ভালবাসার গল্প - প্রাপ্তি
গল্পের নাম প্রাপ্তি
পর্ব - ০২
তানিয়াকে বুকের আলিঙ্গন থেকে মুক্ত করে
দুজনে বেঞ্চে বসে রইলাম,
তানিয়াঃ এতদিন কোথায় ছিলে তুমি ?
মিলনঃ গ্রামের বাড়ি গেছিলাম, গতকাল ঢাকায়
এসেছি।
তানিয়াঃ তা গ্রামের বাড়ি গিয়ে ভালোই করেছ
?
মিলনঃ কি রকম ভালো করেছি ?
তানিয়াঃ এই যে আগে আমার দিকে ফিরেও
তাকাতে না, আর গ্রাম থেকে ফিরে এসেই জড়িয়ে চুমু দিলে।
মিলনঃ তাই বুজি, তাহলে তো সত্যি ভালো
হয়েছে গ্রামে গিয়ে, বলে আবার জড়িয়ে দরলাম।
আজ আর ক্লাস করলাম না, হাটতে হাটতে চলে
আসলাম কলেজের পাশে একটা পার্কে, পার্ক টা এখন অনেক নির্জন, দুপুর বেলা তাই হয়ত,
দুজনে বসে গল্প করছিলাম, তানিয়া কে জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা তুমি আমাকে কেন ভালবাসলে,
সেটা কিন্তু বলনি ? আর কেনইবা আমাকে তোমার পছন্দ ?
তানিয়াঃ সত্যি বলতে প্রথম যেদিন তোমাকে
দেখেছি, দেখে মনে হয়েছে তোমার ভিতরে একটা চাপা কষ্ট লুকিয়ে আছে, তারপর তোমার পিছনে
আমি ঘুরেছি অনেক বার, তোমাকে ফলো করতাম সবসময়, কিন্তু তুমি কোনসময় ডানে-বায়ে
তাকাতে না তাই আমাকে তোমার নজরে পড়েনি, তো,মার প্রতি একটা অন্য রকম টান অনুভব
করতাম, মাঝে মাঝে মনে হত , মিলন আমি তোমার জন্যই এ পৃথীবিতে এসেছি।
মিলনঃ একটু বেশি কাব্যিক হয়ে গেল না
কথাগুলো।
তানিয়াঃ কপট রাগ নিয়ে, হবেনা বা কেন
প্রেমে পড়েছি তো কাব্যিক বালকের, কাব্যিক না হলে চলে।
মিলনঃ তোমাকে যেদিন দেখেছি সেদিন থেকে আজ
অব্দি তোমাকে ১মিনিটের জন্য হলেও মন থেকে দূরে রাখতে পারিনি, প্রথম যেদিন কলেজে
এসেছ তুমি, নীল জামা, আর নীল জরির ওড়না পরে এসেছ, আর তোমার চুল গুলো খোলা ছিল, খুব
সুন্দর লাগছিল দেখতে, বিশ্বাস কর, আমি কখনও এমন করে কোনদিন কোন মেয়ের দিকে তাকাইনি
এভাবে, কিন্তু তোমাকে দেখার পরে নিজের চোখের পাতাও বন্দ হচ্ছিল না, তার সাথে অন্য
দিকে যে তাকাবো তার ক্ষমতা যেন হারিয়ে ফেলেছিলাম।
তানিয়াঃ এত আগে থেকে তুমি আমাকে পছন্দ
করতে কিন্তু আমাকে এর আগে বলোনি, অনেক খারাপ তুমি, আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছ।
মিলনঃ ভয়ে বলতাম না, তুমি হলে সমাজের
বিত্তবান পরিবারের মেয়ে, আর আমার তো কোন পরিচয় নেই, যাও একটু সুতো ছিল ছেঁড়া, তাও
গ্রামে গিয়ে ছিন্ন করে আসলাম।
তানিয়া মিলনের চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে
পারল মিলনের ভিতরে আসলে অনেক কষ্ট জমা আছে সে যা ভেবে ছিল তার থেকে অনেক অনেক
বেশি।
পরিবেশ স্বাভাবিক করার জন্য তানিয়া বলল,
চল আইসক্রিম খাব।
মিলনঃ হুম, চল আমার কাজ আছে, কয়েকদিন
কর্মস্থলে যাওয়া হয়না।
এরপর দুজনে দুটো আইসক্রিম খেয়ে যে যার
বাসার পথ দরল।
মিলন মেসের রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে চলে গেল রেস্টুরেন্ট এ, মালিক মিলন কে দেখেই
খুশি হল,
মিলন কে বসতে বলে বলল, মিলন তোমাকে তো আর
এইখানে কাজ করতে দিতে পারিনা,
মিলনের কথাটা শুনে পেটের ভিতর মোচড় দিল,
সে আমতা আমতা করে বলল কেন স্যার, আমি তো আপনাকে বলেই গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলাম,
তাহলে আমার চাকুরী থাকবেনা কেন।
রেস্টুরেন্ট মালিক হেসে বলল, আরেহ বোকা
তোমাকে তো বলি নাই তোমার চাকুরী নেই, বলেছি এখানে তোমার কাজ নেই, আগামীকাল থেকে
আমাদের যে বড় হোটেল আছে, তেজগাঁও সেখানে তোমার পোস্টিং হয়েছে, কাল থেকে সেখানেই
এসিস্টেন্ট সহকারি হিসেবে থাকবে, তোমার কাজ হবে যারা সেখানে থাকতে আসে, বা আমাদের
হোটেলে খাবার খায় তাদের দেখভাল করার দায়িত্ব তোমার, তোমার সাথে আরও ৬জন থাকবে,
তাদের দিয়ে তুমি কাজ করাবে, আর নিজে ঘুরে দেখবে তারা সঠিক মত কাজ করে কিনা।
মালিকের কথায় খুশি হয়ে ওনার পা দরে সালাম
করে বিদায় নিলাম।
পরেরদিন কলেজ গিয়ে তানিয়াকে খুশির খবরটা
দিলাম, সেও খুশি হয়েছে অনেক।
এখন আর ক্লাসে তেমন মন নেই, তবে পড়ালেখা
কমেনি, আগের থেকে আরও বেশি করে বই নিয়ে স্টাডি করি, সময় যাই পাই তার ভিতরে চেষ্টা
করি। কলেজ থেকে একটু তাড়াতাড়ি চলে আসলাম মেসে।
তেজগাঁও যাত্রাবাড়ী থেকে যেতে অনেক সময়
লাগে, তাই সেখানেই আমার থাকার ব্যবস্থা করেছেন হোটেল কর্তৃপক্ষ। মেসের সবার কাছ
থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসলাম তেজগাঁও। হোটেলের ম্যানেজার তৌফিক ভাই আমাকে আমার রুম
দেখিয়ে দিলেন। রুমে কাপড় রেখে তার সাথে একটা টেইর্লাস এ গেলাম, স্যুট, পেন্ট
বানাতে, হোটেলের সবাইকে এটা পরে রাখতে হয় যতক্ষন সে ডিউটি করবে। আই নিজেও কিছু
শার্ট পেন্ট বানাতে দিলাম। তৌফিক ভাই আর আমি একসাথে লাঞ্চ করতে বসলাম, খাওয়ার ফাঁকে
ফাঁকে তিনি আমাকে আমার কাজ সম্পর্কে ব্রিফিং দিতে থাকলেন, আমি মনোযোগ দিয়ে শুনলাম
সব, এরপর তিনি আমাকে আমার রুমের চাবি, একটি মোবাইল ফোন যাতে আগে থেকেই সিম
এক্টিভেট করা ছিল। আজকে আর কাজ করলাম না, রুমে গিয়ে রুমতা গোছাতে শুরু করলাম, সব
দিক দিয়ে ভালোই রুম, অনেক বড়, সাথে এতাচ টয়লেট, ফ্রিজ আরও অন্যান্য জিনিষ পত্র তো
আছেই। মূল হোটেলের থেকে পায়ে হাঁটার রাস্তা আমাদের স্টাফ কোয়াটার, ৩মিনিট লাগে
যাওয়া আসা করতে। রাতের বেলা হোটেলের লবিতে এসে তৌফিক ভাইকে পেয়ে গেলাম, ভাইয়ের
সাথে হোটেল টা ঘুরে দেখলাম, তিন তারকা হোটেল এটি। খুব আলিশান বলা যায়, আমার কাছে
এটাই অনেক বড় একটা রাজ্যর মত মনে হল। ভালই চলছিল নতুন পরিবেশে নতুন কাজ, উপভোগ
করছিলাম আমি, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত্য তৌফিক ভাই ডিউটি করেন আর দুপুর থেকে রাত
৯টা পর্যন্ত্য আমার শিফট, তবে আমরা আমাদের নিম্নস্থ দের দিয়ে সব করাই তদারকিটা
শুধু আমরা দুজনে মিলে করি। কিছুদিনের টানা পরিশ্রমে অসুস্থ হয়ে পড়ি, অসুস্থ শরির
নিয়ে কলেজে যেতেও মন চাইছিল না, তবুও গেলাম, তানিয়া কে আমার নতুন মোবাইলের নাম্বার
দিলাম, আমি নিজে একটা পার্সোনাল সিম কিনেছি, সেটার নাম্বার দিলাম, অনেক গল্প করলাম
দুজনে, তানিইয়ার হাতের সাথে আমার হাত স্পর্শ হতেই ও হাত সরিয়েনিল, আমার কপালে হাত
দিয়ে দেখল অনেক জ্বর ,
তানিয়াঃ এই তোমার শরির তো জ্বরে পুড়ে
যাচ্ছে, কলেজে এসেছ কেন ?
মিলনঃ কলেজে এসেছি আমার জান কে দেখতে, আর
এ সামান্য জ্বর ঠিক হয়ে যাবে।
তানিয়াঃ ঠিক হয়ে যাবে, সামান্য জ্বর , কে
বলেছে তোমাকে, অনেক বেশি জ্বর তোমার, ডাক্তার দেখাইছ ?
মিলনঃ ডাক্তার দেখাতে দেখাতে হব কেন,
ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে খেলেই হবে।
তানিয়াঃ হ্যা ফার্মেসি থেকে ওষুধ খেলে
যদি রোগ ভাল হত তাহলে এত ডাক্তার থাকতনা দেশে, বলেই আমাকে টানতে টানতে ডাক্তার এর
কাছে নিয়ে গেল।
ডাক্তার দেখে তো মনে হচ্ছিল ৬মাসে আর কোন
রোগী আসেনাই তার কাছে, আমাকে পেয়ে যা বলল, মনে হল আমার ভিতরে রোগের বাসা ভরা,
অপুষ্টি, অনিদ্রা, আরেও কতকি, সবগুলই সত্য কথা, গুম কম হয়, আর পরিশ্রম করি বেশি
আমি। ডাক্তার একটার পর একটা রোগের কথা বলছেন আর ওষুধ লিখছেন, আর ওই দিকে তানিয়া
আমার দিকে অগ্নিবর্ষন করছিল যেন চোখ দিয়ে।
আমার ইচ্ছে হচ্ছিল ডাক্তার এর গলাটা টিপে
ধরি।
কিছু পরীক্ষা করতে দিল, তানিয়াকে বসিয়ে
রেখে আমি পরিক্ষাগুলো করতে গেলাম, ২০মিনিট পরে এসে ডাক্তার এর চেম্বারে বসে রইলাম,
কিছুক্ষন পরে উনি রিপোর্ট আনতে গেলেন, এই ফাঁকে তানিয়া শুরু করল তার ভাষন, দেখেছ,
ডাক্তারের কাছে না আসলে তূমি আরও অসুস্থ হয়ে পড়তে, আমার কথা তো শুনতে চাও না,
আমার..........আরও কিছু বলত, কিন্তু সে সুযোগ দেইনি, হাত দরে টান দিয়ে আমার সামনে
এনে ঠোটের সাথে আমার ঠোট স্পর্শ করলাম তারপর কামড়ে দিলাম হাল্কা করে, কিন্তু তার
ঠোট ছাড়িনি।
সে চোখ বন্দ করেছিল, আর আমাকে জড়িয়ে
দরেছিল। একটু পরে কারও পায়ের শব্দ শুনে তাকে ছেড়ে দিলাম। ডাক্তার স্যার ঘরে
ডুকলেন, আমাকে বললেন ঠিক হয়ে যাবে, তেমন মারাত্বক কিছু না, রেস্ট নিলেই আমি সুস্থ
হয়ে যাব।
ডাক্তারের রুম থেকে বের হওয়ার জন্য দরজার
নিকট আসতেই ডাক্তার আমাদের ডেকে মিটিমিটি হেসে বলল, এস্কিউজ মি, মি.মিলন, বাহিরে
যাওয়ার আগে অবশ্যই, আপনার ঠোটের লিপিস্টিক মুছে যাবেন।
আমি আর তানিয়া কি বলব, লজ্জায় দুজনে বের
হয়ে আসলাম, আর তানিয়া তার ওড়না দিয়ে আমার মুখ মুছে দিল। বাহিরে এসে দুজনেই হাসতে
ছিলাম। এরপর তানিয়াকে তার বাসায় ড্রপ করে দিলাম।
কিছুদিনের মধ্য কলেজের ২য়বর্ষের ফাইনাল এক্সাম
চলে আসল, আগের মত আর আড্ডা দেওয়া হয়ে উঠেনা আমাদের। দেখা হয়, কথাও হয়, তবে আগের মত
সারাদিন না। হোটেলের তৌফিক ভাই আমাকে অনেক সাহায্য করতে পড়ালেখায় যেন ব্যাঘাত না
ঘটে তাই তিনি সারাদিন ডিউটি করতেন। আমার
সবকিছুই তাকে এরি মধ্য খুলেবলেছি একদিন, সেই থেকে তিনি আমাকে ছোট ভাইয়ের মত আদর
করেন, আমিও তাকে বড় ভাই মানি, সে যা বলে আমি তাই করি।
এক্সাম দিলাম খুব ভালো ভাবেই। এখন ফলাফল
এর অপেক্ষায়, এরি মাঝে তানিয়া তার বাসায় আমাকে নেমন্ত্রন করল দুপুরে খাওয়ার।
পরিপাটি হয়ে গেলাম তাদের বাসায়।
কলিং বেল বাজাতে, বাসার বুয়া দরজা খুলে
দিল, তাকে তানিয়ার কথা জিজ্ঞাসা করতেই, সে আমাকে ভিতরে আসতে বলে তানিয়াকে ডাকতে
গেল। আমি সোফা রুমে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম, অনেক আলিশান ঘরের আসবাবপত্র, আমাদের
হোটেলের মতই। তানিয়া আসল, হেসে আমাকে অভিবাধন জানালো আসার জন্য। দুজনে বসলাম
তারপর, বুয়া হাল্কা নাস্তা দিয়ে গেল, শরবত এর গ্লাস হাতে নিয়ে চুমুক দিব এর মাঝে
আধা পাকা দাড়ি গোফের একজন পুরুষ আসলেন, বুজতে পেরেছিলাম ইনিই তানিয়ার বাবা, ইকবাল
সাহেব। গ্লাসটা টেবিলে রেখে উঠে দাঁড়িয়ে সালাম দিলাম, সালামের উত্তর নিয়ে তিনি
আমার সামনা সামনি বসলেন, আমাকেও বসতে বললেন, আমি বসার পরে উনি তানিয়াকে যেতে বললেন
সেখান থেকে। তানিয়ার ইচ্ছে ছিলনা যাওয়ার কিন্তু থাকতেও পারছিলনা, তাই সে চলে গেল।
ইকবাল সাহেব মানে তানিয়ার বাবা আমাকে
আমার নাম জিজ্ঞেস করলেন ?
মিলনঃ মোঃ মিলন ।
ইকবাল সাহেবঃ তা তুমি তো তানিয়ার সাথেই
পড়াশুনা করছ তাই না, তা তোমার পরিবারে কেকে আছেন ?
মিলনঃ জ্বী আমার পরিবারে কেউ বেঁচে নেই,
স্যার।
ইকবাল সাহেবঃ ওহ, দুঃক্ষ জনক, তা তানিয়ার
পিছিনে ঘুরেবেড়ানর উদ্দেশ্য কি তোমার, ধনির মেয়ে বলে লোভ সামলাতে পারোনি নাকি।
মিলনঃ সর্যি স্যার, আপনি যেমন টা ভাবছেন
তেমন টা আমি নই, সে আমাকে পছন্দ করত, আমি তাকে অনেক উপেক্ষা করেছি, বুজিয়েছিও
কিন্তু সে মানতে চায় নি, তাই আমি নিজেকে.........
ইকবাল সাহেবঃ নিজেকে আর সুযোগ থেকে
হাতছাড়া করলেনা, তাইতো। তোমাদের মত ছেলেরা এভাবেই উপরে উঠার সিঁড়ি খুঁজতে থাক, কোন
ধনীর মেয়েকে পেয়ে ফুসলিয়ে প্রেমের নামে তোমরা তাদের অর্থ হাসিল করতে চাও।
আমার আর সহ্য হচ্ছিল না, তাই সোফা থেকে
উঠে দাড়ালাম, সর্যি স্যার আমার মনে হয় এখানে না থাকাটাই ভালো, আপনার মেয়ে আপনি যা
ইচ্ছা বলতে পারেন। কিন্তু তার এক বিন্দুও সত্য নয়। আমি এখন আসি, খোদাহাফেয, বলে
চলে আসলাম।
তানিয়া দের বাসাথেকে বের হয়ে হোটেলে চলে
আসলাম, রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে চলে আসলাম ডিউটিতে। কাজে মন নেই তবুও কাজের প্রতি মন
বসাতে চাইলাম। তৌফিক ভাই এর ডাক এল, ওনার রুমে গিয়ে দেখি তার মুখটা থমথমে, অজানা
আশংকায় কেমন জেন করতে লাগল, তোফিকা ভাই আমাকে দেখে বলল, আয় মিলন, বস এখানে। একটা
চেয়ার টেনে তার পাশে বসলাম। তৌফিক ভাই কি বলবেন, কোন সমস্যা নাকি।
তৌফিকঃ হুম, আমাদের হোটেলের মালিক কল
দিয়েছিল, এইমাত্র, বলল তোকে তোর পারিশ্রমিক বুজিয়ে দিয়ে জেন চাকুরী থেকে বরখাস্তের
চিটিটা তোর হাতে দেই।
খবরটা শুনে খারাপ লাগলেও, তৌফিক ভাইকে
বুজতে দিলাম না, টেবিলের উপরে খাম টা থেকে চিঠিটা বের করে একটা সাইন করে চলে আসলাম
রুমে, ব্যাগ গুছিয়ে বের হয়ে হোটেলের লবিতে এসে আমার রুমের চাবি, অফিসের মোবাইল যা
যা আমাকে দিয়েছিল তা, তৌফিক ভাইকে বুজিয়ে দিয়ে বের হয়ে আসলাম। পরীক্ষার ফলাফল দিতে আরও ১মাস বাকি, তাই এই
সময় পর্যন্তয় কি করব সেটাই ভাবছিলাম।
হঠাৎ গ্রামের কথা মনে পড়ল, গতবার যখন
গিয়েছিলাম স্যার বলেছিল ওনার স্কুলের জন্য একজন ভাল শিক্ষক দরকার, আমার শিক্ষাগত
যোগ্যতা কম বটে, কিন্তু প্রাইমারী বাচ্চা পড়াতে অসুবিধা হবেনা, তাই গ্রামের
বাড়িতেই চলে যাওয়ার মনস্থির করলাম। বাসে উঠে বসে তানিয়ার কথা ভাবছিলাম, এভাবে
পালিয়ে আসতে চাইনি আমি, কিন্তু গরীব বলে আমাকে তার বাবা যেভাবে অসম্মান করেছে, আর
আমার চাকুরী যাওয়ার পিছনে তার হাত আছে সেটা আমি বুজেছি, তাই নিজ থেকেই ওর জীবন
থেকে সরে গেলাম।
ভয় পাইনি আমি, শুধু মাত্র তানিয়ার জন্য,
তার সুখের জন্য আমার এ চোরের মত পলায়ন।
গ্রামে এসে স্যারের বাসায় উঠলাম, স্যারকে
সব খুলে বললাম, তানিয়ার কথা এগুলো বলিনি, শুধু বলেছি আমার চাকরিটা চলে গেছে, আর
আমি কিছুদিনের জন্য এখানে থাকতে চাই।
স্যার আমাকে বললেন, একজন টিচার নাকি
৬মাসের ছুটিতে আছেন, তার যায়গায় আমি ৬মাস শিক্ষাগতা করতে পারি, আমিও রাজি হয়ে
গেলাম, রেজাল্ট বের হওয়ার আগ মুহুরত্ব পর্যন্ত্য একটা কাজ পেলেই হল। পরের দিন
স্যার আমাকে নিয়ে স্কুলের কমিটির কাছে গেলেন, তাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। সবাই
কোন আপত্তি করলনা। আগামীকাল থেকেই আমি ক্লাস করাব, সবাই সম্মতি দিলেন। প্রতিদিন সকাল
৯টায় স্কুলে যাই আমি, আর বিকাল ৪.৩০মিনিটে বাসায় আসি। স্যারের বাসাতেই থাকি, খাওয়া
দাওয়া এখানেই, এর মাঝে দুবার আমার বাবা-মায়ের কবর জিয়ারত করে এসেছি, আমার বোন তার
নামে জমি লিখে দেয়ার পরেও সে আমার কাছে এসেছিল জমি ফিরিয়ে দিতে, আমি নিইনি, বলেছি
আমি জমি দিয়ে কি করব, আমার কেউ নেই একা মানুষ, ওটা তোমাদের কাজে লাগবে, শুধু আমার
মা-বাবার কবরের জমিটুকু আমার নামে আছে সেটাই থাক। দেখতে দেখতে ১মাস ১৫দিন হয়েগেল,
এর মাঝে কারও সাথে কোন যোগাযোগ করিনি আমি, শুধু আমার ক্লাসের বন্দু, রেহান ওর সাথে
কথা হত আমার, একটা মোবাইল আর সিম কিনেছিলাম। তানিয়াকে দেইনি নাম্বারটা। শুধু রেহান
আর কলেজ এর প্রিন্সিপ্যাল স্যার জানত। বাচ্চাদের ক্লাস নিচ্ছিলাম এমন সময় মোবাইলটা
বেজে উঠল, স্যারের নাম্বার থেকে কল আসল, রিসিভ করে হ্যালো বলতেই, ওপাশ থেকে স্যার
বলল, মিলন তোমার তো ঢাকা আসতে হবে আগামীকাল, রেজাল্ট প্রাকাশ করাহবে। স্যারকে
বললাম, আমি যেতে পারবনা, উনি যেন আমার রেজাল্ট যেনে আমাকে জানালেই হবে, আর
সার্টিফিকেট গুলো আমি একসময় সংগ্রহ করে নিব।
স্কুলের ক্লাস শেষে আমি গ্রামের ভিতর
দিয়ে হাটতে লাগলাম, আজ ভীষন আনমনা লাগছে, তানিয়ার কথা মনে পড়ছে খুব, না জানি সে
কেমন আছে, আর কিবা করছে, ভুলে গেছে আমাকে, নাকি মনে রেখেছে।
ভূলে যাওয়ারই কথা, কাপুরুষ কে কেইবা মনে রাখে।
কিছুদিন পরে ঢাকা প্রিন্সিপ্যাল স্যার এর
কল আসল, স্যার আমাকে একটা জব এর সন্ধান দিলেন,
এদিকে স্কুলের গেস্ট টিচার এর স্থানে হয়ে
গেল ৪মাস, তাই ভাবলাম জব এর সন্ধান যখন একটা পেয়েছি তাই সেটাই করি, গ্রামের হেড
মাস্টার কে বলে পরেরদিন চলে এলাম ঢাকা। সেই পুরনো বন্দুর মেসে উঠলাম। বিকেলে
প্রিন্সিপ্যাল স্যার কে কল দিয়ে, যেখানে আমার জবের কথা হয়েছে সেখানের ঠিকানা যেনে
নিলাম।
পরেরদিন সকালে নাস্তা করেই প্রিন্সিপ্যাল
স্যারের দেয়া সেই ঠিকানা অনুযায়ি অফিসে গেলাম।
রিসেপশন ডেস্কে বসা ভদ্রমহিলাকে বললাম
আমাকে আসতে বলা হয়েছিল আজ, চাকুরির ইন্টারভিউ এর জন্য।
উনি আমার নাম জিজ্ঞাসা করে, টেলিফোনে কার
সাথে যেন কথা বললেন আমাকে নিয়ে, একটু পরে উনি বললেন, মিঃ মিলন আপনি ৫মিনিট ওয়েটিং
রুমে বসুন প্লিজ, স্যার এখন ব্যস্ত আছেন।
আমি ওয়েটিং রুমে বসে ভাবছি কি না কি হয়,
সব সার্টিফিকেট সাথে করেই নিয়ে আসছি।
৫মিনিট পরে রিসেপশনের সেই মহিলা এসে
আমাকে বলল, আপনার সার্টিফিকেট গুলো আমার কাছে দিন, আর আপনি সোজা গিয়ে ডান দিকের ২য়
দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে যাবেন, স্যার আপনার জন্যই বসে আছেন।
তার কাছে সার্টিফিকেট গুলো দিয়ে রুমের
উদ্দেশ্য পা বাড়ালাম, রুমের দরজার হাতল এ হাত রেখে বুকে ফু দিয়ে সাহস অর্জন করতে
চাইলাম, দরজার হাতল ঠেলে ভিতরে পা রাখলাম, চেয়ারে বসা একজন মেয়ে লম্বা চুল দেখেই
বুজেছি, কিন্তু সে আমার দিকে উল্টো হয়ে বসে আছে, আমি সামনে যেতেই সালাম দিলাম, সে
হাত ইশারা করে আমাকে বসতে বলল। আমি বসে আছি মাথা নিচু করে, কারন এই প্রথম জবের
ইন্টার্ভিউ ছিল, এর আগে যেগুলো করেছি তা সব ইন্টার্ভিউ ছাড়া হয়েছে। আর পরিচিত ছিল
আমার।
হঠাৎ চেয়ার থেকে সেই মেডাম উঠে এলেন নিচে
তাকিয়ে আছি বিদায় তার চেহারা দেখতে পারছিলাম না, আবার উপরে মুখ তুলে তাকাব সেই
সাহস হচ্ছিলনা। তিনি এসে আমার পিছনে গেলেন, কি করতে চাইছেন ভেবে আতংক ঢুকে গেল
মনে, হঠাৎ আমাকে জড়িয়ে দরল, আমি ভয় পেয়ে চেয়ার থেকে উঠে সরে যেতে চাইলাম, চেয়ার
থেকে উঠতে পারলেও তার দুহাতের আলিঙ্গন থেকে মুক্ত হতে পারলাম না, সে কথা বলে উঠল,
আর কই পালাবা, আমাকে ছেড়ে, খুব তো বলতে আমাকে অনেক ভালবাসা, আর এখন আমাকে ফেলে
রেখে চোরের মত পালিয়ে গেলে, এখন পেয়েছি তোমাকে আর যেতে দিব না কোনদিন।
কন্ঠস্বর টা আমার কানে ধাক্কা দিল প্রবল
ভাবে, ঘুরে দেখি তানিয়া, অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি তার দিকে,
তানিয়া আমার গালে একটা থাপ্পড় দিল,
ব্যথাও পেয়েছি, হাত দিয়ে গাল মালিশ করতে চাইলে সে সেখানে চুমু দিল, বললাম এসবের
মানে কি ?
তানিয়া তখন বলল, তোমাকে বাবা যা বলেছে তা
আগে থেকেই আমি জানতাম, বাবা দেখতে চাইছিল তুমি কতটা সৎ, ও বিশ্বাসী। তুমি যখন চলে
এলে তোমার প্রতিটা মুভমেন্ট বাবার লোকেরা তোমাকে ফলো করত, তোমার হোটেল এর জবটাও
আব্বুর ইচ্ছায় সেখান থেকে তোমাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
মিলনঃ আমি বুজতে পেরেছিলাম, কিন্তু এগুলো
করার মানে কি ?
তানিয়ার বাবা ইকবাল সাহেব ঘরে ঢুকলেন,
তিনি বললেন, দরকার ছিল বাবা, আমার ছোট্ট পরির মত দেখতে মামনি কে তোমার হাতে
সারাজীবনের জন্য তুলে দিব তা তোমাকে একটু পরীক্ষা করার দরকারছিল তাই না, তাই এতসব।
তবে বাবা তুমি সত্যি অনেক ভাল, সৎ ছেলে,
তোমার সম্পর্কে তোমার গ্রামের স্কুলের স্যারের থেকে অনেক কিছুই জেনেছি আমি, আমার
মেয়ে তোমাকে পছন্দ করে একটুও ভূল করেনি।
তোমার যদি আপত্তি না থাকে তাহলে আমি
তোমার হাতে আমার মেয়েকে তুলে দিতে চাই তবে আগে তোমাদের পড়ালেখা শেষ হক, ততদিনে
তুমি আমাদের সাথেই থাকবে আমার ছেলে হয়ে, যদি আপত্তি না থাকে তোমার। তোমার স্কুলের
স্যারকে আমি খবর পাঠিয়ে দিয়েছি, উনি তো এখন তোমার অবিভাবক, উনি ঢাকা এলেই আমরা
বাকি কথা আলাপ করে ফেলব। এখন তাহলে আসি আমি বাবা।
তানিয়ার বাবা চলে যেতেই তানিয়া দরজা বন্দ
করে দিল, আমি বললাম দরজা বন্দ করলে যে,
তানিয়াঃ প্রতিদিন তুমি আমাকে কতবার জড়িয়ে
দরতে, কতগুলো চুমু দিতে তার হিসেব আছে আমার কাছে, এই ৫মাস আমাকে তার ডাবল দিতে
হবে।
মিলনঃ তাই বুজি, তা কতগুলো পাওনা হয়ে আছে
বলতো ?
তানিয়াঃ শুধু পাওনা হলে তো হবেনা, আসল এর
সাথে শুধ দিতে হবে, কড়ায়গন্ডায় বুজে নিব।
মিলনঃ আমিও কড়ায়গন্ডায় সব শোধ করব, বলে
তানিয়া কে আমার বুকের সাথে চেপে দরলাম,
তানিয়া আমাকে চেয়ারের উপরে ধাক্কা দিয়ে
বসিয়ে দিল, তারপর তাকে কাছে টেনে নিয়ে দুহাত দিয়ে জড়িয়ে দরে চুমু দিলাম তার কপালে।
দুমিনিট যেতে নাযেতেই দরজার অপাশে কেউ নক
করছিল দরজায়, আমি উঠে খুলে দিলাম, তৌফিক ভাই,
আমাকে দেখে হাসলেন তিনি , বললেন ছোট ভাই,
এই নাও টিস্যু, মুখটা মুছে আয় আগে। বলে চল গেলেন হাসতে হাসতে, রুমে এসে আয়নায়
তাকাতেই দেখি সেই লিপিস্টিক সারা মুখে লেপ্টে আছে, ঘুরে দেখি তানিয়া হাসছে, আবার
গিয়ে তাকে জড়িয়ে দরলাম, সত্যি এই মাসে তাকে অনেক মিস করেছি আমি।
ওকে কতটা ভালবাসি তা এই ৫মাসেই আমি
বুযেগেছি, সত্যি প্রিয়জনের নিকট থেকে দূরে চলে গেলেই বোযা যায় তার মূল্য কতটা
আমাদের এই জীবনে।
গাড়ির হেড লাইটের আলোয় আমার ধ্যান ভাঙল,
দেখি ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে এদিকেই আসছে, বেঞ্চে থেকে উঠে রাস্তার পাশে এসে দাড়ালাম,
ড্রাইভার আমার সামনে গাড়ি দার করিয়ে নেমে
দরজা খুলে দিল,
আমি পিছনে উঠে বসতেই সেও উঠে বসে আমার
কাছে ক্ষমা চেয়ে নিল,
ড্রাইভারঃ স্যার আমার ভূল হয়েগেছে,
গাড়িতে তেল ছিলনা এটা আগে থেকেই খেয়াল রাখা উচিৎ ছিল আমার, আমাকে ক্ষমা করে দিন
স্যার।
মিলনঃ আরে ঠিক আছে আকবর, তোমার গাড়িতে
তেল না থাকায় আমি এখানে এই পার্কে বসে আমার জীবনের পিছনে ফেলে আসা সেই ১৫ বছর আগের
স্মৃতি কে নতুন করে ভাবলাম, ভূলেই গিয়েছিলা সেই দিন গুলো, আজ মনে পড়ল রে আকবর। চল
বাসায় চল, তোর মেডাম আবার না খেয়ে বসে আছে।
বাসায় গাড়ি পার্কিং করেই আমি আকবর কে
বললাম, নে এই ২হাজার টাকা তোর বাচ্চার জন্য কিছু কিনে নিয়ে যাস,
আকবরের চোখের কোনায় পানি দেখলাম, কিরে
কাধছিস কেন বোকা, নে দর, আর তাড়তাড়ি বাসায় চলে যা।
আকবর এর হাতে টাকা গুজে দিয়ে সতেজ মনে
কলিং বেল টিপলাম একবার, কিচ্ছুক্ষন পরে দরজা খুলে দিল বুয়া, ডাইনিং রুমে যেতেই
আমার ছোট্ট পরি আমার কোলে দৌড়ে এল ড্যাডি ড্যাডি বলে, আমার একমাত্র মেয়ে তান্নি।
মেয়েকে আদর করে দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম
আম্মু, তোমার আম্মু কোথায়, মেয়ে বলঃ ড্যাডি আম্মু রাগ করেছে, আজকে তোমাদের কি
অনুষ্ঠান ছিল, কিন্তু তুমি দেরি করে এসেছ, আর খালি হাতে কেন, আম্মু আজ কে তোমাকে
বকবে।
এইছোট্ট মেয়েটি একদম মায়ের মতই হয়েছে, ৪
বছরহল আমার মেয়ের।
চুপি চুপি আমি আমার রুমে গেলাম , দেখি
তানিয়া দাড়িয়ে দেয়ালে লাগানো আমাদের বিয়ের ছবি দেখছে।
আজ আমাদের বিয়ের ৬বছর হল। কোটের পকেট
থেকে ৬টি লাল গোলাপের কলি বের করে নিয়ে তানিয়াকে পিছন থেকে জড়িয়ে দরলাম, ফুলের
কলিগুলো তার হাতে দরিয়ে দিলাম, তার রাগ সব পানি হয়ে গেল, আমাকেও জড়িয়ে দরল, আমি
তার ঠোটে আলতো করে কামড় দিলাম, আমার মেয়েটি কখন এ ঘরে এসেছে খেয়াল করিনি, সে
হাত্তালি দিয়ে বলে উঠল, আমি দেখেছি ড্যাড আম্মুকে পাপ্পি দিয়েছে, ড্যাড আম্মুকে
পাপ্পি দিয়ছে। দুজনে হেসে উঠলাম মেয়েকে কোলে তুলে নিলাম আমি, তানিয়াকে জড়িয়ে দরলাম
মেয়েকে কোলে নিয়েই, আর আমার মিষ্টি মেয়েটা আমাদের কে জড়িয়ে দরল।
সমাপ্ত।
Comments