করতাম না। আমার বয়স তখন ১৪ বছর হবে হয়ত। ওয়ার্কসপে যখন কাজ করতাম অনেক ছেলে মেয়ে
দের কে দেখতাম স্কুল কলেজ এ ব্যাগ কাঁধে নিয়ে যেতে, দেখে আমার অনেক সময় কাহারপ
লাগত, আমারও তো এই বয়সে এদের মত স্কুলে যাওয়ার কথা ছিল। ওয়ার্কসপের এক কাস্টমারের
সাথে আমার ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠে তার কাছে নিজের অনেক না বলা কথা বা ইচ্ছার কথা প্রকাশ
করতাম, সেই আমাকে বলল, পাশেই নাকি একটা নাইট স্কুল আছে, যেখানে সুবিধা বঞ্চিত বা
যারা দিনে কাজ করতে লেখাপড়ার সুযোহ পায় না, তারাই সেখানে পড়ালেখা করে। একদিন
সন্ধ্যায় গেলাম সেখানে, হেড মাস্টার সাহেব আমাকে অনেক কিছু জিজ্ঞেস করলেন, কিন্তু
আমি যেহেতু মাদ্রাসায় পরেছি তাই তিনি আমাকে ক্লাস এইটে ভর্তি হতে বললেন, আমিও
সেখানে মাত্র ২০০টাকা দিয়ে ভর্তি হলাম, বই ফ্রী ছিল, কোন ড্রেস ছিলনা, তাও ভাল
পরালেখার সুযোগ পাচ্ছি।
দিনের বেলায় কাজ করতাম আর রাতে গোসল করে
নাস্তা করে স্কুলে যেতাম। অনেক রাত পর্যন্ত পরালেখা করতাম, যেদিন ওয়ার্কসপ বন্দ
থাকত সেদিন সারাদিন বই নিয়ে পড়তাম, অনেক কষ্ট করেই পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছিলাম,
ওয়ার্কসপের মালিক অনেক ভাল মানুষ ছিলেন আমাকে অনেক সাহায্য করতেন, আমাকে দিয়ে বেশি
কাজ করাতেন না। এস এসি পরীক্ষা দিলাম যখন আমার বয়স ছিল ১৭বছর। ভাল রেজাল্ট করলাম।
নাইট কলেজে এস এসির পড়ে পরার আর সুবিধা ছিল না, হেড মাস্টার সাহেব আমাকে ভাল কলেজে
ভর্তি হতে বললেন, কিন্তু কলেজে পড়লে আমি কাজ করতে পারবনা, আর কাজ না করলে খাব কি,
পরিধান করব কি? তখন তিনি বললেন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা, সেখানে শুধু মাত্র
শুক্রবারে ক্লাস শুরু হয় সকাল বেলা থেকে দুপুর পর্যন্ত। কিন্তু সেখানকার
সার্টিফিকিটের তেমন কোন মান নেই বর্তমানে।
আমিও বুঝলাম এখানে পড়ে আমার বোর হবার
স্বপ্ন পূরন হবে না, তাই ওয়ার্কসপের কাজ ছেড়ে দিলাম,
একটা রেস্টুরেন্ট এ নাইট শিফটে কাজ
নিলাম, দেখতে সুন্দর ছিলাম আর মোটামুটি শিক্ষিত তাই কাজ পেতে সমস্যা হয়নি, খাবার
সার্ভ করতাম, বেয়ারা বলে, বা ওয়েটার। আমার রেজালত ভাল ছিল তাই সরকারি কলেজেই চান্স
পেলাম। কলেজে আমি সাধারন পোষাকে যেতাম কারন বেতন কম ছিল আমার তখন।
রেস্টুরেন্ট এর পাশেই একটা মেস ভাড়া
নিলাম মাসে খাবার সহ আড়াই হাজার টাকা। এক রুমে চার জন থাকতাম তখন।
অনেকেই আমার সাথে বন্দুত্ব করতে চাইত না,
কার কাছে নিজ থেকে পরিচিত হতে গেলেও তারা হাসি ঠাট্টা করত আমাকে নিয়ে, অনেকে খারাপ
ব্যবহারও করত, তাই আর কারও সাথে নিজ থেকে কথা বলতে চাইতাম না, কলেজে সবার আগের বেঞ্চে বসতাম কিন্তু সবাই
আমাকে সেখান থেকে একদম পিছনের বেঞ্চে বস্তে বলত, না উঠে গেলে আমার ব্যাগ ছুঁড়ে মারত,
বাধ্য হয়েই শেষের বেঞ্চে গিয়ে বসতাম আমি, কষ্ট পেতাম সবার এমন ব্যবহারে, তবে আমার
সে কষ্টটাকে আমি জেদে পরিনত করলাম, আরও বেশি করে পড়ালেখা করতে শুরু করলাম, এমন কি
রেস্টুরেন্ট এ কাজ না থাকলে সেখানেই বসে বই পড়তাম। ১ম সেমিস্টার পরীক্ষায় ক্লাসের
মধ্য সেরা হলাম আমি, সবাই অবাক হল , সাথে আমার উপরে অনেকে হিংসায় ক্ষেপেও গেল।
2nd parrt
কলেজে আর বই নিয়ে পড়তে পারতাম না, সবাই
বিরক্ত করত। তাই কলেজে গেলে ক্লাস শেষ হলেই মেসে চলে আসতাম। মেসে এসেই বই নিয়ে পড়তাম।
কলেজে অনেক মেয়েই আসত কিন্তু কারও চোখের দিকে কখনও তাকাইনি, সাহস হয়নি।
অনেককেই দেখতাম মেয়েদের নিয়ে বসে গল্প
করছে, ঘুরে বেড়াচ্ছে, আমারও ইচ্ছা যাগত কিন্তু আমার এ অন্ধকার জীবনে কে আসবে আলোর
শিখা নিয়ে উজ্জ্বল করতে। একদিন ক্যাম্পাসে বসে সিগারেট খাচ্ছিলাম, সবার থেকে একটু
দূরে বসি খাচ্ছি, হঠাৎ কোথা থেকে একটা মেয়ে এসে মুখের থেকে সিগারেট টান দিয়ে ফেলে
দিল মাটিতে, তারপর পা দিয়ে পিষতে লাগল, রাগ হচ্ছিল খুব কিন্তু মেয়ে বলে কিছু বললাম
না।
উঠে চলে আসলাম সেখান থেকে, ক্যান্টিনে
এসে কোক খাচ্ছিলাম মেয়েটি এসে আমার সামনের চেয়ার টেনে বসল মুখোমুখি। অনেকেই আমাদের
দিকে তাকিয়ে ছিল।
আমি বললাম, কিছু বলবেন আপনি ?
মেয়েটি বলল, আমি তানিয়া, তানিয়া জামান।
আমি মিলন, আগে পিছে কিছু নেই আমার।
তানিয়াঃ তখন আপনার মুখ থেকে সিগারেট কেড়ে
নিয়েছিলাম , কিছু বললেন না যে ?
মিলনঃ বলার মত কিছু ছিল না তাই বলিনি।
তানিয়াঃ কিন্তু কেন এই কাজটা করলাম সেটা
তো জানতে চাইতে পারতেন, কোন কৌতুহল হয়নি আপনার ?
মিলনঃ
নাহ কোন কৌতুহল হয়নি আমার, তবে আশেপাশের অনেকেই আমাদের কে কৌতুহল চোখে
তাকিয়ে দেখছে।
তানিয়াঃ আমি আসলে সিগারেট সহ্য করতে
পারিনা, আর ক্যাম্পাসে কেউ এই জঘন্য জিনিষ খাবে সেটাও, তাই এমন করেছি।
মিলনঃ হুম্ম, বুঝছি, এখন যাই আমার
পরবর্তী ক্লাস শুরু হবে।
কোন রকম সৌজন্যতার দার না দেখিয়েই চলে
আসলাম, মানে বিদায় না নিয়েই চলে আসা বলে যাকে।
তানিয়া রেগে গেছিল , ওর মুখ দেখেই বুঝতে
পেরেছিলাম।
ক্লাসে এসে বসার কিছুক্ষন পরে তানিয়া
আমার পাশে এসে বসল, খুব অবাক হয়েছিলাম আমি অন্যদের মতই। ক্লাসের পুরো সময় আমি
চুপচাপ ছিলাম, কণ কথা বলিনি, তানিয়াও কিছু বলেনি আমাকে।
ক্লাস শেষ হতেই সবাই বের হয়ে গেল, সবার
পরে আমি বের হতেই তানিয়া আমার সামনে এসে বলল, কিসের এত দেমাগ আপনার, দুটাকার ছেলের
কি অহংকার।
মিলনঃ দেখুন মিস তানিয়া, আপনি শুধু শুধু
আমার পিছু লাগছেন, আমি কারও সাথেই কোন দেমাগ বা অহংকার দেখাই না।
তানিয়াঃ ওহ তাই নাকি, তা নিজেকে অনেক
স্মাট ভাবেন তাইনা মিলন সাহেব?
মিলনঃ আমি নিজেকে কখনোই স্মাট ভাবিনা,
আমি যেমন আছি তেমন আছি, আর আমি কোন সাহেব না, ঠিক আছে।
ওহ আরেকটা কথা আপনি আর আমার সামনে না এলে
আমি খুশি হব।
খুব জোড়েই ঝাঁজের সাথে বললাম কথাগুলো
আমি। সত্যি বলতে এভাবে কথা বলতে আমারও ভাল লাগছিল না, কিন্তু কি করার আছে, আমি
ছোটবেলা থেকেই কিভাবে ভদ্র ভাবে কথা বলতে হয় তা শিখিনি, জন্মের পর, বাবা, মায়ের
মৃত্যু, বড় বোন একা রেখে চলে গেছে, এরপর মানুষের লাথি-গুতা খেয়ে বড় হয়েছি,
ওয়ার্কসপে খারাপ ব্যবহার শিখে মানুষ হয়েছি, তাও নিজের চেষ্টায় সামান্য পড়ালেখা
চালিয়ে যাচ্ছি, কিন্তু আমার যে লক্ষ্য হল একদিন আমি ধনী হব, আমার চারপাশে অনেক লোক
থাকবে, আমার নিজের গাড়ি থাকবে, আরও কতকিছুই, তবে তা সৎ টাকায়, আমার নিজের
পরিশ্রমে।
কলেজ থেকে ফিরে, মেসে এসে গোসল করে খেয়ে
বিছানায় বসে বিশ্রাম নিলাম কিছুক্ষন। রুম
মেট এর ডাকে ঘুম থেকে জেগে উঠলাম, রুম মেট হাতে একটা একটা খাম দরিয়ে দিল।
খামটা হাতে নিয়ে উপরে ঠিকানা দেখে পেটের
ভিতরে মোচড় দিয়ে উঠল, আমার গ্রামের বাড়ি থেকে এসেছে, আমাদের হাই স্কুলে
হেড-মাস্টার স্যার এর। উনি আমাকে বাড়িতে যেতে বলেছেন অতিশীঘ্রই।
স্যারের চিঠি পেয়ে যেমন অবাক হলাম তেমনি
অজানা একটা ভয় ঘীরে ধরল আমাকে, এতদিন গ্রাম থেকে কারও কোন চিঠি আসেনি, আর আজকে
চিঠি এল তাও আমাকে সেখানে যেতে বলছে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। রাতে খেয়ে ঘুমাতে গেলাম,
কিন্তু অজানা আতঙ্কে ঘুমাতে পারলাম না, সকাল থেকে আজ মেজাজটা খিটখিটে হয়ে আছে, হয়ত
না ঘুমানোর ফলেই এমন হয়েছে, কলেজের গেট পার হয়ে ক্লাস রুমের দিকে যাব তখনি তানিয়া
এসে পথরোধ করে দাঁড়ালো আমার।
তানিয়াঃ কেমন আছ ?
আপনি থেকে সরসরি তুমি বলাতে অবাক
হয়েছিলাম, কিন্তু যে মেয়ে নিজ থেকে ছেলেদের পিছনে লাগে তাকে তো ভালো মেয়ে বলা যায়
না।
মিলনঃ আপনি আমার পথ রোধ করে আছেন কেন ?
তানিয়াঃ আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই
উল্টো আমাকেই প্রশ্ন করা হচ্ছে, এটা কি ঠিক ?
মেজাজ তো আগেই খারাপ ছিল, এখন মাথাটাও
খারাপ হয়েগেল, কোন কিছুর তোয়াক্কা না করেই অনেক বাজে বিহেভ করলাম তার সাথে,
মিলনঃ ছেলে দেখলে হুঁশ থাকেনা না, খারাপ
মেয়ে, আমি জীবনে অনেক মেয়ে দেখেছি, আপনার মত এত বাজে মেয়ে আর একটিও হয়না, যেচে এসে
ভাব জমাতে চান ছেলেদের সাথে, আপনি বুঝেন না আমি আপনার মত এইসব মেয়েদের পছন্দ
করিনা, তারপরও কেন আমাকে বিরক্ত করতে আসেন, এটাই তো আপনার চরিত্রের বৈশিষ্ট্য
নাকি। নির্লজ্জ বেহায়া মেয়ে, ছি ঘেন্না হয় আপনার মত মেয়ে কে দেখে আমার।
কথাগুলো উর্ধ্বশ্বাসে বলে গেলাম, ক্লাসের
অনেকেই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে, কেউ মিটিমিটি হাসছে, আবার কেউ নিরবে অপলক তাকিয়ে
আছে, কিন্তু তানিয়া কান্না করছিল অনেক, তার চোখ দুটো পানিতে টলমল করছিল।
৩য় পর্ব
একটু বেশি বলে ফেলেছিলাম আমি, কিন্তু
খারাপ লাগছিল এভাবে বলতে, কেমন যেন খালি খালি লাগছিল বুকের ভিতরটা, কথা গুলো বলেই
সেখান থেকে প্রিন্সিপাল স্যার এর রুমে চলে আসলাম,
স্যার আমাকে দেখে অনেক খুশি হলেন, আসলে
আমি গরীব এবং পার্ট টাইম জব করি তারপরেও পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ বেশি , পড়ালেখাতে
ভাল ,তাই স্যার আমাকে অনেক পছন্দ করেন, অনেক সময় আমাকে অনেক সাহায্য করেন স্যার।
স্যার বলল, মিলন যে এস বাবা, বস।
আমি স্যারের সামনের চেয়ারে বসলাম।
স্যারঃ তা বাবা কিছু বলবে নাকি ?
মিলনঃ জ্বী স্যার, আমার গ্রামের বাড়ি
থেকে একটা চিঠি এসেছে গতকাল, আমাকে সেখানে খুব জরুরী যেতে বলা হয়েছে, আপনি তো
জানেন স্যার আমার গ্রামে আমার ভিটা, বাড়ি আর মা-বাবার কবর ছাড়া আপন বলতে কিছুই নেই
আর, তাই হয়ত সেখানে এমন কিছু সমস্যা হয়েছে যার জন্য আমাকে চিঠির মাধ্যমে যেতে বলা
হয়েছে।
স্যারঃ হুম্ম, তোমার সব কিছুই তো আমি জানি
বাবা, আচ্ছা তাহলে কবে যেতে চাও তুমি।
মিলনঃ স্যার আপনি অনুমতি দিলে, আমি আজকেই
গ্রামের উদ্দেশ্য রওনা দিব।
স্যারঃ আচ্ছা ঠিক আছে, অফিস রুমে গিয়ে
জমির এর কাছে একটা দরখাস্ত লিখে দিয়ে তুমি চলে যেও।
মিলনঃ ধন্যবাদ স্যার, আজ তাহলে আমি আসি।
আসসালামু আলাইকুম।
স্যারঃ ওয়ালাইকুম সালাম, কোন কিছুর
প্রয়োজন হলে আমাকে কল কর।
স্যারকে আবারও ধন্যবাদ দিয়ে আগে থেকে
লেখা দরখাস্ত টি জমির ভাইকে দিয়ে চলে আসলাম।
কলেজ থেকে বের হতে তানিয়া কে দেখলাম
মাঠের পাশে বসে আছে, ও আমার দিকে তাকালো,
দুজনার চোখের মিল হল কিছু সেকেন্ডের জন্য
তারপর আমি চলে আসলাম, রুমে এসেই ব্যাগ নিয়ে বাস কাউন্টারে এসে বাসে উঠলাম।
বাসে বসে ভাবছিলাম, তানিয়ার কথা মেয়েটা
অনেক সুন্দরি, অনেক হাস্যোউজ্জল আর দুরন্ত, আমাকে ভাললাগে বলেই আমার পিছু পিছু
ঘুরেবেড়ায়। এটা আমি বুঝতে পারি, না হলে কোন মেয়ে এমন নির্লজ্জের মত ছেলেদের পিছু ঘুরে
না।
কিন্তু আমারি বা কি করার আছে, আমি তো
নিঃস্ব এক অভাগা, কি আছে আমার, কি দিয়ে তাকে ভালবাসব আমি, আমার এ নিঃস্ব জীবনে আমি
কাউকে জড়াতে চাই না।
তানিয়ার কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে গ্রাম
থেকে আসা চিঠি নিয়ে ভাবতে লাগলাম কেন এত জরুরী আসতে বলা হল আমাকে, সেটানিয়েই
ভাবছিলাম, গ্রামের বাস স্টপ এ নেমে, হাটতে লাগলাম মাটির রাস্তায়, অনেক দিন পরে
নিজের চিরচেনা শৈশবের সেই হারানো দিন গুলো মনে পড়ে যাচ্ছে, অনেক বদলে গেছে এই
গ্রাম, আগে যেখানে সাঁকো ছিল আজ সেখানে কালভ্রাট হয়ে গেছে, রিক্সা নেই এখন আর, আছে
অটো, আর টেম্পু। স্যারের বাসায় না গিয়ে আগে আসলাম নিজের বাড়িতে, পরিত্যাক্ত হয়ে
আছে আমার জমিটুকু, চারপাশে জঙ্গল ঘেরা, অনেক উচু উচু জংলী গাছ ভরে গেছে, মাটির
ঘরের সব দেয়াল ধসে গেছে, দেখে বুকের ভেতরটা হু হু করে উঠল, মা-বাবার কবরের পাশে
গিয়ে দাড়ালাম, সেখানেও জংলী গাছ ভরে গেছে, আগে থেকে দেখে না থাকলে কেউ বুঝবেনা
এখানে কারও কবর আছে, চোখের পানি দরে রাখতে পারলাম না আর, সেখানেই মাটিতে বসে অঝোরে
কান্না করতে লাগলাম, আজ আমি যুবক, কিন্তু আমার মাথার ছাতা বলতে কেউ নাই, যারা
বৃষ্টি, ঝড় থেকে আমাকে রক্ষা করবে, বাবা-মায়ের কবর পরিষ্কার করলাম, বাড়ির সকল
জঞ্জাল কেটে সাফ করতে করতে বিকাল হয়ে গেল, এর মাঝে পানি ছাড়া কিছুই খেয়ে উঠা হয়নি।
সব কিছু পরিষ্কার শেষে পুকুরে গোসল করে, ব্যাগ কাঁধে নিয়ে হেড-স্যারের বাড়ির দিকে
রওনা হলাম, যিনি আমাকে গ্রামে আসতে চিঠি পাঠিয়েছেন। বাসায় পৌছে দরজাতে নক করতেই
ভিতর থেকে স্যারের গলার আওয়াজ পেলাম, তিনি বলছেন কে এসেছে ?
মিলনঃ স্যার আমি, মেলু। “স্যার আমাকে
মেলু বলেই ডাকতেন যখন ছোট ছিলাম”
স্যার দরজা খুলে চশমা চোখে দিয়ে আমার দিকে
তাকালেন, ওনার চোখে আমি জলের অস্তিত্ব খুঁজে পেলাম।
স্যার কে কদমবুচি করলাম, স্যার ভিতরে
আসতে বললেন।
ভিতরে এসে একটা চেয়ারে বসলাম আমি, আজ
অনেক পরিশ্রম করেছি, পা গুলো ব্যাথা করছিল খুব।
স্যার আমার পাশে বসে আমার মাথায় হাত
বুলিয়ে দিলেন, কেমন আছিস রে মেলু ?
মিলনঃ স্যার আমি ভাল আছি, আপনি কেমন আছেন
?
স্যারঃ আমার আর থাকা, বয়স হয়েছে, আগের মত
আর শরিরে জোড় পাইনা রে।
সাময়িক কথাবার্তা শেষে স্যারকে জিজ্ঞেস
করলাম, এত জরূরী তলব করেছেন, কারন কি ?
স্যার এর মুখ থেকে যা শুনলাম তা আমার
ভিতরে কোন স্পর্শই করতে পারল না, তা হল আমার সেই বড় বোন, যে আমাকে ছেড়ে পালিয়ে
গিয়েছিল, সে আমাদের ভিটা-বাড়ির ভাগ চাইতে এসেছে।
আমি যখন গ্রাম থেকে চলেযাই। তখন বাবার
পুরনো ট্র্যাঙ্ক থেকে আমাদের বাড়ির দলিল আমি এই স্যার এর কাছেই গচ্ছিত রেখে
গেছিলাম, আমার বোন এসে স্যার এর থেকে তা নিতে চেয়েছিল, কিন্তু স্যার তা দেয়নি,
শেষে আমার বোনের স্বামী নাকি স্যার কে ধমকিয়ে দিয়ে ভয় দেখানোর চেষ্টা করেছে, আমি
গ্রাম থেকে দূরে থাকলেও এই স্যারের সাথে আমার চিঠি আদান-প্রদান হত প্রায়, তাই তিনি
আমার বর্তমান ঠিকানায় এই চিঠি লিখে আমাকে আসতে বলেন।
স্যার কে বললাম আপনি তাদের কে বলেন আগামীকাল
সকালেই তাদের সাথে আমি এ নিয়ে কথা বলব।
ওইদিন স্যারের বাসায় খেয়ে-দেয়ে ঘুমিয়ে
পড়ি আমি। পরেরদিন সকালে গ্রাম ঘুরে দেখতে বেরিয়ে পড়ি একা, নদীর পাড়ে , জুনাইদ দের
আম বাগান, সবকিছুই ঘুরে ঘুরে দেখছি, আর ভাবছি সবকিছুই পরিবর্তন হয়ে গেছে কিন্তু
মানুষের মধ্য লোভ দিনে দিনে বেড়েই যাচ্ছে। দুপুরে খাওয়া শেষে বারান্দায় বসে আছি,
তখন স্যারের সাথে একজন মহিলা আর একজন পুরুষ, সাথে তাদের ছোট ২টা বাচ্চা কে দেখলাম
আমার দিকেই আসছে, বুঝতে পারলাম এই আমার বোন, দূর থেকে দেখে চিনতে পারিনি, অনেকদিন
দেখিনি তাকে, ইচ্ছে হচ্ছিল এক দৌড়ে তাকে জড়িয়ে ধরি, আর বলি কেন আমাকে ছেড়ে সে দিন
সে চলে গিয়েছিল স্বার্থপরের মত, কিন্তু তার কিছুই আমি করিনি, চেয়ারে বসেই ছিলাম
আমি।
স্যার এসে আমাকে ডাক দিলেন, মেলু দেখ কে
এসেছে, আমি চেয়ার থেকে উঠে তাদের সামনে গিয়ে দাড়ালাম, আমার বোন আমার কাছে আসতে
চাইলে আমি তাকে ওখানেই থামিয়ে দিলাম, তারপর বললাম স্যারের মুখ থেকে শুনেছি, তোমরা
নাকি আমার জমিনের ভাগ চাইতেছ।
আমার বোন কোন কথা বলেনি, তার স্বামী
আমাকে বলল, হ্যা তোমার বোনের অংশ আছে তাতে, সে তার ভাগের যায়গা চাচ্ছে।
আমি তাকে বললাম, আমাদের পরিবারের মাঝে
আপনি কোন নাক গলাবেন না, আর যদি কোন কথা বলেন তাহলে আমি ভুলে যাব আপনি আমার আত্নীয়
হন। আপুর স্বামী কোন কথা বলেনি শুধু রাগে ফুলেছিল।
আমার বোন কে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কি
আমার মা-বাবার জমির ভাগ দাবি করছেন নাকি?
আমার বোন কিছু বলছিল না, কিন্তু স্বামীর
দিকে তাকাতেই সে ভয়ে ভয়ে বলল, হ্যা আমার ভাগের অংশ আমি চাইছি, এখন তুই দিলে ভাল
নয়ত....
আমি বললাম, নয়ত কি ?
পুলিশ কেস করবেন, নাকি জবর দখল করবেন, কোনটা
করেই লাভ হবেনা, তবে আমি চাইনা, আমার মা-বাবা কবর থেকে দেখুক যে আমি তাদের রক্তের
সাথে কোন অন্যায় করেছি, এই পৃথীবির মানুষ যেন বলতে না পারে, যে বোন তার ছোট ভাইকে
ফেলে রেখে নিজের সুখের কথা চিন্তা করে পালিয়ে গিয়েছিল, সেই বোনের দুঃক্ষের দিনে
তার সেই ভাই তাকে সাহায্য করেনি। আমি আমার মা-বাবাকে কোন প্রকার কষ্ট দিতে চাই না।
জমি আমি আপনার নামে লিখে দিব, তবে আপনি তা ভগ করতে পারবেন, কিন্তু হজম করতে পারবেন
না।
৪র্থ পর্ব
আমার কথা শুনে তারা একে অপরের মুখ চাওয়া
চাওয়ি করল।
আমি বললাম, কি বুঝেন নি তাই না, আপনার
নামে লিখে দিব কিন্তু বিক্রি করতে পারবেন না আমার অনুমতি ছাড়া।
আমার বোনের স্বামী চিল্লাচিল্লি করে উঠল,
আমি তাকে বললাম যদি রাযি থাকেন তাহলে আগামীকাল পেপার নিয়ে চলে আইসেন, না হলে যা
ইচ্ছা করতে পারেন।
সেখান থেকে রুমে চলে আসলাম, দরজা বন্দ
করে দিয়ে কান্না করতে লাগলাম, আমার বড় বোন কিন্তু তাকে আজ এত কাছে পেয়েও আমি তাকে
একবার জরিয়ে দরতে পারিনি, সে একবারো তার ছোট ভাইকে আদর করতে পারল না, কিযে কষ্ট
হচ্ছিল বলে বুঝান যাবেনা, পরেরদিন তারা কাগজ নিয়ে আসলে স্যারের সামনে আমি স্বাক্ষর
করি নতুন দলিল এ, এবং মা-বাবার কবরের যায়গা টুকু বাদ দিয়ে বাকী সব তাদের নামে লিখে
দেই, তারা তা বিক্রি করবে এমনটাই দলিলে লিখে আনতে বলেছিলাম গতকাল তারা চলে যাওয়ার
পরে, আবার খবর দিয়ে এনে নতুন দলিল তৈরি করতে বলেছি, যেখানে তারা জমি বিক্রি করতে
পারবে। আমার বোনএর চোখে পানি জমেছিল, চোখ গুলো ছিল লাল টক্টকে আর ফোলা ফোলা, বুঝতে
পেরেছিলাম, স্বামী তাকে নির্যাতন করেছে, তাই তাদের সুখের জন্য আমি সব তাদের কে
দিয়ে দিলাম।
স্যারের থেকে বিদায় নিয়ে দুপুরের বাসে
ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম, পথে বাবা-মায়ের কবরটা জিয়ারত করলাম আরেকবার, আবার কবে
আসব তা আল্লাহ যানেন, বাঁশ কেটে চারপাশে বেড়া দিয়েছি, এখন অনেক সুন্দর লাগছে, জংলী
ফুলের গাছ লাগিয়ে দিয়েছিলাম মাথার পাশে, তাতে ফুলও দরেছিল। দুফোটা অশ্রু চোখ বেয়ে
পড়ল মাটিতে, শুকনো মাটি তা শুষে নিল, যেমন করে আমি আমার ভিতরের কষ্ট কে পাথর চাপা
দিয়ে রেখেছি। কবর জিয়ারত করে বাস স্টপে এসে বাসে উঠে বসলাম, বাস ছেড়ে দিলে,
আমিও বাসে ঘুমিয়ে পড়লাম, রাতের বেলা
আনুমানিক রাত ৯টায় ঢাকা, যাত্রাবাড়ী এসে নামলাম, তারপর মেসে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
এদিকে আমি কলেজে যাইনি ৪দিন, এই ৪দিন
তানিয়া প্রায় পাগলের মত খুঁজে বেড়িয়েছে আমাকে, কোথাও পায়নি, এমন কি কাউকে জিজ্ঞাসা
করেও কিছু জানতে পারেনি, কারন আমি তো তেমন কারও সাথে কথাই বলতাম না। আমার বন্দু
রেহান এর থেকে শুনলাম, খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিয়েছে একেবারে, চোখের নিচে জমেছে কালি,
কয়েকদিন রাত জেগে থাকার কারন।
পরেরদিন সকালে আমি কলেজে গেলাম, মাঠের এক
কোনায় বসে আছি, মন অনেক খারাপ, গ্রাম থেকে আসার পর থেকেই মনটা কেমন অশান্ত হয়ে
আছে, ইচ্ছে হচ্ছিল কারও বুকে মাথা রেখে একটু সহানুভূতি পেতাম যদি কত ভালো লাগত
তখন, হঠাৎ কেউ পিছন থেকে আমার শরিরে ব্যাগ বা কিছু দিয়ে আঘাত করল, ঘুরে দেখি
তানিয়া।
তানিয়াঃ এই তুমি এতদিন কোথায় ছিলে, আমার
কোন খোঁজ নেওনি কেন ?
আমার কথা মনে পড়েনি তোমার ? তুমি এত
পাষান হতে পারলে ?
মিলনঃ এক সাথে এত প্রশ্নের উত্তর দিতে
পারবনা, তবে সর্টকাটে উত্তর দিতে পারি, যদি তুমি চাও ?
তানিয়াঃ সর্টকাটে কিভাবে উত্তর দিবা তুমি
?
তানিয়ার কথা বলা শেষ হতেই আমি ওর হাত দরে
টান দিয়ে আমার বুকের সাথে জড়িয়ে দরলাম, গাল দুটো দরে উঁচু করে ওর গোলাপি ঠোটে একটা
চুমু দিলাম।
আকস্মিক ভাবে হঠাৎ এভাবে জড়িয়ে দরায় তানিয়া
অনেক লজ্জা পেল, ওর ফর্সা গাল দুটোর মাঝে লাল রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়ল।
আমিও একটু লজ্জা পেলাম, কারন এই প্রথম
কোন মেয়েকে জড়িয়ে দরে চুমু দিলাম।
Comments