ভৌতিক প্রেমের গল্প - ভৌতিক ভালবাসা
২য় ও শেষ পর্ব
আরোহীঃ আমি দিনে বের হইনা, রাতেই আমার
ভাল লাগে, আর আমি ছাদেই রাতে হাঁটাহাঁটি করতে পছন্দ করি।
আমিঃ এটা কেমন কথা হল আবার, রাতে বের হও,
কিন্তু দিনে বের হওনা।
আরোহী হেসে বলল, আসলে একটু সুন্দর কিনা
তাই।
দুজনে একসাথে হাসতে হাসতে সিঁড়ি দিয়ে
নিচে নেমে আসলাম, আরোহী আমার আগেই ঘরে ঢুকে গেল, আমিও রুমে ঢুকে পড়লাম। রুমে গিয়ে
দেখি রুমের লাইট জ্বলে আছে, এইরে ভাইয়া মনে হয় জেগে গেছে, ভাইয়া আমাকে দেখেই কিছু
বল্লনা তবে বুঝতে পেরেছি রেগে একেবারে টং হয়ে হয়ে আছে, আমি ঘুমিয়ে পড়লাম, কিন্তু
ঘুম আর এলনা, আরোহীকে নিয়ে ভাবতে লাগলাম, কি এক যাদু জানে মেয়েটি মাত্র ২দিনের
কিছুসময়ের জন্য দেখা হয়েছে, আর এতটা ঘনিষ্ঠ হয়ে পরেছি কিভাবে সেটাই ভাবাচ্ছে আমাকে,
কিন্তু ওর শরির ঠান্ডা থাকে কেন সবসময়, আজ যখন সে আমার হাত ধরেছিল তখনও ঠান্ডা
ছিল, একদম বরফের মত ঠান্ডা, হয়ত বাহিরে থাকার ফলে হবে হয়ত। ঘুমাতে ঘুমাতে
৪.০৮মিনিটে ঘুমালাম। সকালে আর ঘুম ভাঙ্গলনা, ঘুম থেকে উঠলাম সেই দুপুর ১২টায়,
নাস্তা খেয়ে সোফার রুমে এসে দেখি সবাই আমার দিকে বিস্ময় আর ভয় নিয়ে তাকিয়ে আছে,
আমি আম্মুকে জিজ্ঞাসা করলাম কি হয়েছে আম্মু, কি দেখছ এভাবে?
আম্মুঃ রোজান, তোর মিজান ভাই তোকে রাতের
বেলা ছাদে যেতে নিষেদ করেছিল, তারপর ও তুই কেন গতকাল রাতে ছাদে গিয়েছিলি, কি করিস
রাতে ছাদে গিয়ে।
আমিঃ আম্মু, তুমি তো জানই আমি দেরী করে
ঘুমাই, আর আমার গিটার বাজানোর সখ আছে, তাই রাতে গিটার নিয়ে ছাদে চলে যাই, আর আমি
তো কারও সমস্যা করছিনা।
আম্মুঃ সমস্যা তুই কাওকে না করলেই,
সমস্যা তোর হবে, আর তোর সমস্যা মানে আমাদের সমস্যা, আমিও নিষেদ করেছি যেতে, আজকের
পর ছাদে যাওয়া বারন, রাতে ঘুম না এলে, বাহিরে থেকে ঘুরে আয়, তাই বলে ছাদে নয়।
আমিঃ তা না হয় বুঝলাম, কিন্তু ছাদে কেন
যাবোনা, সেই কারন তো বলবা আম্মু?
আম্মুঃ তোর কাছে আমার কি কৈফিয়ত দিতে হবে
?
আমিঃ ঠিক আছে, তুমি যা বলবে তাই হবে।
রাগ করে চলে আসলাম সেখান থেকে, রুমে এসে
ভাইয়ার সাথে চোখাচোখি হল, ভাইয়ার চোখ দেখে কিছুই বুঝতে পারলাম না, কিন্তু আমার চোখ
ভাইয়াকে ভস্ম করে দিতে চাইল, ভাইয়াকে বললাম তোমার বাইকের চাবিটা দাও তো?
ভাইয়াঃ চাবি দিতে দিতে, কোথায় যাবি?
আমিঃ কোথায় যাব সেটাও কি তোমাদের সবাইকে
জানাতে হবে।
ভাইয়া আর কিছু না বলে চাবিটা দিয়ে দিল,
চাবিটা পকেটে নিয়ে গিটার কাধে ঝুলিয়ে লিফটে এসে G
বার্টনে চাপ দিলাম, লিফটের দরজা বন্দ হয়ে যাবে এই সময় উপমা এসে লিফটের দরজা
থামানোর জন্য ইশারা করল, আমি দরজাটা খোলার বাটন চাপ দেইনি, তাই দরজা আর খুলেনি
বমদু হয়ে গেল, আমাকে নিয়ে লিফট নিচে চলে আসল, মাথায় সয়তান ভর করল, আসলে বাসার সবার
এই রকম বিহেভে আমার ভেতরে রাগ জন্ম নিল, আর সব রাগ গিয়ে পড়ল এখন উপমার উপর, তাই
লিফট থেকে নামার আগে 1,2,3,4 সব বাটন গুলো টিপে দিয়েছি যাতে
উপমার অনেক দেরী হয়ে যায়, সেদিন আমাকে বাসার ছাদে ফাজিল বলার শাস্তি এটা। মনটা
একটু হলেও ভাল হয়ে গেল, বাইক স্টার্ট দিয়েই ছুটিয়ে দিলাম উদ্দেশ্য রামপুরা রোড় হয়ে
সিদ্বীরগঞ্জ ষ্টাফকোয়ার্টার এর কাছেই একটা ছোট মাঠ আছে, আমি আগে প্রায় এখানে আসতাম
বন্দুদের সাথে, কিন্তু আজ একাই এলাম, আনমোনা হয়ে বাইক চালাচ্ছিলাম তাই লুকিং মিররে
চোখ পড়তেই একটা লালা এলিউন গাড়ি আমার পিছনে আসতেছিল সেটাকে তেমন পাত্তা দিলাম না,
বাইক চালাচ্ছিলাম খুব ধীরে মাত্র ৪০-৫০ স্পীডে। যথাস্থানে এসে বাইক রেখে গিটার
নিয়ে একটা উচু যায়গায় বসলাম, নিরব পরিবেশ, সামনে ছোট মাঠ, তার পরে একটা বড় বালুর
মাঠ। গিটার হাতে নিয়ে গিটার এর তারে শব্দ করতে ছিলাম, আসলে বাসার সবার ছাদে যাওয়া
নিয়ে বারন করাটার পিছনের কারনটাই আমাকে ভাবাচ্ছে খুব, আর আরোহীকেও আমার অস্বাভাবিক
লেগেছে, দিনে তাকে কোথাও দেখতে পাইনা, না বারান্দায় না ছাদে, রাতেই তাকে ছাদে
দেখতে পাই, আর এত গভীর রাতে সে একাকী ছাদে কি করে।
সবকিছু নিয়ে খুব হিজিবিজির মাঝে আছি আমি,
গান গাইতেও ভাল লাগছে না, তবুও উপমার সাথে লিফটের ঘটনা মনে পড়ে যেতেই একচিলতে হাসি
খেলেগেল আমার ঠোটের কোনে। গিটার টা হাতে নিয়ে বেজ বাবা সুমনের গান ধরলামঃ
“অদ্ভুত
সেই ছেলেটি আবার শুরু করল হাঁটা
কালো লম্বা এলোমেলো চুলে, চোখ দুটো তার ঢাকা
হাতে তার একুয়েস্টিক পকেটে হারমোনিকা
কষ্টে ভরা এ জীবনের, বহু গান যে তার শোনা”।
কালো লম্বা এলোমেলো চুলে, চোখ দুটো তার ঢাকা
হাতে তার একুয়েস্টিক পকেটে হারমোনিকা
কষ্টে ভরা এ জীবনের, বহু গান যে তার শোনা”।
গান শেষ হবার আগেই আলো এসে আমার সামনে
পড়ল, ঘুরে দেখি উপমা, রেগে একেবারে বোমা হয়ে আছে, যেকোন সময় ফেটে যাবে হয়ত,
রাস্তায় সেই লাল গাড়ীটি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম, বুঝলাম আমার বাইকের স্প্রীড কম
থাকায় সে আমাকে খুব সহজেই ফলোকরতে পেরেছে। উপমা আমার সামনে এসে দাঁড়ালো, আমি বসা
থেকে উঠতেই বলল বসুন, আপনার সাথে আমার কিছু কথা ছিল।
আমিঃ আমি আজেকের এই বেপারটার জন্য সত্যি
লজ্জিত।
উপমাঃ সে বিষয়ে না, অন্য বিষয়ে?
আমিঃ অন্য কথা আছে!! কি কথা?
উপমাঃ আপনি যে এত রাতে ছাদে যান এবং
সেখানে কেন যান তা আমি বুঝি, আমি ও আগে ছাদে যেতাম আমার বোনের সাথে কথা বলার জন্য,
বাসার সবাই যেনে যাবার পর আমাকে আর ছাদে যেতে দেয় না।
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি দেখে উপমা আমাকে
আরোহীর সব কাহীনি খুলে বলল। উপমার কাছ থেকে সব শুনে আমি আর স্থীর থাকতে পারলাম না,
ওখানেই উপমার কোলে অজ্ঞান হয়ে পড়লাম।
উপমার কাছে যা শুনলাম, তা হল, আরোহী আর
সে জমজ ২বোন ছিল, ছিল বললাম এই কারনে, যে আরোহী আজ থেকে ১বছর আগে মারা গেছে, এই
ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে। আরোহীর সাথে একটি ছেলের প্রেম হয়েগিয়েছিল সেই ছেলেটিও এই
বাসাতে, মানে আমার মামা যে ফ্ল্যাটে থাকেন সেখানে ছিল। ছেলেটি ছাদে যেত প্রায়,
বেশির ভাগ সময় রাতের বেলা। এভাবেই আরোহীর সাথে পরিচয় হয় তার। ছেলেটি গিটার বাজাতো
ভাল, আর গান গাইত অনেক সময়, আরোহী তার গানের প্রতি মুগ্ধ হয়েই তাকে প্রপোজ করে
বসে, ছেলেটিও তাতে সাড়া দেয়। ওরা সবসময় ছাদেই কথা বলত বেশি, বিকেলেও কথা হত কিন্তু
খুব কম তখন উপমা পাশে থাকত তাই রাতের বেলা সবাই ঘুমিয়ে পড়লে আরোহী ছাদে চলে আসত,
আর ছেলেটি আগে থেকেই ছাদে বসে থাকত, এভাবে কিছুদিন ভালোই চলছিল তাদের মধ্যকার
প্রেম, ভালবাসা।
একদিন আরোহীর বাবা, মাঝরাতে কিসের শব্দে
ঘুম ভেঙে যার উনার, লাইট না জ্বালিয়েই তিনি বিছানাথেকে উঠে দরজার নিকট এসে দেখেন,
একটি ছায়া, ছায়া বললে ভূল হবে, একটি মানুষ তার ঘর থেকে বের হচ্ছে, এখানে সে তার
স্ত্রী আর তার ২মেয়ে ছাড়া কাজের বুয়া থাকে, তাই সে তাদের কেউ হবে ভেবে মেয়ের ঘরে
গিয়ে দেখলেন বড় মেয়ে আরোহী বিছানায় নেই, তিনি সিঁড়ি বেয়ে ছাদে গিয়ে দেখেন আরোহী
একটি ছেলের গাড়ে মাথা রেখে বসে আছে, তিনি নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারেন নি, আরোহীকে
নিজের রুমে যেতে বলে, সেখানে ছেলেটিকে মারতে থাকেন। কিছুক্ষন পরে ঘরে এসে আরোহীকেও
অনেক বেত্রাঘাত করেন তিনি, তার মান-সম্মান সব ধূলায় মিশিয়ে দিতে চেয়েছিল এসব বলে
অনেক মারেন আরোহীকে।
পরেরদিন আর সেই ছেলেকে আর খুঁজে পাওয়া
যায়নি, তার পরিবার পরে এখান থেকে চলে যায়।
আরোহী বিশ্বাস করত তার বাবাই ছেলেটিকে
মেরে ফেলেছে, অথবা তার লাশ কোথাও মেরে গুম করে ফেলেছে। কয়েকদিন আরোহী বাসা থেকে
বের হতনা, কিচ্ছুই খেত না, এর ৫দিন পরে কেমন পাগল হয়ে গেছিল সে, উল্টাপাল্টা আচরন
করত, আর তার বাবাকে সহ্য করতে পারতনা, সে তার বাবাকে খুনী বলত দেখলেই। এর দুদিন
পরেই ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্নহত্যা করে আরোহী।
যেদিন সে আত্নহত্যা করে সেদিন সে কালো,
জরি আর পাথরের ড্রেস পরেছিল।
উপমা প্রায় ছাদে গিয়ে বসে থাকত একাকী ভাল
লাগতনা কোন কিছু তার, কারন সে আর আরোহী
সমবয়সি ৫মিনিটের ব্যবধান ছিল দুজনার মধ্য, জমজ বোন হওয়ার কারনে, তারা একে ওপরের
কথা সবি সেয়ার করত, আরোহীর একটা ডায়রি ছিল যাতে সে সব কিছু লিখে রাখত, উদ্ভট আচরন
করার আগ পর্যন্ত্য সব কিছুই তার ডায়রিতে লিখে গেছে সে।
উপমা যখন ছাদে যেত, অনেক সময় বোনের শোকে
বসে থাকত দিগন্ত পানে তাকিয়ে, একদিন ওনেক দেরি হয়েগেছিল সন্ধ্যা হয়ে গেছে, উপমা
সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামার সময় অদ্ভুত শব্দ শুনতে পেল, এরপর পিছন থেকে ওর বোনের গলার
আওয়াজ পেল সে,
আরোহীঃ উপমা, এই উপমা, আমার আদরের লক্ষি
ছোট বোন কেমন আছিস তুই?
উপমাঃ কে, কে অখানে। অন্ধকার থেকে আরোহী
বেরিয়ে এল সেই কালো পোশাক পরে, জরি আর পাথরের কাজ করা, উপমার মনে আছে, এই জামাটা
উপমার অনেক পছন্দের ছিল কিন্তু আরোহী খুব বায়না করাতে সে আরোহীকে দিয়ে দেয়।
উপমাঃ আপু তুমি ? তুমি কিভাবে এলে, তুমি
না.........
আরোহীঃ কি মরে গেছি তাইতো, আরে বোকা বোন
আমার, আমি যে তোকে অনেক ভালবাসি, তাই মৃত্যুর পরেও তোকে দেখতে এসেছি ছোট বোন আমার।
উপমাঃ তুমি কেন এমন করলে আপু, কেন তুমি
আমাকে একা রেখে চলে গেলে।
আরোহীঃ দিহানকে আব্বু তার লোক দিয়ে মেরে
ফেলে লাশ ঘুম করে ফেলেছে, প্রতিরাতে দিহান আমার কাছে আসত, আমাকে সে তার সাথে ঘটে
যাওয়া তার মৃত্যু সব বলত, সে আমাকে ভালবাসে তাই আমাকে নিতে এসেছে, এমন প্রেমিক
কয়জনে ভাগ্য জোটে বল, যে কিনা মৃত্যুর পরেও তার প্রিয়তমার নিকট ফিরে আসে।
আমিও যেতে চাইছিলাম না তোকে ছেড়ে, কিন্তু
কি করব বল, দিহান এই পরিনতির জন্য আমি নিজেকে দায়ী ভাবতাম, আমি একটুও সান্তি
পাচ্ছিলাম না, বারে বারে দুঃস্বপ্নের মত দিহানের মৃত্যু আমার চোখে ভেসে উঠত। তাই
নিজেকে আর সুস্থ মানুষ বলে মনে হল, এর থেকে মুক্তি পেতেই আমি আত্নহত্যার পথ বেছে
নিয়েছি।
উপমাঃ আমার কথা তোমার মনে পড়েনা বুঝি,
কিভাবে আমাকে একা রেখে তুমি চলে গেলে, আমার কিছুই ভাল লাগেনা আপু।
আরোহীঃ তুই চিন্তা করিস না বোন, আমি তোর
পাশে সবসময় আছি আর থাকব, এখন যেভাবে এসেছি।
উপমার সাথে আরোহীর কথা বলার কথা কিছুদিন
পরে উপমার বাবা শুন্তে পান, এবং ওইদিন থেকেই ছাদে কাউকে যেতে দেন না সন্ধ্যার পরে,
এমনকি হুজুর এনেও বাড়িতে মিলাদ পরিয়েছেন, ও সর্বত্র হুজুরের দেয়া পানি ছিটিয়ে
দিয়েছিল, এরপর আর কেউ আরোহীর আত্নার দেখা পায়নি।
সন্ধ্যার কিছু আগ মূহুরত্বে আমার জ্ঞান
ফিরে এল। বিছানার পাশে সবাই বসে আছে এমনকি উপমাও বসে আছে, আমি এখানে কিভাবে এলাম
এটাও বুঝতে পারলাম যে উপমাই কারও সাহায্য নিয়ে আমাকে বাসায় এনেছে। আমি সুস্থ হয়েছি
দেখে সবাই অন্য রুমে চলে গেল, উপমা আর মিজান ভাই রয়েগেল আমার রুমে।
মিজান ভাই বলল, রোজান আমি তোকে বারন
করেছিলাম রাতের বেলায় ছাদে না যেতে, তার কারন ছিল আরোহী। আমরা প্রথম যখন এখানে আসি
৬মাস হবে, আমিও ছাদে যেতাম গিটার নিয়ে বা সিগারেট খেতে, আমিও একটি মেয়েকে দেখেছি
কালো জরি আর পাথর বসানো ড্রেস পরা, আমারও তার সাথে ভাব বিনিময় হয়। পরেরদিন উপমাকে
দেখে আর ওর সাথে কথা বলে আমি সব বুঝতে পারি, উপমাই আমাকে সাবধান করে যেন আমি ছাদে
না যাই, এরপর থেকে আমি আর রাতে ছাদে যাইনি। তোকে বারন করলাম কিন্তু তুই ও
মানছিলিনা আমার কথা, আমি যানি তুইও তার প্রেমে পড়েগেলে কষ্ট পাবি, তাই তোকে ছাদে
যেতে নিষেদ করেছিলাম, আবার সত্যিটা তোকে জানালে তুই বিশ্বাস করতি না ভাই। তাই আমি
উপমাকে বলেছি যাতে সে একটা ব্যবস্থা করে। উপমাও ভাইয়ার সাথে সাথে মাথা ঝাকিয়ে
সম্মতি দিল।
অনেকদিন পরে যখন মিজান ভাই ছাদে গেল তখন
আরোহীর দেখা পেয়েছিল তিনি তবে তিনিও আর যান নি সেখানে, কিন্তু রোজান কে পেয়ে বসল
আরোহী, রোজান ভাল গান গাইতে পারে, এবং ভাল ছেলেও সে, তাই আরোহী তার সাথেই বন্দুত্ব
করতে চেয়েছিল। কিন্তু রোজান তো তাকে ভালবেসেই ফেলেছে।
মিজান ভাই চলে যেতে, উপমাও চলে গেল,
রোজান রুমে একা বসে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে আছে সুধু।
মাগরিবের আজানের শব্দ শুনে রোজান বিছানা
থেকে নেমে ফ্রেশ হয়ে গিটার হাতে নিয়ে ছাদে গেল, সবাই দেখেও রোজানকে আটকালোনা আজকে,
রোজান ছাদে পা রাখতেই অদ্ভুত এক ঠান্ডা বাতাস এসে তার শরীরে দোলা দিয়ে গেল। সামনে
আগ বাড়তেই একটা মিষ্টি ঘ্রাণ পেল সে, এককোনায় বসে রোজান বলল, আজকে আমার ঠাণ্ডা
লাগছেনা কেন জানো?
আরোহী যেন হঠাৎ করেই আমার সামনে এসে
হাজির হল, কেন বলছ একথা ?
আমিঃ জীবনের নতুন এক প্রান্তে এসে আমি আজ
দাঁড়িয়েছি আজ, আমি তোমাকে পছন্দ করি বললে ভূল হবে ভালবেসে ফেলেছি, যাকে ভালবেসে এ
হৃদয়ে স্থান দিয়েছি আজ শুনতে পেলাম সে এক আত্না। তার অস্তিত্ব বলতে কিছুই নেই।
আরোহীঃ আমি জানি, কিন্তু আমি তোমাকে
ঠকাতে চাইনি, তোমাকে হারিয়ে ফেলার ভয় ছিল তাই বলিনি, ভেবেছিলাম আগে তোমার সাথে ভাল
বন্দুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠুক তারপর সব বলব, আর প্রথম দিকে যদি বলে দিতাম তাহলে
সবার মত তুমিও আসতে চাইতে না, আর তোমার গান শুনতে আমার ভাল লাগে রোজান। তাই চাইনি
তুমি আর সবার মত আমাকে ভয় পেয়ে না আস। আমি তোমাকে হারাবার ভয় পেয়েছিলাম রোজান।
আমিঃ এখন আমি কি করব বলতে পার, নতুন করে
স্বপ্নের ঘর বাধার আগেই তা ঝড়ে ভেঙে খানখান হয়ে গেল। এটা আমি মানতে পারছিনা
কোনমতেই।
আরোহীঃ আমিতো সব সময় তোমার পাসেই আছি,
থাকব সবসময়, হয়ত আমাদের এই পরিনতির কোন প্রাপ্তি নেই, কিন্তু আমাদের ভালবাসা তো আর
মিথ্যা নয়।
আমিঃ তুমি ঠিকই বলেছে আমাদের এই ভালবাসার
কোন প্রাপ্তি নেই। ভালবাসা যেমন অদৃশ্য, তেমনি তুমিও তাই।
আরোহী রোজান এর গালে একটা চুমু খেল,
রোজানের গালে সে সুধু ঠাণ্ডা স্পর্শ পেল। আরোহী বলল আমাকে এবার যেতে হবে বন্দু,
তবে যাওয়ার আগে তোমার কন্ঠে শেষ বারের মত একটা গান শুনতে চাই, তোমার যেটা ভাল লাগে
সেটাই গাও আজকে।
রোজান গিটার হাতে নিল, হয়ত আজকেই শেষ
গিটার বাজানো তার, ভাঙা মনে গান ধরল, গান
গাইছে আর চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি বেয়ে পড়ছে।
“বলনা কেন তুমি বহুদূর, কেন আমি একা,
হৃদয়ে ভাঙচুর ।
জানো না তুমিহীনা এ আমার, স্বপ্ন মেঘে ঢাকা, নামে না রোদ্দুর,
দেয়ালে দেয়ালে, খেয়ালে
খেয়ালে, হিসেবে বেহিসেবে তোমাকেই
খুঁজি । জানো না তুমিহীনা এ আমার, স্বপ্ন মেঘে ঢাকা, নামে না রোদ্দুর,
আড়ালে আড়ালে, কোথায় হারালে, ফিরে তুমি আর আসবেনা বুঝি" ???
Comments