ভৌতিক প্রেমের গল্প - ভৌতিক ভালবাসা
১ম পর্ব
বেড়াতে গিয়েছিলাম ঢাকা, মামার বাসায়।
আমার মামা তার পরিবার সহ ঢাকা তে বসবাস করতেন, তারা বাড্ডা আলাতুন্নেসা গার্লস
স্কুল এর পাশেই থাকতেন তখন। আমি আর আমার ছোট ভাই আর আম্মু তখন সেখানে বেড়াতে যাই।
মামারা পাঁচতলা বাড়ির পঞ্চম তলাতেই ভাড়া থাকতেন তখন। একদিকে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে যেমন
কষ্ট হত, অন্যদিকে ছাদ কাছে থাকায় আনন্দ টাও কম ছিল না। আমি প্রতিরাতেই অনেক দেরী
করে ঘুমাতে যাই, মোবাইলে মূভি দেখি বা কোন টিভি অনুষ্ঠান দেখি আবার কখনও ছাদে গিয়ে
গিটার নিয়ে গান গাই, আমার মামাতো ভাইয়ের গিটার ছিল তাই আর সিলেট থেকে কষ্ট করে
নিজের প্রিয় গিটার JR কে সাথে নেইনি, JR
এই নামটা আমি দিয়েছি।
মামাদের বাসায় পৌছে ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে
ঘুমিয়ে পড়লাম, অনেক লং জার্নী করে এসেছি,
সিলেট থেকে ট্রেনে করে ঢাকা যাওয়ার মজাটা একটু আলাদাই হয়। বিকেল বেলা ঘুম থেকে উঠে,
বাহিরে হাটতে গেলাম, বাড্ডা এর নিকটেই আমার অনেক
বন্দু থাকত তখন, মেরুল বাড্ডা, হাতির ঝিল,
রামপুরা, আফতাব নগর আমার পরিচিত সব, অনেক বার আসার ফলে এখানে অনেক পরিচিত বন্দুও হয়ে গেছে, আর বাড্ডা থেকে গুলশান লিংক রোড যাওয়ার পথে যে তেহারির দোকান আছে, সেই মামা আমাকে পেলেই হয়েছে বসিয়ে ১প্লেট তেহারি না খাইয়ে ছাড়েন না তিনি। সবার সাথে দেখা করে বাসায়
ফিরতে রাত হয়ে গেল অনেক, বাসায় এসে আম্মুর বকা শুনতে
হল, অচেনা অজানা যায়গায় কেন একা একা আমি গিয়েছি, আর এত দেরী করেই বা কেন আসলাম, আরও কতকি, আমি তখন ইন্টার ২য় বর্ষের ছাত্র, আমি কি এখনও ছোট আছি
নাকি, তবে ভাল লাগে আম্মুর বকুনি, সন্তান
যত বড়োই হোক না কেন, মা-বাবার কাছে সে সব
সময় আদরের ছোট সন্তানের মতই থাকে।
বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে ভাইয়ার রুমে গেলাম,
আমার মামাতো ভাই আমার থেকে বয়সে ৫-৬বছরের বড় হবে,
কিন্তু ব্যবহার ছিল একজন সৎ, বিশ্বস্ত,
উপকারী বন্দুর ন্যায়।
ভাইয়া অনেক আগেই ঘুমিয়ে পড়েছেন তাই আমি আর রুমে
না বসে ওনার গিটার নিয়ে ছাদে চলে গেলাম, বাহিরে
থেকে দরজা লক করে গিয়ে ছিলাম।
ছাদে গিয়েই চারপাশ দেখতে ভালোই লাগছিল,
মুগ্ধ নয়নে রাতের বেলায় রাস্তার হলুদ বাতি গুলো আর মাঝে মাঝে গাড়ির লাল
বাতি গুলো দেখতেই ভালো লাগছিল। ছাদের
একপাশে গিয়ে গিটার হাতে নিয়ে প্রথমে কিছু এলোমেলো শব্দ করতে লাগলাম,
কিছুক্ষন পরে একটু কেশে নিয়ে একটা গান দরলাম,
বাপ্পা মজুমদারের গান ছিল এটা,
রেডিও তে তখন প্রায় শোনাযেত এই গানটি সেটাই গাইলাম প্রথম,
“দিন বাড়ী যায়, চড়ে পাখির ডানায়
যদি
না হয় কথা, ভাঙে নীরবতা,
তুমি
চোখে রাখো চোখ, চোখে চোখে কথা হওক
থেমে
পথে আজ এটুক বলি, যতদূরে যাও যেনে রেখ শুধু
ফির
দেখা হবেই”।
বাসার ছাদে গানটা যখন গাইছিলাম তখন আমার নাকে
অদ্ভুত মেয়েলি একটা ঘ্রাণ পেলাম, রাতের বেলায়
অনেক সময় ফুলের ঘ্রাণ অনেক দূর থেকে পাওয়া যায় তাই সেটা নিয়ে আর ভাবলাম না,
হয়ত পাশের বাসার ছাদের ফুলের ঘ্রাণ আসছে বাতাসে ভেসে। গান শেষ হতেই কারও মিষ্টি কথার শব হল, পিছনে ঘুরে দেখি, একটি সুন্দরী, সুন্দরী বললেই ভুল হবে যেন, এর থেকেও বেশি কিছু,
পরীতো দেখিনি কোনদিন, তবে শুনেছি এরা নাকি পৃথীবির
সবচেয়ে সুন্দর নারী।
তার সুর্ন্দ্যরয্য আমাকে এততাই মুগ্ধ করেছে যে
আমার মুখে দিয়ে কোন শব্দ বের হলনা, প্রথম অবস্থায়
যদি তার মুখের দিকে না তাকিয়ে তার পোশাকের দিকে তাকাতাম তাহলে হয়ত ভয় পেতাম কারন সে
কালো জরী আর পাথরের একটি ড্রেস পরে এসেছে, কি বলে আজকাল লেহেঙ্গা
বা স্কার্ট টাইপের ছিল।
কাল পোসাকে ঘন কালো খোলা চুলের এক মায়াবী রমনী,
সে আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল, বাহ
খুব ভাল গানের গলা আপনার, আর গিটার ও খুব ভালো বাজাতে পারেন,
আমি একটু দাত্বস্থ হয়ে বললাম
, ধন্যবাদ আপনাকে।
আসলে আমি কতটা ভাল গাই তা জানি না,
কিন্তু আমার গাইতে ভাল লাগে।
সে তার হাত বাড়িয়ে বলল,
আমি আরোহী!
আমি কয়েক সেকেন্ড পরে তার হাতটি ধরলাম,
ঠান্ডা হাতের স্পর্শে আমার গায়ে যেন শিহরন খেলে গেল তার উপরে মেয়েদের
হাত, আমি বললাম আমি রোজান।
আরোহীঃ আপনাকে তো এর আগে কখন এ বাসায় দেখিনি,
বেড়াতে এসেছেন মনে হয়।
আমিঃ ঠিক ধরেছেন,
আমি আজকেই সিলেট থেকে এসেছি, ফয়সাল রহমান,
উনি আমার মামা, তার বাসাতেই এসেছি।
আরোহীঃ ওহ, তা কতদিন
থাকবেন?
আমিঃ এই ১স্পতাহ এর মত,
কেন ?
আরোহীঃ না তাহলে তো আপনার গান শুনতে পারব।
আমিঃ একটু মুচকি হেসে,
ওহ আচ্ছা।
তা আপনারা কত নাম্বার ফ্লাটে থাকেন?
আরোহীঃ আমরা লিফটের
4A তে থাকি, ঠিক আপনার বাসার অপজিটের দরজা টাই আমাদের।
আমিঃ তাহলে তো আপনি আমাদের প্রতিবেশি আমার
মামা থাকেন 4B তে।
এরপর দুঝনে আরও কিছু সময় কথা বলে একসাথে
সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেলাম, আমি পকেটে হাত ঢুকিয়েই চাবিটা খুঁজে পেলাম না, আবার
ঘুরে ছাদের যাওয়ার সিড়ির দিকে পা বাড়ালাম, আরোহী তাকিয়ে আছে আমার দিকে, আমি উপরে
চলে গেলাম, কোথাও খুঁজে পেলাম না, আবার পকেটে খুজতেই চাবিটা পেলাম পিছনের বা
পকেটে, আমি সবসময় চাবি রাখি ডান পকেট বা বা পকেট এ তাও সামনে পিছনে শুধু আমার
মানিব্যাগ থাকে তাও ডান পাশে, পিছনের বা পকেটে কোনকিছুই রাখিনা আমি। কিন্তু এনিয়ে
তখন কিছু ভাবিনি, নিচে নেমে আরোহীকে দেখতে পেলাম না, হয়ত রুমে ডুকে পড়েছে।
চাবিদিয়ে দরজা খুলে, রুমে গিয়েই ঘুমিয়ে পড়লাম। পরেরদিন সকালে নাস্তা করতে টেবিলে
বসলাম সবাই, ভাইয়ার সাথে গল্প করছি আর আম্মু আর মামী গল্প করছেন।
ভাইয়া কে জিজ্ঞাসা করলাম, আচ্ছা তোমাদের
এখানে যে একটা সুন্দরী পরী থাকে আগে বলনি কেন আমাকে ?
ভাইয়াঃ পরী মানে ? কোথায় পেলি পরী তুই?
আমিঃ ন্যাকামো করনা, আমার অনেক পছন্দ
হয়েছে, তোমার সাথে কিছু না থাকলে আমি ট্রাই করে দেখব ভাবছি।
ভাইয়াঃ মাথা ঠিক আছে, সব খুলে বল?
আমি এরপর ভাইয়া কে সব খুলে বললাম, আমার
কথামাঝখানে ভাইয়ার মুখ গুলো মাঝে মাঝে ভয় পেলে যেমন হয়ে যায় ঠিক তেমনি হল, তখন আমি
ভেবেছি হয়ত আমার মেয়েটিকে ভাল লেগেছে এই জন্য ভাইয়ার খারাপ লাগছে।
আমার কথা শেষ হতেই, ভাইয়া আমাকে বলল,
রোজান, তুই আজকে থেকে রাতে আর ছাদে যাবিনা।
আমিঃ কেন, ছাদে যাব না কেন, ওই মেয়ের
সাথে তোমার কোন সম্পর্ক থাকলে বল, বা তুমি যদি তাকে পছন্দ কর তাহলেও আমাকে বলতে
পার। আমি আ নিয়ে বেশিদূরে যাবোনা।
ভাইয়াঃ তা নারে ভাই, ওই মেয়ের সাথে আমার
কোন সম্পর্ক নেই, আর আমি ওকে পছন্দ করিনা, ও সুন্দরী ঠিক আছে কিন্তু আমি অবন্তী কে
ভালবাসি। তোর সাথে তো পরিচয় আছে অবন্তীর।
আমিঃ তাহলে সমস্যা কি? ওর কি কোন
বয়ফ্রেন্ড আছে নাকি? থাকলেও আমার সমস্যা নেই।
ভাইয়াঃ এত কিছু বলতে পারবনা, নিষেধ করেছি
ব্যস, তুই আজকের থেকে আর ছাদে যাবিনা তাও রাতের বেলা, দিনে গেলে সমস্যা নেই।
ভাইয়া উঠে রুমে চলে গেল, যাওয়ার আগে মামী
কে ডেকে নিয়ে গেল।
মামী কে আবার বলে দেয় নাকি, তবে মামীকে বলবেনা
এটা আমার বিশ্বাস আছে।
রাতে ছাদে যাব না এটা নিয়ে ভাবতে লাগলাম,
কেন বলল একথা।
দুপুরে খেয়ে আমি আর ভাইয়া মুভি দেখতে
বসলাম ল্যাপটপে, জুরাসিক পার্ক।
দারুন একটা মুভি ছিল, দেখা শেষ হতেই,
মামী আবার হাল্কা নাস্তা দিল আর সাথে আমার প্রিয় ব্ল্যাক গ্রেইপ জুস (কালো আঙুর এর
রস)। হাল্কা নাস্তা খেয়ে, জুসের গ্লাসটি হাতে নিয়ে ছাদে চলে আসলাম, এখন বিকেল
হয়েগেছে, অনেকেই ছাদে হাঁটাহাঁটি করছে, মেয়েদের সংখ্যাটাই বেশি মনে হল। ছাদে উঠেই
খেয়াল করলাম, কিছু ফুলের গাছ এককোনায় রাখা, এবং একটি মেয়ে পানি দিচ্ছে, আবার কাঁচি
দিয়ে ভাঙা ডাল ছোট করে দিচ্ছে, গতকাল রাতে আমি এর উল্টোপাশের কোনায় ছিলাম আর এদিকে
অন্ধকার ছিল তাই হয়ত ফুলের গাছ গুলো আমার নজরে আসেনি।
মেয়েটি একমনে নিচের দিকে তাকিয়েই তার কাজ
করে যাচ্ছে, আমি তার দিকে এগিয়ে গেলাম,
পিছন থেকে হাই বলে উঠাতেই, মেয়েটি ভয়
পেয়ে গেল, এমন ভাবে ভয় পেয়ে দাঁড়িয়ে গেল যে আমার শরিরের সাথেই তার শরিরের সংঘর্ষ
হল। আমার হাত থেকে কিছুটা জুস গ্লাসের থেকে ছলকে পড়ল তার শরিরে। ভাবলাম কথা বলে
পরিচিত হব, হল তার উল্টো, মেয়েটিও অপরুপ সুন্দরী, আরোহীর মতই দেখতে। মেয়েটি আমার
দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দেখে আমার ভিতরে পুরুষের সাহসী বাঘটা মরে গিয়ে
বিড়াল এর মত হয়ে গেলাম।
প্রথমেই আমি সর্যি বললাম, মেয়েটি বলল,
কে আপনি, আর আমার পিছনে এত কাছে এসেই বা কেন ডাকদিলেন, কোন বাজে মতলবে এসেছেন
এখানে, আপনাকে তো এর আগে এখানে দেখিনি কখনো।
আমিঃ এত গুলো প্রশ্ন একসাথে কিভাবে উত্তর
দেই বলুন, ধীরে ধীরে দিচ্ছি, আমি রোজান, ফয়সাল রহমান আমার মামা, ওনার বাসায় এসেছি
গতকাল বেড়াতে।
আর আমার কোন খারাপ উদ্দেশ্য নেই, আমি
আপনার ফুলের গাছগুলো দেখতেই এসেছি। সাথে পরিচয়টা হয়ে
যাবে ভাবছিলাম ?
মেয়েটি আমার কথার প্রতি উত্তরে বললঃ কোন
খারাপ উদ্দেশ্য যদি না থাকেই, তাহলে একা একটি মেয়ে কে ছাদে পেয়ে তার কাছে আসার
মানে কি, আর আপনি আমাকে চেনেন না, আমাদের এর আগে দেখাও হয়নি, তো পরিচিত হতে
এসেছেন, ফাইজালামি করার যায়গা পান না, আমি এখনি আব্বুকে ডাকছি, কোথাথেকে এইসব বাজে
লোকদের বাড়ি ভাড়া দেয়।
আমি পড়লাম বিপদে, এখন যদি সত্যি কেউ এসে
পরে, তাহলে আমার সম্মান তো যাবেই, আমার মামাদের ও । হঠাৎ আমার মামাতো ভাই মিজান
আসায় স্বস্তি পেলাম, ভাইয়াকে দেখে মেয়েটি বলল,
দেখুন মিজান ভাই কোথা থেকে এই বজ্জাত
ছেলেটি পিছন থেকে এসে আমাকে চমকে দিয়েছে, আবার বলে আমার সাথে নাকি পরিচিত হতে
এসেছে, কত খারাপ ছেলে।
ভাইয়া আমাকে বলল বাসায় যেতে, আমি তাই
নিচে চলে গেলাম, সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামটেই শুনি মেয়েটি বলছে শালা বজ্জাত বেঁচে গেলি
আজকে, আর ভাইয়া তাকে ধমক দিয়ে থামিয়ে দিল।
এরপর বাসায় এসে গিটার নিয়ে বসে পরলাম,
অনেক সময় মন খারাপ হলে গিটার নিয়ে বসি, ২০মিনিট পরে সেই মেয়েটি আমাদের বাসায় আসল(
মামার বাসায়)। মেয়েটিকে মামী হাত ধরে টেনে নিয়ে আসল আমাদের কাছে, আমার পাশে আম্মুও
বসা ছিল। মামী আমাদের সাথে মেয়েটির পরিচয় করিয়ে দিল। বাড়িওয়ালার মেয়ে, উপমা। মামীদের
পাশের ফ্ল্যাটে থাকে 4A তে, আমি নিচে তাকিয়ে
ছিলাম মামীর মুখে ওদের ফ্ল্যাটের কথা শুনেই আমি তার দিকে ঝট করে তাকালাম, সেও আমার
দিকেই তাকিয়ে আছে, এতক্ষনে খেয়াল করলাম এই সেই বিকালের মেয়েটি যার সাথে ছাদে ঝগড়া
হয়েছিল, ভাল করে লক্ষ্য করতে বুঝলাম, সে আর আরোহী দেখতে সেইম, কিন্তু এদের মধ্য তার
মুখে তিল আছে, কিন্ত্য আরোহীর নেই, দুজনেক আলাদা করে চেনা যাই এই কারনে, আর আরোহী
কত মিষ্টি একটা মেয়ে, আর উপমা মেয়েটি কেমন কর্কশ টাইপের।
মামী তাকে আমাদের পাশে বসতে বলে কিচেনে
গেল নাস্তা আনতে। মিজান ভাই বলল নে রোজান একটা গান দর, অনেক দিন তোর গান শুনি না,
আমি বললাম কি যে বল ভাইয়া, আমি গান গাইতে পারি নাকি, গিটার শিখছি তাও তোমার
দেখাদেখি, গান পারিনা আমি। ভাইয়া রিকোয়েস্ট করলেও তখন আর গান গাওয়ার ইচ্ছা ছিল না
আমার, আমি বললাম সবার সামনে আমি আবার গান গাই না। কথাতি বলে আমি উঠে ছাদে চলে
গেলাম, তখন সন্ধ্যা হবে এরকম, দুমিনিট যেতে না যেতেই মামী ছাদে এসে আমাকে কান টেনে
নিয়ে গেল বাসায়, সিঁড়ি দিয়ে নামতেই দেখি উপমা দাঁড়িয়ে আছে নিচে, আর মিটিমিটি
হাসছে, আমি লজ্জায় মামীর আগেই রুমে চলে গেলাম, মামী অনেক বকা দিল কেন এই সন্ধ্যায়
ছাদে গেলাম আমি। ওইদিন আর ছাদে যেতে পারিনি। খারাপ লাগছিল অনেক, ছেদে হয়ত আরোহী
এসে আমাকে না দেখতে পেয়ে মন খারাপ করবে। আচ্ছা আমি এত ভাবছি কেন আরোহীকে নিয়ে, আমি
কি সত্যি তাকে পছন্দ করে ফেলেছি। রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল, বিছানায় বসে ভাবছি হঠাৎ
করে ঘুম ভাঙ্গার কারন কি ? পানি খেতে ডাইনিং রুমে গেলাম, পানি খেয়ে রুমে এসে
বিছানায় উঠব তখন চোখ গেল বারান্দার দিকে, আমাদের বারান্দা আর আরোহীদের বারান্দা
পাশাপাশি। আমি সামনে যেতেই দেখলাম বারান্দায় কোন মানুষের অবয়ব দেখা যাচ্ছে, আরেকটু
কাছে যেতেই দেখি একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে, আর সামনের দিকে তাকিয়ে আছে, চাঁদের আলোয়
তার চোখের নিচে চিকচিক করে উঠল, বুঝলাম সে কান্না করছে, কাছে গিয়ে আমি সেই ঘ্রানটা
পেলাম, প্রথম যেদিন আরোহী আমার সামনে এসেছিল ঠিক সেই ঘ্রাণ। আমি আস্তে করে তাকে
ডাক দিলাম, সে আমার দিকে তাকানোর আগেই তার চোখের পানি মুছেনিল।
আমি বুঝলাম আরোহী। জিজ্ঞেস করলাম আপনি
কান্না করছেন কেন ?
আরোহীঃ কান্না করছিলাম না, আসলে মন খারাপ
ছিল, তাই।
আমিঃ আপনার কেন মন খারাপ তা জানতে পারি?
আরোহীঃ চলেন ছাদে গিয়ে কথা বলি, এখানে
কেউ শুনে ফেলতে পারে আমরা দুজনে কথা বলছি।
আমি আরোহীকে বললাম ঠিক আছে আমি আসছি
ছাদে, আরোহী আমাকে গিটার নিতে বলল সাথে করে, শুনে আমি একটু হাসি দিলাম তাকে। গিটার
নিয়ে আস্তে করে বের হয়ে দরজা লাগইয়ে দিলাম। সিঁড়ি বেয়ে ছাদে ঊঠছি রাত তখন
১.৪৫মিনিট হবে, আমার ঘড়িটা আবার ৩০মিনিট পর পর লাইট অন-অফ করে জানিয়ে দেয় সংকেত।
এত রাতে আমি ছাদে যাচ্ছি কিন্তু আমার মনে কোন ভয় বা অন্য কোন চিন্তা মাথাতেই
আসছেনা, কিসের নেশায় যাচ্ছি তা সৃষ্টিকর্তা ছাড়া কেউ জানেনা, তবে আরোহীর টানে আমি
বিভোর হয়ে আছি সেটা বেশ ভালই বুঝতে পারছি। ছাদে গিয়ে দেখি আরোহী আমার আগেই এসে বসে
আছে, এত তাড়াতাড়ি কিভাবে এল ভাবিনি, ওর কাছে গিয়ে দাড়ালাম, কেন জানি মনে হল আরেকটু
কাছে দাড়ালে ভালহত, আরোহী আমাকে বলল আপনি এত দূরে কেন আরও কাছে আসুন।
আমি একটু কাছে এসে বসলাম, আরোহী বলল
আপনাকে আমি তুমি করেই বলব, আপনি করে বলতে আমার ভাল লাগেনা।
আমিও তার কথায় সম্মতি দিলাম। কিন্তু তখনি
কেউ তুমি বলা শুরু করিনি।
আরোহী আমাকে আরও পাশে এসে বস্তে বলল,
আমাদের মাঝে তখন ৩ফুটের গ্যাপ ছিল।
আমিঃ না ঠিক আছে বলে একটু এগিয়ে গেলাম,
আকস্মিক ভাবেই আরোহী আমার বাহু জড়িয়ে দরল, আমার ভিতরে তখন অন্যরকম একটা পরশ
অনয়ভুতি হল, হয়ত কাপছিলাম তাই আরোহী জিজ্ঞেস করল তুমি কি ভয় পাচ্ছ কোন কারনে?
আমিঃ ভয় কেন পাব আমি, আর ভয়ের কথাই বা
আসছে কেন এখানে ?
আরোহীঃ তাহলে হাত দরেছি সেই থেকে কাঁপছ
তুমি।
আরোহী আপনি থেকে তুমিতে সম্বোধন করছে
দেখে আমিও তুমি করে বললাম,
আমিঃ না, এত রাতে বাহিরে বের হয়েছিত তাই
ঠান্ডা একটু বেশি, কথা বলা শেষ হতেই আরোহী তার গায়ের চাদরটা আমাকে দিয়ে দিল।
আমি বললাম আরে তোমার তো ঠাণ্ডা লাগবে,
আমকে চাদর দিয়ে দিলে।
আরোহী বলল যে মৃত তার আবার শীত লাগে
নাকি, খুব আস্তে বলায় তেমন স্পষ্ট শুনতে পাইনি, তাই আমি বললাম কে মৃত?
আরোহী না কিছুনা, কই আজকে গান শুনাবেনা।
আমিঃ এতরাতে গান গেলে সবাই জেগে যাবে তো।
আরোহীঃ কিচ্ছু হবেনা তুমি শুরু কর।
আমিঃ তাহলে আমার সাথে তোমাকেও গাইতে হবে
যে?
আরোহীঃ যাহ আমি গান শুনতে পারি গাইতে
পারিনা।
আমি বললাম ঠিক আছে তাহলে আমিও আজ গান
গাইব না।
আরোহি শেষে রাজী হল, দুজনে মিলে একসাথে
গান ধরলাম। গানটা আরোহীর প্রীয় গান, আমিও শুনেছি, বালাম এবং জুলির কন্ঠ, খুব ভাল
লাগছিল গানটা দুজনে মিলে গাওয়াতে,
“এক
চোখে আকাশ আমার, অন্য চোখে শূন্যতা
কোন
চোখে রাখবে চোখ, খুঁজে নেবে পূর্ন্যতা,
এক
হাতে দুঃক্ষ আমার, অন্যহাতে সুখপাখি
কোনহাতে
রাখবে হাত, বসে বসে ভাবছ কি?????”
এমন আবেগ ঘন মুহূর্ত্বে এমন একটা গান
আসলেই আমার কাছে অনেক ভাল লাগছিল, আমি আরোহীর দিকে তাকিয়ে দেখলাম তার চোখে পানি,
তার চোখের পানি মুছে দিতেই সে আমাকে জড়িয়ে ধরল, আরোহীর হাত গুলো অস্বাভাবিক শীতল
ছিল এমনকি তার শরীর টাই ছিল বরফ শীতল ঠান্ডা। আমি তখন এ নিয়ে তেমন কিছু ভাবিনি,
হয়ত রাতের ঠান্ডা বাতাসে এমনটি হয়েছে, আরোহী আমাকে জড়িয়ে ধরে যেন কান্নার বেগ
বাড়িয়ে দিল, আমি বুঝলাম তার ভিতরে কোন চাপা কষ্ট আছে, একটু দাত্বস্থ হতেই আরোহী সর্যি
বলে আমাকে ছেড়ে একটু সরে বসল, আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তোমার কি হয়েছে আর কান্নাই
বা করছে কেন?
আরোহীঃ আমি তোমাকে বলব সব, কিন্তু আজ নয়,
অন্য একদিন, তবে তুমি যেন রেখ আমি তোমাকেই পেয়েছি একমাত্র আপন করে, কারও প্রতি
আমার তেমন ভরসা নেই, কিন্তু তোমাকেই আমি ভরসা করতে পারি, তবে সময় হলে আমি তোমাকে
সব বলব, আর তোমার সাথে আমার দেখা হওয়ার কথা কাউকে বলোনা, প্লিজ?
আমিঃ তা না হয় বলবনা কিন্তু কেন তা বলা
যাবে?
আরোহীঃ এখন বলতে পারবনা, পরে বলব। এরপর
আরোহী মূহুরত্বে স্বাভাবিক হয়ে গেল, কপট রাগ দেখিয়ে আমাকে বলল তুমি নাকি আজ বিকালে
আমার ছোট বোনকে ভয় দেখিয়েছ?
আমিঃ হেসে , আরেহ না আমি ভয় দেখাবো কেন,
সেই আমাকে দেখে অনেক ভয় পেয়েছে, আসলে আমি হঠাৎ করেই তার পিছন থেকে কথা বলাতেই ভয়
পেয়েছে।
আরোহীঃ ওহ তাই বল, বাসায় গিয়ে আম্মুকে
তোমার নামে বানিয়ে অনেক কথাই বলেছে, আমি আমার রুম থেকে সব শুনেছি।
আমিঃ তা তুমি তখন কিছু বল নি ?
আরোহীঃ কেন আমি আবার কি বলব, আর কেনইবা
বলব?
আমিঃ অভীমান করে, তাইতো কেনই বা বলবে,
ঠিক আছে অনেক রাত হয়ে গেছে এখন চল রুমে যাই।
আরোহীঃ রাগ করলে নাকি, বলেই আমার হাত ধরে
টেনে বসিয়ে দিল আবার।
এভাবে কথা বলতে বলতে মাঝ রাত্রি হয়েগেল,
৩.১৫মিনিট হবে, আরোহী বলল, চল এখন যাওয়া যাক।
দুজনে সিঁড়ির কাছে আসতেই আরোহি পিছন থেকে
আমার হাত টেনে বলল, কাল রাতে আবার আসবে তো?
আমিঃ কাল রাতে আসব কিন্তু আমরা দিনেও তো
কথা বলতে বা দেখা করতে পারি, রাতে কেন?
Comments